Image description

আলোচিত শাপলা প্রতীক ইস্যুতে অবস্থানের কোনো পরিবর্তন নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। বিদ্যমান তালিকার বাইরে যাবে না সাংবিধানিক সংস্থাটি। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) বিকল্প প্রতীক দিয়েই এ সপ্তাহে নিবন্ধনের গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে কমিশন।

গতকাল সোমবার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমদ।

এদিকে কমিশন সূত্র জানায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে গেলে সংস্থাটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। বিষয়টি নিয়ে নতুন জটিলতাও তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে এনসিপিও তাদের অবস্থানে অনড়। দলটির শাপলা প্রতীক ছাড়া নিবন্ধনই নেবে না। লাল হোক, সাদা হোক তাদের এই প্রতীকই দিতে হবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নিবন্ধনযোগ্য আরো কয়েকটি দলের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এনসিপির সঙ্গে বাকি যে কয়টি দল নিবন্ধন পাবে, সেগুলোকে একত্র করে প্রতীক বরাদ্দ দেবে ইসি। নিবন্ধন দেওয়ার সময় অন্য দলগুলোর মতো এনসিপির অনুকূলে শাপলার বিকল্প অন্য কোনো প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে এনসিপির প্রথমদিকের আবেদনে থাকা কলম কিংবা মোবাইল ফোনÑযে কোনো একটি থেকে বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে বলে ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই প্রতীক দুটি কমিশনের সর্বশেষ তফসিলেও আছে।

নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, এনসিপিকে শাপলা দেওয়া না দেওয়া নিয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে শাপলা নিয়ে ইসির সর্বশেষ অবস্থান কী জানতে চাইলে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করে এক ইসি আমার দেশকে বলেন, কমিশনে সিদ্ধান্ত পূর্বাপর (আগে যা ছিল এখনো তাই)। এ বিষয়ে সিইসির অবস্থান কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার অবস্থান অনুরূপ। তিনি বলেছেন, যেটা আমাদের বিধিমালায় (প্রতীকের তালিকায়) নেই, সেটার বাইরে গিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। যে দলই নিবন্ধন পাবে তালিকার মধ্যে থেকে প্রতীক বরাদ্দ নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো চাপ নেই বলেও জানান ওই কমিশনার।

তিনি আরো বলেন, শাপলাটির প্রচার ব্যাপকহারেÑযেমন টাকায় শাপলা, জাতীয় পরিচয়পত্রে শাপলা, পাসপোর্টে শাপলা এবং সেনাবাহিনীতেও শাপলা।

এনসিপি বলছে, প্রতীক হিসেবে তারা ‘শাপলা’ ছাড়াও আরো দুটি চেয়েছিল যার একটি কলম অপরটি মোবাইল। পরে শাপলাকে দলের প্রতীক নির্বাচিত করে স্বউদ্যোগেই অপর দুটিকে বাতিল করা হয়। কিন্তু ইসিকে তা জানানো হয়নি। শাপলা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে সেখান থেকে অবস্থান বদলে ‘লাল শাপলা ও সাদা শাপলা’ যে কোনো একটি পেতে চায় এনসিপি।

দলটির নেতারা বলছেন, এই প্রতীকের বাইরে এক চুলও নড়বেন না তারা। তবে শেষ পর্যন্ত পছন্দের প্রতীক না পেলে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবেÑতা ফোরামে আলোচনায় করণীয় ঠিক করা হবে।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আমার দেশকে বলেন, প্রতীক হিসেবে শাপলা চাই, সেটা আমরা কমিশনকে জানিয়ে এসেছি। পরে শাপলার বিকল্প সাদা শাপলা ও লাল শাপলা চেয়েছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাপলা না দেওয়ার বিষয়ে আইনগত ব্যাখ্যা দিয়েছে ইসি। কিন্তু এনসিপি তা মানতে নারাজ। সংবিধানের ৪ ধারার প্রথমদিকের ৩ ও ৪ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে ইসি তাদের ব্যাখ্যায় দাবি করেছে, সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় প্রতীক হচ্ছে শাপলা। সংবিধানে জাতীয় সংগীত, পতাকা ও প্রতীকের অননুমোদিত ব্যবহার নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ আছে। আর অপরাধ হিসেবেও এটা চিহ্নিত হয়। এ কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি জাতীয় প্রতীক শাপলা চিহ্নিত পতাকা দণ্ডায়মান রাখা হয়। তাছাড়া বহু সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের লোগোতে এই প্রতীক ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইসি তাদের ব্যাখ্যায় আরো বলছে, কোনো রাজনৈতিক দলকে এই প্রতীক বরাদ্দ দিলে তিনটি বড় ধরনের সমস্যা হবে। এগুলো হচ্ছেÑজাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যবহৃত প্রতীক কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হলে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হবে এবং রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ভোটারের মনে হতে পারে এটা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

তাই নির্বাচনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হওয়া ও জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। শাপলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে সংবিধানের নিরপেক্ষতা ও ন্যায়সঙ্গত নির্বাচন নীতির পরিপন্থী হবে। এ কারণে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ‘নাগরিক ঐক্য’কে শাপলা প্রতীক দেয়নি ইসি। আগামীতেও কোনো দলকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ করা অসমীচীন ও অযৌক্তিক হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আমার দেশকে বলেন, শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। তাই এটি রাষ্ট্রীয় পরিচয় বহন করে। তবে, এটি কোনো দলকে প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া না দেওয়া ইসির এখতিয়ার; তাদের উপরেই ছেড়ে দিতে হবে। অন্যদিকে ইসি সাংবিধানিক সংস্থা হওয়ায় কারো চাপের কাছে নতি স্বীকার করলে তা তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

আপিল বিভাগের আইনজীবী হাবিবুর রহমান আমার দেশকে বলেন, জাতীয় ফুল শাপলা রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে সংরক্ষিত আছে। এমনকি প্রতীকটি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচয় বহন করছে। তবে কোনো নিবন্ধিত দল শাপলা প্রতীক চেয়ে না পেলে আদালতে যেতে পারে। সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে।

এ সপ্তাহে বিকল্প প্রতীক দিয়ে এনসিপিকে নিবন্ধন

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তালিকা থেকে প্রতীক বেছে নিতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন কমিশনই এনসিপিকে উপযুক্ত প্রতীক বরাদ্দ করবে বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমদ। অন্য প্রতীক দিয়ে এই সপ্তাহেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিব আরো বলেন, কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট। প্রতীক বরাদ্দের সময় নিবন্ধনযোগ্য রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা প্রকাশের সঙ্গে প্রতীকের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হবে।

শাপলা প্রতীক সংক্রান্ত প্রশ্নে তিনি বলেন, কমিশন ইতোমধ্যে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বিকল্প প্রস্তাব কমিশনের কাছে আসেনি। এখনও কমিশনের আগের অবস্থানই আছে। ইসি নিজ বিবেচনায় প্রতীক দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি এ সপ্তাহে জারি করবে।