Image description

শাপলা প্রতীক চেয়ে আবেদনের চার মাসেও নির্বাচন কমিশনের মন গলাতে পারেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ইসির ব্যাখ্যা ছিল ‘শাপলা’ প্রতীক আগে থেকেই তাদের তালিকায় নেই। তাছাড়াও জাতীয় অনেক প্রতীকের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। তাই দেওয়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় ইসির প্রতি তির্যক মন্তব্য ছুড়ে দেন দলটির নেতারা।

অবশেষে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) নতুন আরও কয়েকটি প্রতীকের সঙ্গে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

তবে এনসিপির নেতারা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন এতে বড় দু’একটি রাজনৈতিক দলের যোগসাজশে ষড়যন্ত্র করেছে নির্বাচন কমিশন। বিকালে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্যে দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন পূর্ণাঙ্গ ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়েই তারা ভোটে যাবেন।

এনসিপি শিবিরে অসন্তোষ

বিকালে নির্বাচন কমিশনের গেজেটে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক দেখার পরই মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এনসিপির নেতারা। অনেকে এ নিয়ে ফেসবুকে ইসির সমালোচনা করেন। আবার অনেকে এটিকে প্রাথমিক বিজয় হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাদের মতে ‘কলি’ যেহেতু দিয়েছে ফুলও আদায় করা যাবে। এছাড়াও বিকালে এক অনুষ্ঠানে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন কয়েকজন শীর্ষ নেতা।

ফেসবুকে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. খালেদ সাইফুল্লাহ লেখেন, ‘তারা (নির্বাচন কমিশন) যদি জাতীয় প্রতীক সংরক্ষণের যুক্তিতে “শাপলা” প্রতীককে তালিকাভুক্ত না করেন, তবে একই যুক্তি ‘ধানের শীষ’, ‘তারকা’ বা ‘পাটপাতা’ সব প্রতীকের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। আর যদি তারা জাতীয় প্রতীক সংরক্ষণকে নিজেদের দায়িত্ব না মনে করেন, তাহলে “শাপলা” প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করতে বাধা কোথায়?’

তার এই পোস্ট নিজেদের আইডি থেকে শেয়ার দিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

একই দিন বিকালে জাতীয় যুবশক্তির সেমিনারে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন নতুন গেজেটে আমাদের “শাপলা কলি” প্রতীক দিয়েছে। কমিশন এটি কীসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করেছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে শাপলা প্রশ্নে আমরা আপসহীন। কমিশনকে শাপলা সম্পৃক্ত করে নতুন গেজেট দিতে হবে। অন্যতায় কমিশন কার্যালয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে, তা আদায় করে নিবো।’

একই অনুষ্ঠানে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমাদের দলকে বাচ্চাদের দল হিসেবে ইঙ্গিত করেই গেজেটে “শাপলা কলি” প্রতীক দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যেমনটি বড় দলগুলো আমাদের মূল্যায়ন করে থাকে। এটি এক ধরনের প্রতারণা। যেখানে কোনও ধরনের আইনি কারণ নেই। তবে কলি যখন পেয়েছি, পূর্ণাঙ্গ শাপলা আদায় করবো।’

নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা

গেজেট প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘কারও দাবিতে নয়, ইসি মনে করেছে, তাই শাপলা কলি প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তফসিলটা সংশোধন করেছি। কিছু কিছু প্রতীক নিয়ে কিছু মন্তব্য আমরা শুনেছি—যেমন কেউ বলেছেন এটা রাখলেন কেন, না রাখলে ভালো হতো, রাখা কি যৌক্তিক হয়েছে কি-না ইত্যাদি। এই বিবেচনায়, আগে যে ১১৫টা প্রতীক ছিল, তার থেকে আমরা ১৬টা প্রতীক বাদ দিয়ে নতুন করে প্রতীক নিয়ে ১১৯টা প্রতীক এবার শিডিউল করেছি।’

শাপলা নিয়ে কী ধরনের বক্তব্য ছিল

এনসিপির পক্ষ থেকে শাপলা প্রতীকের আবেদনের আগে নির্বাচন কমিশনে শাপলা প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তখন কেটলি প্রতীক দিয়ে তার দলের নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শাপলা প্রতীক চেয়ে আবেদন করে এনসিপি। এরই মধ্যে এনসিপি নেতারা মান্নার সঙ্গে দেখা করে শাপলার বিষয়ে নিজেদের প্রত্যাশার কথা তাকে জানান।

এ নিয়ে গত ২ অক্টোবর নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে তিনি লেখেন, ‘এনসিপিকে শাপলা বরাদ্দ দিলে মামলা করবেন না।’ তবে একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় প্রতীকের কারণে তার দলকে শাপলা না দেওয়া হলে, নির্বাচন কমিশন অন্য কাউকেও দিতে পারে না।’ তখন মান্নার সেই পোস্ট নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে শেয়ার করে স্বাগত জানান এনসিপির নেতারা। এতে দলটির নেতারা মান্নাকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন বারবার আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেও শাপলা প্রতীক পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা। তাই হাল ছাড়তে চাননি। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনের প্রতি নানা মন্তব্য করেন। সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর রাজশাহীতে এক সভায় দলের আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এনসিপিকে শাপলা না দিয়ে নির্বাচন কমিশন স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে। তারা যদি কোনও ধরনের ব্যাখ্যা ছাড়া একটা বিষয় চাপিয়ে দিতে চায়, আমরা ধরে নেবো এ কমিশন অন্য কোনও শক্তির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তারা স্বাধীন নয়, ন্যায়বিচার করতে সক্ষম নয়, নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী নয়, গায়ের জোরে পরিচালিত হচ্ছে। তখন জনগণের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হবে। যদি আমাদের সাংবিধানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, আমরা অন্য যেকোনো প্রতীক নিতে প্রস্তুত।’

১৯ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘প্রতীক হিসেবে শাপলার বিকল্প কোনও কিছু ভাবছি না।’ তিনি জানান, শাপলার জন্য তারা নিজেদের জায়গায় দৃঢ় রয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শাপলাকে অবশ্যই তারা অর্জন করবেন।

একই দিন সিলেটে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবিধানিক আইন ও বিধি অনুযায়ী প্রতীকের তালিকায় শাপলা না থাকায় তা বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। প্রতীক নির্ধারণ সংবিধান ও নির্বাচনী বিধিমালার আওতায় করা হয়। শাপলা প্রতীক সেই তালিকায় নেই, তাই তা বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগও নেই।’

কীভাবে সমাধান চায় এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনও আশাবাদী তারা শাপলা প্রতীক বরাদ্দ পাবে। এটি নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছার ব্যাপার। এ বিষয়ে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এতো দিন কমিশন বলে আসছে গেজেটে নাম নেই, তাই শাপলা বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। এখন শাপলা কলিও তো গেজেটে ছিল না। তাই এটি যেহেতু দিতে পেরেছে, আশা করি পূর্ণাঙ্গ শাপলাই দিতে পারবে।’