কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ২০২১ সালে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবার ও অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে অপহরণ, অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া এবং শেখ হাসিনার সরকারের প্রশ্রয়ে দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, প্রতিবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় এই দুর্নীতি ও কুকীর্তি ফাঁসের পর তার সরকার এটি লুকাতে তৎপর হয়ে ওঠে।
প্রতিবেদনটি ইউটিউবে ১ কোটিরও বেশি বার দেখা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন জেনারেল আজিজ এবং তার ভাইদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে সেই সময় তৎকালীন বাংলাদেশের সরকার এই প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা, মানহানিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছিল। প্রতিবেদন প্রকাশের পর তথ্য ফাঁসকারী জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাইকে লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়। প্রতিবেদনে সহায়তাকারীরা ভয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের পর শেখ হাসিনার বাড়ি থেকে এ সংক্রান্ত একটি নথি পেয়েছে তারা। এতে উল্লেখ আছে, আল জাজিরার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য প্রখ্যাত ব্রিটিশ ব্যারিস্টার ডেসমোন্ড ব্রাউনি কেসির সঙ্গে
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা যোগাযোগও করেছিলেন। ব্যারিস্টার ব্রাউনি এ ব্যাপারে সহায়তা করতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে সম্মতিও জানিয়েছিলেন। ব্রাউনি পরবর্তীতে ক্লার্ক উইলিয়ামস নামের এক আইনজীবীর সঙ্গে হাসিনার প্রতিনিধিদের যোগাযোগ করিয়ে দেন। যিনি যুক্তরাজ্যে ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে মামলায় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।
আল জাজিরার পাশাপাশি ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বার্গম্যানের ভূমিকা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয় এবং তাকে আটক করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানানো হয়। বার্গম্যান আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন। মামলাটি সরকার করবে নাকি জেনারেল আজিজ করবেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়। এমনকি অবসরপ্রাপ্ত কোনো সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলার পরিকল্পনাও ছিল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার বাড়ি থেকে এ সংক্রান্ত নথি পেয়েছে বলে দাবি করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
যদিও যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা করার পরিকল্পনা ছিল, হাসিনা সরকার এটি না করে ইউটিউব ও ফেসবুকের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য। বাংলাদেশের হাইকোর্ট ভিডিওটি সরাতে নির্দেশ দিলেও ইউটিউব এবং ফেসবুক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে প্রতিবেদনটি অনলাইনে থেকেই যায়।
এদিকে, ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দু গত শনিবার ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের একান্ত সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে আগস্টের প্রথম দিকে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছিলেন শেখ হাসিনা। সামরিক বাহিনী পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য লকডাউন নিশ্চিত করতে মাঠে ছিল, যাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়। উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন।