এক বৈঠকেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। বৈঠকে যেন হাতে হাতে দেয়া হলো ‘জাদুর কাঠি’। কেউ কারও দিকে তাকাচ্ছেন না। তাকানোর সময়ও নেই। নিজের জন্য নয়। হাতে হাতে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ। ক’দিন আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল না। মাঠে থাকা প্রার্থীরা সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু বৈঠকের পর কেউ কারও জন্য নয়। সবাই ধানের শীষের পক্ষে মাঠে একাট্টা। সিলেট বিভাগের বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোভাবেও ব্যাপক পরিবর্তন। কাদা ছুড়াছুড়িও বন্ধ। বিরোধও কমছে। তিনদিন আগে বৈঠকটি হয়েছিল ঢাকায়। বৈঠকের মধ্যমণি ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আবেগঘন একটি বক্তব্য। যেন হ্যামেলিয়নের বাঁশিওয়ালা। বৈঠকে থাকা সবাই আবেগ আপ্লুত। কারও কারও চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরেছে। আর ঝরবেই না কেন? ১৭ বছরের দুঃসহ স্মৃতি সবাইকে তাড়া করে ফিরছে। জীবন বিপন্ন। পরিবার বিপর্যস্ত। মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা। দলীয় নেত্রী অসুস্থ, কারান্তরীণ। সামনে ঘোর অন্ধকার। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা নেতাকর্মীরা দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ভোটের মাঠে মুখোমুখি।
২৭শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার গুলশান কার্যালয়ের ওই বৈঠককে ঘিরে ছিল নানা জল্পনা। সিগন্যাল আসতে পারে। কিন্তু বৈঠকের কোনো সিগন্যাল আসেনি। তবে যেটি এসেছে সেই অক্সিজেন অতীতে বিএনপি’র নেতারা পাননি- এমনটি জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা জানান- বৈঠকের রেজাল্ট এখন মিলছে ভোটের মাঠে। কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়। সবাই ধানের শীষের পক্ষে। লড়ছেন, সমানে ঐক্যবদ্ধভাবেই লড়বেন। বৈঠকের প্রাপ্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গৌছ আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। বলেন- ৪০ বছরের রাজনীতিক জীবনে এমন মর্মস্পর্শী বক্তব্য শুনেনি। এবার কী শুনলাম। শুধু ভাবছি আর ভাবছি। এমনটি তো আমরা চিন্তা করতে পারিনি। যেটি কেবল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই করতে পারেন। তিনি হ্যামেলিয়নের বাঁশিওয়ালা। আমাদের অক্সিজেন। তিনি বলেন- বৈঠকের পর এখন আমার মনে হচ্ছে যদি বিএনপি আমার কাছ থেকে দলের সব দায়িত্ব নিয়ে নেয় এরপরও ধানের শীষের পক্ষে জীবন দিতে আমি প্রস্তুত। আমি কিছুই চাই না। আমরা যেন মনপ্রাণ দিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারি। এদিকে- বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন সিলেটের ১৯ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বৈঠকের পর তারাও যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। সিলেট ফিরেই ভোটের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সবাই। সবার হাতে হাতে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ। বলছেন- যাকেই দল প্রার্থী দেবে তার পক্ষে সবাই মাঠে এক হয়ে থাকবেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন ধানের শীষের পক্ষেই শোডাউন ও গণমিছিল করছেন।
সিলেট-১ আসনে অনেক আগেই ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছিলেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। কয়েকদিন আগে এমনভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট-২ আসনে ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনার পক্ষে প্রতিদিনই বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরে শোডাউন করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সিলেট-৩ আসনে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী বড় দু’টি শোডাউন করেছেন। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালিক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল প্রতিদিনই এলাকায় ছুটছেন। ভোটারের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন ধানের শীষের দাওয়াত। সিলেট-৪ আসনে গোয়াইনঘাটে বড় শোডাউন দিয়েছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। আজ তিনি জাফলং শোডাউন দেবেন। এ আসনে আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী আব্দুল হেকিম চৌধুরীর শোডাউনও ভোটারের নজর কাড়ছে। নতুন করে শোডাউনে মাঠ কাঁপাচ্ছেন বিএনপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান। সিলেট-৫ আসনেও চলছে শোডাউনের পর শোডাউন। এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ চাকসু মামুন, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপি’র সভাপতি জাকির হোসাইন ছুটে চলেছেন ভোটারের কাছাকাছি। সিলেট-৬ আসনে এরই মধ্যে শোডাউন দিয়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি আবুল কাহের শামীম, জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপি নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী।
সাবেক এমপি ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়ার মেয়ে সৈয়দা আবিদা হোসেন শোডাউনের মাধ্যমে ভোটের মাঠে ব্যাপক সাড়া ফেলছেন। ড. এনামুল হক চৌধুরী ছুটে যাচ্ছেন ভোটারের কাছাকাছি। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন- দলের প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর ভোটে মাঠে থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আরও বেশি আন্ডারস্ট্যান্ডিং বেড়েছে। কেউ কারও বিপক্ষে নয়, সবাই ধানের শীষের পক্ষে ভোটের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন-বৈঠকে মধ্যমণি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তার বক্তব্যের প্রতিফলন ভোটের মাঠে স্পষ্ট হচ্ছে। সবাই ধানের শীষের পক্ষে মাঠে একাট্টা হয়েছেন। আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে- আগামী নির্বাচনে আমরা সিলেটের ৬টি আসন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উপহার দেয়া।