Image description
 

রাতের ভোট নামে পরিচিতি পাওয়া ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন সচিব ছিলেন হেলালুদ্দীন আহমদ। আওয়ামী লীগ সরকারের ‘অনুগত’ এই আমলাকে ভোটের পাঁচ মাস আগে পূর্বাচলে রাজউকের সাড়ে সাত কাঠার একটি প্লট দেওয়া হয়। তিনি প্লটটি পান সরকারি চাকরিতে ‘অসামান্য অবদানের’ জন্য।

‘রাতের ভোটে’ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হেলালুদ্দীনকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব করা হয়। ২০২২ সালে সেখান থেকে অবসরে যাওয়ার পর তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয় সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য পদে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হেলালুদ্দীন আত্মগোপনে চলে যান। পরে ২৩ অক্টোবর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে।

এখন এসব প্লটের কাঠাপ্রতি বাজারমূল্য কোটি টাকার বেশি। রাজউকের প্লটের আয়তন ৩, ৫, ৭, সাড়ে ৭ ও ১০ কাঠা। সংরক্ষিত কোটায় প্লট পাওয়া কেউ কেউ তা বিক্রিও করে দিয়েছেন।

২০১৪ সালে নবম জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচনের পর সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন পিনু খান। তাঁর ছেলে বখতিয়ার আলম ওরফে রনিকে ২০১৩ সালে জাতীয়ভাবে ‘অসামান্য অবদানের’ জন্য রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে একটি প্লট দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে বখতিয়ার আলম রাজধানীর ইস্কাটনে যানজটে আটকা পড়ায় এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে দুই রিকশাচালককে হত্যা করেন। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় ২০১৯ সালে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তিনি এখন কারাগারে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে এভাবে সরকারি চাকরি, জনসেবা ও সমজাতীয় খাতে জাতীয়ভাবে ‘অসামান্য অবদানের’ নামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অথবা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠদের দেওয়া হয় রাজউকের প্লট। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প ও ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের প্লটগুলো তাঁরা পেয়েছেন কাঠাপ্রতি মাত্র ২ থেকে ৩ লাখ টাকায়। যদিও এসব প্লটের বাজারমূল্য তখনো বহুগুণ বেশি ছিল। এখন এসব প্লটের কাঠাপ্রতি বাজারমূল্য কোটি টাকার বেশি। রাজউকের প্লটের আয়তন ৩, ৫, ৭, সাড়ে ৭ ও ১০ কাঠা। সংরক্ষিত কোটায় প্লট পাওয়া কেউ কেউ তা বিক্রিও করে দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের আমলে রাজউকের অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস রুলসের ১৩/এ উপবিধির (অসামান্য অবদান) অধীনে কত প্লট বিতরণ করা হয়েছে, তা জানতে প্রথম আলো আড়াই মাস অনুসন্ধান চালায়। অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত ৮৩০টি প্লট কার কার নামে বরাদ্দ করা হয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়েছে। রাজউকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর বাইরে আরও প্লট রয়েছে, যেগুলো ‘অসামান্য অবদানের’ নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে পাওয়া নাম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন বিগত তিন সংসদের (নবম, দশম ও একাদশ) সাবেক সংসদ সদস্যরা। তাঁদের সংখ্যা অন্তত ২৫৬। এ ছাড়া সাবেক অন্তত ২২ মন্ত্রী, ১২ প্রতিমন্ত্রী ও ৩৯ জন সচিব ‘অসামান্য অবদানের’ নামে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন। রাজনীতিবিদ ও আমলাদের বাইরে অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক, ৩০ জন শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী পেয়েছেন প্লট। তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, বিচারপতি, প্রবাসী, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অনেকে। তাঁদের পরিচয় মূলত তাঁরা প্রভাবশালী ও আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত অথবা তোষামোদকারী। কেউ কেউ তদবির করেও প্লট নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের আমলে রাজউকের অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস রুলসের ১৩/এ উপবিধির (অসামান্য অবদান) অধীনে কত প্লট বিতরণ করা হয়েছে, তা জানতে প্রথম আলো আড়াই মাস অনুসন্ধান চালায়। অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত ৮৩০টি প্লট কার কার নামে বরাদ্দ করা হয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়েছে।

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত সহকারী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অন্তত ১৫ জন গাড়িচালকও পেয়েছেন প্লট।

শেখ হাসিনার নিজের নামে, পরিবারের সদস্যদের নামেও প্লট বরাদ্দ হয়েছে। হাসিনার নামে বরাদ্দ হয়েছে পূর্বাচলে ১০ কাঠার একটি প্লট। তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ এবং ছোট বোন শেখ রেহানা (রেহানা সিদ্দিক), রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক (রূপন্তী) ১০ কাঠা করে প্লট পেয়েছেন পূর্বাচলে। সব মিলিয়ে এই পরিবারের ছয়জন মোট ৬০ কাঠা জমি পেয়েছেন। প্রতি ১০ কাঠার নির্ধারিত মূল্য ধরা হয় ৩০ লাখ টাকা এবং সব অর্থ ২০২২ সালে পরিশোধ করা হয়।

তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ায় হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ছয়জনের নামে সম্প্রতি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদিকে শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে ও যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশও পূর্বাচলে প্লট পেয়েছেন।

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত সহকারী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অন্তত ১৫ জন গাড়িচালকও পেয়েছেন প্লট।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ‘গডফাদার’, অর্থ আত্মসাৎকারী, ঋণখেলাপি, বিতর্কিত ব্যক্তি এবং সাবেক মন্ত্রী ও সচিবের মেয়ে। রাজউক সূত্র জানিয়েছে, প্লটের জন্য আবেদন করা হতো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। তখন শেখ হাসিনার সম্মতিতেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত হতো কারা কারা প্লট পাবেন। পরে সেই তালিকা পাঠানো হতো মন্ত্রণালয় হয়ে রাজউকে। সংস্থাটির বোর্ড সভায় শুধু কাগুজে অনুমোদন হতো।

গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব হামিদুর রহমান খান ১৫ জানুয়ারি তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, সংরক্ষিত কোটা ও অসামান্য অবদান কোটায় রাজউকের বরাদ্দ করা প্লটগুলো পর্যালোচনার জন্য আদালত থেকে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটির সুপারিশে যা থাকবে, মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, রাজউকের প্লট বরাদ্দের বিধিমালার অসামান্য অবদান–সংক্রান্ত ১৩/এ উপবিধি ও সংরক্ষিত কোটা সংরক্ষণ-সংক্রান্ত ৭ নম্বর ধারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করেছে।

আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে প্লটগুলো নিয়মের মধ্যে দেওয়া হয়েছে কি না, তা দেখা। সে অনুযায়ী আমরা প্রতিবেদন জমা দেব। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত।
বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী

২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রাজউকের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে গত ২৪ অক্টোবর তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, আইনজীবী জসীম উদ্দীন সরকার ও প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন এই কমিটির সদস্য। তাঁদের ১২০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ১৮ জানুয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের কাছে কমিটির সদস্যদের বসার ব্যবস্থা করা ও জনবল চাওয়া হয়েছে। এখনো পাওয়া যায়নি। সরকার যত তাড়াতাড়ি এসব ব্যবস্থা করবে, তত তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে প্লটগুলো নিয়মের মধ্যে দেওয়া হয়েছে কি না, তা দেখা। সে অনুযায়ী আমরা প্রতিবেদন জমা দেব। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত।’

আ. লীগের সাবেক মন্ত্রী

ঢাকায় রাজউকের তিনটি আবাসন প্রকল্প চলছে। এর মধ্যে পূর্বাচলে মোট প্লট ২৬ হাজার ২১৩টি। ঝিলমিলে ১ হাজার ৭৭৪টি। উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পে প্লটসংখ্যা ৮ হাজার ৪১৪। রাজউকের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, খুব কম দামে (কাঠাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা) সাধারণ মানুষের জমি অধিগ্রহণ করে সংস্থাটি আবাসন প্রকল্প করেছে। সেসব প্রকল্পে সংরক্ষিত কোটায় জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালীদের। রাজউকের কর্মকর্তারাও প্লট নিয়েছেন। কিন্তু ঢাকাকে বাসযোগ্য করার বিষয়ে তাদের নজর কম।

রাজউকের প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অসামান্য অবদানের নামে প্লট পাওয়া ২২ জন সাবেক মন্ত্রীর মধ্যে রয়েছেন শাজাহান খান, ফারুক খান, আনিসুল হক, রাজিউদ্দিন আহমেদ (রাজু), মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া), আসাদুজ্জামান খান, আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাহিদ মালেক, দীপু মনি, তাজুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, নুরুজ্জামান আহমেদ, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, নুরুল ইসলাম বিএসসি, মজিবুল হক, আফসারুল আমিন (প্রয়াত), আবদুল মতিন খসরু (প্রয়াত), সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত (প্রয়াত), মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ।

প্লট পেয়েছেন সাবেক ১২ জন প্রতিমন্ত্রীও। তাঁরা হলেন নাজমুল হাসান ওরফে পাপন, কামাল আহমেদ মজুমদার, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, মজিবুর রহমান ফকির, দীপঙ্কর তালুকদার, প্রমোদ মানকিন, স্বপন ভট্টাচার্য, আবদুল হাই, এনামুর রহমান, মেহের আফরোজ চুমকি, শামসুল আলম ও ওয়াসিকা আয়েশা খান।

ঢাকায় বাড়ি অথবা ফ্ল্যাট থাকলেও অনেকে রাজউকের প্লট নিয়েছেন। যেমন কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি ২০২১ সালে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ঢাকা শহরে তাঁর পৈতৃক বাড়ি আছে। উল্লেখ্য, কামাল আহমেদ মজুমদার এখন কারাগারে।

সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও রাজউকের ১০ কাঠার একটি প্লট পেয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা মসিউর রহমান পূর্বাচলে ১০ কাঠার দুটি প্লট পান।

আ. লীগের সাবেক সংসদ সদস্য

২০১৮ সালে ‘রাতের ভোটে’ বাগেরহাট-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য হন শেখ সারহান নাসের ওরফে তন্ময়। তন্ময় শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালের ছেলে। সংসদ সদস্য হয়েই এই তরুণ পেয়ে যান ১০ কাঠার একটি প্লট। তাঁর মতো অসামান্য অবদানের জন্য প্লট পেয়েছেন ২৫৬ জন সাবেক সংসদ সদস্য। তাঁরা বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের।

সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে প্লট পাওয়াদের তালিকায় রয়েছেন শামীম ওসমান, নিজাম উদ্দিন হাজারী, হাজী মো. সেলিম, শাহীন চাকলাদার, সাইফুজ্জামান শিখর, নুরুন্নবী চৌধুরী ওরফে শাওন, ফাহিম গোলন্দাজ, তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির, তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদ, মৃণাল কান্তি দাস, সেলিম আলতাফ জর্জ, শেখ আফিল উদ্দিন, পঙ্কজ দেবনাথ, মাহবুব উল আলম হানিফ, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, নাইমুর রহমান দুর্জয়, ওমর ফারুক চৌধুরী, শাহদাব আকবর চৌধুরী, সাইমুম সরওয়ার কমল, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী, অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ (প্রয়াত), বদিউজ্জামান সোহাগ, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী (প্রয়াত), বজলুল হক হারুন (বি এইচ হারুন), জাফর আলম, আনোয়ারুল আজীম আনার (ভারতে খুন হন), আশেক উল্লাহ রফিক, নাজমা আক্তার, সামিল উদ্দিন আহমেদ (শিমুল) প্রমুখ। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ কারাগারে, বেশির ভাগই আত্মগোপনে রয়েছেন।

 চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতে চলে যান। তিনি ১৫ জানুয়ারি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি রাজউক থেকে একটি প্লট পেয়েছেন। আরও অনেকেই প্লট পেয়েছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে ১৩/এ উপবিধির অধীনে আবেদন করে প্লট পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১৩/এ উপবিধিতে অসামান্য অবদানের কথাই বলা হয়েছে।

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী ওরফে পাপিয়াও রাজউকের প্লট নিয়েছেন। প্লট পেয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াও, যিনি ২০২৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে অংশ নিয়ে দলছুট হন। বিকল্পধারা বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, জাসদের রেজাউল করিম (তানসেন) ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহও প্লট পেয়েছেন।

জাপা ও অন্য দলের সাবেক সংসদ সদস্য

একইভাবে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে প্লট পেয়েছেন রওশন এরশাদ, পীর ফজলুর রহমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লিয়াকত হোসেন খোকা, নাসরিন জাহান রত্না, শওকত চৌধুরী, নুরুল ইসলাম তালুকদার, রওশন আরা মান্নান, নুরুল ইসলাম ওমর ও জিয়াউল হক মৃধা।

প্লট পাওয়াদের ঋণখেলাপিও রয়েছেন। তাঁদের একজন মাহজাবীন মোরশেদ। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৩০০ কোটি টাকা ঋণখেলাপির মামলায় তিনি ও তাঁর স্বামী মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহীমসহ চারজনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী ওরফে পাপিয়াও রাজউকের প্লট নিয়েছেন। প্লট পেয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াও, যিনি ২০২৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে অংশ নিয়ে দলছুট হন। বিকল্পধারা বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, জাসদের রেজাউল করিম (তানসেন) ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহও প্লট পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার মেয়ে উপমা বড়ুয়া পূর্বাচলে একটি প্লট পান।

সচিবদের ‘প্লট উপহার’

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনেক আমলা দলবাজিতে লিপ্ত হয়েছিলেন। একতরফা ও পাতানো নির্বাচনে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে অনেক আমলার বিরুদ্ধে। তাঁদের আওয়ামী লীগ সরকার ‘উপহার’ দিয়েছিল রাজউকের প্লট। এ তালিকায় অন্তত ৩৯ জন সাবেক ও বর্তমান সচিবের নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ‘ডামি নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই মাস আগে একসঙ্গে ১৮ জন সচিব প্লট পান। তাঁদের মধ্যে তখনকার নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলমও রয়েছেন।

প্লট পাওয়া সাবেক ও বর্তমান সচিবদের মধ্যে আরও রয়েছেন আহমেদ কায়কাউস, মাহবুব হোসেন, ফজলে কবির (পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর), শেখ ইউসুফ হারুন, মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান, মুহাম্মদ ইবরাহিম, আমিন উল্লাহ নূরী, কামাল উদ্দিন আহমেদ, আখতার হোসেন, আশরাফ উদ্দিন, মঈনুল কবির, সুলতান আহমেদ, সৈয়দ আফসার এইচ উদ্দিন, এ কে এম ফজলুল হক, নবীরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, ফরিদ আহমেদ, সেলিম রেজা, আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, হুমায়ুন কবীর খন্দকার, আবুল কাশেম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, জিয়াউল হাসান, আবু বকর সিদ্দিক, শেখ মুহাম্মদ সলীম উল্লাহ, হুমায়ুন কবির, মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, খায়রুল আলম সেখ, আবদুস সালাম, ইসরাত চৌধুরী, জাকির হোসেন আকন্দ প্রমুখ।

পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সচিব জাকির হোসেন আকন্দ ১৫ জানুয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, সচিব হওয়ার পর তিনি প্লটের জন্য আবেদন করেন। তাঁকে পূর্বাচলে ৫ কাঠার প্লট দেওয়া হয়েছে।

কী অবদানের জন্য প্লট পেলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন বলেন, ‘জানি না রাষ্ট্রের জন্য কী অবদান রেখেছি। আবেদনে আমি অবদানের কথা বলিনি। শুধু বলেছি, অতীতে আমি সরকারের কাছ থেকে কোনো প্লট পাইনি। ১৩/এ একটি ধারা আছে। যে ধারায় আবেদন করলে প্লট পাওয়া যায়। সে অনুযায়ী আবেদন করে প্লট পেয়েছি।’

আওয়ামী লীগ আমলে পুলিশের বিরুদ্ধে দলবাজির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তাদেরও প্লট দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোখলেসুর রহমান, সাবেক উপমহাপরিদর্শক আব্দুল বাতেন, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ও সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

মন্ত্রী, সচিবদের সন্তানেরাও তালিকায়

সাবেক রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা, সচিব ও পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ও সন্তানদেরও অসামান্য অবদান কোটায় প্লট দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলে রাসেল আহমেদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর ছেলে আসিফ শামস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফির ছেলে আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফি, সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবদুল মালেকের মেয়ে নাবিলা তাবাসসুম ওরফে মিকি, আরেক সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খানের মেয়ে শ্যামায়িতা খান, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামানও রয়েছেন রাজউকের প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায়।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ পূর্বাচলে একটি প্লট পান। তাঁর স্ত্রী শেফালী বেগম বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে কর্মরত। তিনিও পূর্বাচলে ৫ কাঠার প্লট পান। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অসামান্য অবদান কোটায় প্লট পেয়েছেন। জানতে চাইলে শেফালী বেগম ১৫ জানুয়ারি প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ সদস্য হয়ে তাঁর স্বামী প্লট পেয়েছিলেন। পরে প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি প্লটটি ফেরত দেন। উল্লেখ্য, প্লট পাওয়ার তালিকায় শরীফ আহমেদের নাম এখনো রয়েছে।

প্লট পাওয়াদের তালিকায় তিন বোনও রয়েছেন। তাঁরা হলেন কাজী নিশাত রসুল, কাজী নাহিদ রসুল ও কাজী তুহিন রসুল। তাঁরা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তিনজনই রাজউক থেকে প্রতিটি ৫ কাঠা করে তিনটি প্লট পান। কাজী নিশাত রসুল ছিলেন শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (এপিএস)। গত ২৯ নভেম্বর তাঁকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। কাজী নাহিদ রসুল মুন্সিগঞ্জ ও গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার এসে তাঁকে প্রত্যাহার করে। কাজী তুহিন রসুল রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে উপসচিব হিসেবে কর্মরত। এই তিনজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায় প্রদানকারী বিচারক কাজী গোলাম রসুলের (২০১৪ সালে প্রয়াত) মেয়ে।

প্লট পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী তুহিন রসুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম। আপনাকে গুছিয়ে ও পরিষ্কার করে বলতে পারব না। তাই এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই না।’

দলের যাঁরা প্লট পেয়েছেন

আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রভাবশালী নেতাদের অনেকে রাজউকের প্লট পেয়েছেন অসামান্য অবদান কোটায়। তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত কুমার রায় নন্দী, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান ওরফে তরুণ।

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিপ্লব, শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা লাইকুজ্জামান মোল্লা, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাউসার প্রমুখ রয়েছেন প্লট পাওয়াদের তালিকায়।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ ওরফে মহি রাজউকের প্লট পেয়েছেন অসামান্য অবদান কোটায়। তিনি সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় ২০২০ সালে গ্রাহকের ৭ হাজার ৩৯৮ ভরি সোনা বিক্রি করে দেন, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এ অভিযোগে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে ২০২১ সালে মামলা করে। মহিউদ্দিন আহমেদ এখন আত্মগোপনে।

বিদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা ব্যক্তিও রাজউকের প্লট পেয়েছেন। তাঁর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শাখার সভাপতি ছিলেন গাউসুল আলম শাহজাদা। তিনি পেয়েছেন ৫ কাঠার প্লট।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সংরক্ষিত কোটা একটি বিশেষ শ্রেণিকে সুবিধা দিতে তৈরি করা হয়েছিল। প্লট তাঁদেরই দেওয়া হয়েছে, যাঁরা সরকারের অনুগত, তোষামোদকারী। অসামান্য অবদানের কথা বলে প্লট বরাদ্দের মাধ্যমে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্লট নেওয়ার বিষয়টি শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে অন্যদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

সাংবাদিক অন্তত ৩০ জন

পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক অসামান্য অবদান কোটায় প্লট পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবু জাফর সূর্য, রাহুল রাহা, নাজমুল হাসান, শাহরিয়ার শহীদ, নাজিম উদ্দিন শ্যামল, সাইফুল ইসলাম কল্লোল, ফারুক হোসাইন, মুসলিম উদ্দিন আহমেদ পিপুল, রতন কান্তি দেবাশীষ, দীপ আজাদ, মধুসূদন মণ্ডল, বিথী জামান চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম সবুজ, আরেফিন ফয়সাল, শামীম আহমেদ, শরিফুজ্জামান পিন্টু, আনিসুর রহমান, আইয়ুব ভূঁইয়া, রফিকুল ইসলাম রতন, অশোক চৌধুরী, বি এম জাহাঙ্গীর, পপি চৌধুরী ও এস এম গোর্কী।

শিল্পীদের অনেকে প্লট পাওয়াদের তালিকায়

মুজিব সিনেমায় অভিয়ন করতে এক টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে গত বছর আলোচনায় আসেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। তবে তাঁকে পূর্বাচলে ১০ কাঠার একটি প্লট দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।

শুভ ছাড়াও অসামান্য অবদান কোটায় অন্তত ৩০ জন শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী রাজউকের প্লট পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মীর সাব্বির মাহমুদ, রানা হামিদ, লিটন হায়দার, রাসেল আশেকী, বেগম মীনা বড়ুয়া, সায়লা সাবরিন, মেহের আফরোজ শাওন ও মাহফুজ আহমেদ।

পূর্বাচলে রাজউক জমি অধিগ্রহণ করেছিল ১৯৯৫ সালে। তখন কথা ছিল, যাঁদের ঘরবাড়ি ও জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তাঁরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্লট পাবেন। তবে অনেকেই পাননি। তাঁরা এখনো রাজউকের কাছে প্লটের জন্য ধরনা দিচ্ছেন। তাঁদের একজন হালিমা খাতুন। ১৮ জানুয়ারি পূর্বাচলে গিয়ে দেখা পাওয়া যায় তাঁর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকার তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ১ একর ৭ শতাংশ জমি নিয়েছে। প্লটের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে ঘুষ দিতে না পারায় প্লট পাননি। তিনি বলেন, ‘সরকার আমার সব নিয়া গেছে। বড় লোকরে প্লট দিছে। আমারে প্লট দেয় নাই।’

তাঁদের অবদান ‘সরকার-ঘনিষ্ঠতা’

রাজউক ১৯৬৯ সালের ‘অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস রুলসের’ আওতায় প্লট বরাদ্দ দিয়ে থাকে। বিধিমালাটি ১৯৮৬ সালে সংশোধন করে একটি নতুন উপবিধি (১৩/এ) যুক্ত করা হয়। সেখানে ‘অসামান্য অবদানের’ জন্য প্লট বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়। ২০০৯ সালে উপবিধিটি সংশোধন করে ১২টি পেশা/শ্রেণি নাম উল্লেখ করা হয়, যাঁরা প্লটের জন্য অসামান্য অবদান কোটায় আবেদন করতে পারবেন। ওই ১২ পেশা/শ্রেণি হলো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, সরকারি চাকরিজীবী, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার চাকরিজীবী, সশস্ত্র বাহিনী, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বেসরকারি চাকরিজীবী; শিল্পী, সাহিত্যিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব; বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এবং অন্যান্য।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, কারও অসামান্য অবদানের জন্য পুরস্কৃত করার রেওয়াজ সব দেশেই আছে। তবে দেখা যাচ্ছে, রাজউকের প্লট পাওয়াদের বেশির ভাগের অসামান্য অবদান মূলত সরকার-ঘনিষ্ঠতা। কোনো ব্যক্তিকে অসামান্য অবদানের জন্য প্লট দেওয়া হলে একটি ফাইল খুলতে হয়। সেখানে তাঁর কী কী অবদান, তা লিপিবদ্ধ করতে হয়। কমিটির মাধ্যমে তা যাচাই করতে হয়। এটা হয়েছে বলে মনে হয় না। হলেও তা নামকাওয়াস্তে।

শাহদীন মালিক বলেন, প্লট পাওয়া ব্যক্তিদের নোটিশ দিতে হবে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে তা যৌক্তিক না হলে প্লটগুলোর বরাদ্দ বাতিল করতে হবে।