 
              ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের সভাপতি হিসেবে প্রথমবারের মতো ভাষণ দিলেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খোন্দকার মোহাম্মদ তালহা।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) উজবেকিস্তানের সামারকানদে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ৪৩তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি নতুন সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
রাষ্ট্রদূত তালহাকে অক্টোবরের শুরুতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জাপানের বিরুদ্ধে বিজয়ের পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানের পক্ষে কাজ করা বহুপাক্ষিক সংস্থায় বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ইতিহাসে তিনিই প্রথম বাংলাদেশি প্রেসিডেন্ট।
তার প্রথম ভাষণে বলেছেন, ‘আমরা মানুষের দুর্ভোগ যেমন—সংঘাত, অনাহার, যুদ্ধ, গণহত্যার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছি।’
বর্তমান অশান্ত ভূ-রাজনৈতিক আলোচনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সমাজকে আরও বিভক্ত করতে ব্যবহৃত হয় এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সমগ্র মানবজাতিকে ধ্বংস করার ঝুঁকি তৈরি করছে। এই পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং মানবিক মর্যাদা ও নৈতিকতার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে তিনি।
রাষ্ট্রদূত তালহা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানোটেকনোলজি এবং নিউরোসায়েন্সের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের বিষয়ে বিশ্বসম্প্রদায়কে সতর্ক করেন। উল্লেখ করেন, ৮০ বছর পরেও ইউনেস্কোর মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছে। তবে ২০২৫-এর বিশ্ব নতুন এবং জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি শান্তির সংস্কৃতি প্রচারের মাধ্যমে ইউনেস্কোকে একটি পরিবর্তনকারী হিসাবে খুঁজে পান।
ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে সভাপতি পদে জয়ের জন্য তাকে অভিনন্দন জানান এবং এই মুহূর্তটি বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলেও উল্লেখ করেন। মহাপরিচালক মাতৃভাষার প্রচার ও সংরক্ষণে বাংলাদেশের নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন।
জেনারেল কনফারেন্সের সাবেক সভাপতি রাষ্ট্রদূত সিমোনাও তার বক্তব্যে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। তিনি রাষ্ট্রদূত তালহার বিশাল পেশাগত অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য ইউনেস্কো এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি নতুন সুযোগ হিসাবে চিহ্নিত করেন।
পরে সন্ধ্যায়, তিনি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন যেখানে উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতি শাভকাত মিরজিয়োয়েভ; সার্বিয়ার রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভুচিচ এবং স্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রপতি পিটার পেলেগ্রিনি উপস্থিত ছিলেন।
এই সাধারণ সম্মেলনের ভূ-রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক তাৎপর্য ছাড়াও সম্মেলনটি ৪০ বছর পরে ইউনেস্কো সচিবালয়ের বাইরে আয়োজিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ইউনেস্কোর ৪৩তম সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত তালহা এই দায়িত্ব পালন করবেন। ৩ ভোটে জাপানের প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত টেকহিরো কানোকে হারিয়ে ইউনেস্কোর সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ইউনেস্কোর ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনের সভাপতির পদে ভোটে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপান, ভারত ও উত্তর কোরিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। তবে গত সেপ্টেম্বর ভারত ও উত্তর কোরিয়া তাদের প্রার্থীতা তুলে নেয়। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা পেয়েছেন ৩০ ভোট। অন্যদিকে, জাপানের প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত টেকহিরো কানোকে পেয়েছেন ২৭ ভোট। ইউনেস্কোর সদস্য হওয়ার পর এই প্রথম মর্যাদাপূর্ণ ইউনেস্কোর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ।
ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনের ৪৩তম অধিবেশনটি শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার উজবেকিস্তানের সামারকান্দ শহরের সিল্ক রোড কনফারেন্স সেন্টারে। সম্মেলনের কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ১৩ নভেম্বর।
 
       
                 
                
 
                                                  
                                                  
                                                  
                                                  
                                                 