২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০’, ২০২২-এ ২৭ দফা এবং পরের বছর ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা দেয় বিএনপি ও তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো।
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আবারও গুরুত্ব পায় রাষ্ট্রের সংস্কার। যে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে সংস্কার কমিশন। গেলো সপ্তাহে সংবিধান, নির্বাচন, দুর্নীতি ও পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর। এখনও চূড়ান্ত প্রতিবেদন না মেলায় দলীয় সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি বিএনপি।
দলটির নেতারা অবশ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, বেশিরভাগ প্রস্তাবনাই রয়েছে তাদের রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখায়। ব্যক্তিগতভাবে কিছু প্রস্তাব নিয়ে তাদের রয়েছে সংশয়-সন্দেহ।
অন্যান্য দলগুলো বলছে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত হবে সংস্কার প্রস্তাবনা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বললেন, আমরা অপেক্ষা করে আছি, তাদের অন্যান্য সংস্কার প্রস্তাবে কী আসে। পুলিশ নিয়ে যে সংস্কার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে, এটি গ্রহণযোগ্য। নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু কিছু জিনিস নিয়ে এখন পর্যন্ত আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছি।
বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অনেকগুলো বিষয়ে আমাদের অঙ্গীকার রয়েছে। আমাদের ৩১ দফাতে সুনির্দিষ্ট করে আমরাই অঙ্গীকার করেছি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বিভিন্ন দল কোনো না কোনো প্রস্তাব দিয়েছে, আমরাও অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছি। এখন এই প্রস্তাবগুলোর মধ্য থেকে কমিশন যেগুলো গ্রহণযোগ্য মনে করেছে, সেগুলো তারা প্রস্তাব করেছেন।
অধিকাংশ প্রস্তাবনা-ই রাজনৈতিক দলগুলোর সুপারিশের প্রতিফলন বলে মনে করেন নেতারা। তবে ব্যক্তিগতভাবে বিএনপির নীতিনির্ধারক হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। তিনি কিছু প্রস্তাব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
তার মতে, ২১ বছরের একজন তরুণ বা যুবতে এত ম্যাচিউরিটি হয় না যে সে রাষ্ট্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারবে। যারা এসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন, তাদের হয়তো কোনো একটা দলকে সুবিধা দেয়ার জন্য চিন্তাভাবনা কাজ করে থাকতে পারে। গণতন্ত্র অনেক রোগেরই মহাওষুধের কাজ করবে। সুতরায় বহুত্ববাদের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে, যে প্রস্তাবই আসুক না কেনো, কমিশনগুলোর পক্ষ থেকে তা চূড়ান্ত হবে ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতে।
জোনায়েদ সাকি বলেছেন, যে বিষয়গু নিয়ে একমত হওয়া যাবে সেগুলো আমাদের ন্যূনতম জাতীয় ঐক্যমত্ব। যেগুলোতে একমত হওয়া যাচ্ছে না, সেগুলো নিয়ে আরও অধিকতর আলোচনা এবং জনমত ইত্যাদি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সেটা যাবে।
সাইফুল হক বললেন, ফেব্রুয়ারি থেকে যদি জাতীয় ঐক্যমত কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করে, তখন বুঝা যাবে কোন কোন বিষয়ে আমরা আরও একমত হতে পারছি। আর এ প্রস্তাবগুলো এবারই কার্যকরী করা যাবে, আগামী সংসদে সবগুলো আইনে প্রণীত হবে এ রকম চিন্তা না করাই ভালো।
হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেছেন, তারা ছাত্রদের ওপর কতটা নির্ভরশীল, ছাত্রদেরকে খুশি করার প্রবণতা তাদের মধ্যে আছে কি না সেটি আলাপ-আলোচনার পরই বোঝা যাবে। আমরা অপেক্ষা করে আছি, তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকের পর কী সিদ্ধান্ত নেন।
নেতারা জানেন ও মানেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে তাতে সংস্কার অনিবার্য। কিন্তু তা চলমান প্রক্রিয়াও। সেইসঙ্গে এই সংস্কার বাস্তবায়নে নির্বাচন ও নির্বাচিত সংসদের বিকল্প নেই বলেও মত তাদের।