কুমিল্লার চান্দিনায় জামায়াতে ইসলামীর কুমিল্লা উত্তর জেলা শাখা আয়োজিত গণমিছিলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে দলের একটি পক্ষকে। তাদের ভাষ্য, যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। তবে জামায়াতের প্রার্থীর দাবি, তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করেননি।
সোমবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা বাসস্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পাঁচ দফা দাবিতে এই গণমিছিলের আয়োজন করা হয়। হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তিতে অবশ্য কোনো নেতা-কর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ উল ইসলাম বলেন, জামায়াতের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ঘটলেও তাঁদের নেতা-কর্মীরাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তবে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা সেখানে ঘটেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে বের হওয়া গণমিছিলের শেষ পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর চান্দিনা উপজেলার নায়েবে আমির ও কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে দলের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা মোশাররফ হোসেন বক্তব্য দেওয়ার সময় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে জামায়াত ও শিবিরের অপর একটি পক্ষ। তারা প্রার্থীর হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়। এ সময় কয়েকজন নেতাকর্মী ‘দল বিক্রি চলবে না, আওয়ামী দোসর প্রার্থী মানি না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন মোশাররফ হোসেনের পক্ষ ও অপর পক্ষ মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। তাদের মধ্যে হাতাহাতি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
মোশাররফ হোসেনের বিরোধীরা জামায়াতে ইসলামীর চান্দিনা আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যারিস্টার মোস্তফা শাকের উল্লাহর সমর্থিত বলে জানা গেছে। তবে ঘটনাস্থলে মোস্তফা শাকের উল্লাহর নাম কাউকে নিতে দেখা যায়নি। মোস্তফা শাকের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। আর ঘোষিত প্রার্থী মোশাররফ হোসেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সুপার (অধ্যক্ষ)।
সংগঠনটির নেতা–কর্মীরা জানান, দলীয় প্রার্থী হিসেবে মোশাররফ হোসেনকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নেতা–কর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, সংগঠনের নিয়ম না মেনে ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে উত্তর জেলা শাখা সিন্ডিকেট করে মোশাররফ হোসেনকে দলীয় প্রার্থী করে।
সংঘর্ষের সময় নেতা-কর্মীদের একটি অংশকে কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের আমির আবদুল মতিন ও জেলা সেক্রেটারি সাইফুল ইসলামের (শহীদ) বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
চান্দিনা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাজিদ আল-আমিন (সোহাগ) বলেন, জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির ও সেক্রেটারি অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে মোশাররফ হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। অথচ মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রাণ গোপালের সঙ্গে উঠান বৈঠক করেছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তপন বকসীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি। জেলা সংগঠন আওয়ামী লীগের একজন দালালকে জামায়াতের মাধ্যমে সহযোগিতা করেছে। দলের হাইকমান্ডের কাছে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন বলে জানান সাজিদ আল–আমিন।
তবে মোশাররফ হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দলীয় নেতা–কর্মীরা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। আমার পক্ষে মিছিল হলে অন্য পক্ষ তার বিরুদ্ধে মাঠে আছে। তবে আমি কখনোই রাজনৈতিকভাবে আপস করিনি। স্থানীয় উন্নয়নমূলক আলোচনায় অংশ নেওয়াকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি একটি মাদ্রাসার প্রধান। যে দলই ক্ষমতায় আসুক, দাওয়াত দিলে আমাকে সেখানে যেতে হয়। এ ছাড়া বিগত সময়ে উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগ এমপি বা নেতাদের সঙ্গে ছবি উঠতে পারে। এখন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চান্দিনা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থী মনোয়ন সম্পূর্ণ সাংগঠনিক প্রক্রিয়াতেই করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে মোস্তফা শাকের উল্লাহর সমর্থিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। বিশেষ করে তরুণদের একটি অংশ তাঁকে প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছে। বিষয়টি জেলা কমিটিকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজ গণমিছিলে এক পক্ষের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে দ্রুত আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। এটি তেমন কোনো বড় ঘটনা নয়। তবে জামায়াতে ইসলামীর মতো রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত।’
ঘটনার সময় নিজেই উপস্থিত ছিলেন উল্লেখ করে কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটেছে। জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় একটি প্রক্রিয়া আছে, সেই প্রক্রিয়াতেই আমিরে জামায়াত (জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির) মাওলানা মোশাররফ হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। তবে দলের একটি পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এটাই মূল কথা। অন্য সব কথা ভিত্তিহীন। এ ছাড়া এখানে মাস্তফা শাকের উল্লাহও কোনো বিষয় নয়।’