Image description

রাজধানীর মতিঝিল, রমনা, শাহবাগ, পল্টন ও শাহজাহানপুর থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসন। রাজনৈতিকভাবে ঐতিহ্যবাহী এ আসনকে ঢাকার রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এখন চলছে পোস্টার-ফেস্টুনে মাঠ দখলের লড়াই। যাতে এগিয়ে বিএনপির মির্জা আব্বাস ও জামায়াতের ড. হেলাল উদ্দিন।

রাজনীতির সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠান থাকা এ আসনটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্ববহ। সরেজমিনে আসনটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বহুমুখী লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। যদিও বিএনপির অভিজ্ঞ রাজনীতিক মির্জা আব্বাস, জামায়াতের ড. হেলাল উদ্দিন ও তরুণ মুখ শরিফ ওসমান হাদীর প্রচারণা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ভোটারদের প্রত্যাশা, যিনিই জয়ী হন, তিনি যেন উন্নয়ন ও চাঁদামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারেন।

মির্জা আব্বাস-ড. হেলালের লড়াইয়ের আভাস, আলোচনায় ওসমান হাদী

পোস্টার-ফেস্টুনে নির্বাচনি উত্তাপ

মতিঝিল থেকে শাহজাহানপুর- সবখানেই এখন নির্বাচনি উত্তাপ। ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি। মাঠে সক্রিয় বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও নবাগত ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা। স্থানীয়রা বলছেন, এখানকার রাজনীতিতে বিএনপি বেশি প্রভাবশালী। তবে জামায়াতের প্রার্থীও শক্ত। লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।

 

জয়ী হলে ঢাকা-৮ আসনকে সুশাসন, সামাজিক নিরাপত্তা ও নাগরিক সেবার সবুজ মডেলে রূপান্তর করবো। দুর্নীতি, ঘুস ও চাঁদাবাজিমুক্ত সমাজ গড়াই আমাদের অঙ্গীকার।-ড. হেলাল উদ্দিন

প্রচারণা-আলোচনায় এগিয়ে মির্জা আব্বাস

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক থাকলেও শেষ পর্যন্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসই ধানের শীষের প্রার্থী হবেন বলে ধারণা স্থানীয় নেতাকর্মীদের। ইতোমধ্যে তার পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে মহল্লা।

আলোচনায় রয়েছেন তার স্ত্রী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশীদ হাবীবও। তবে মাঠে এখন কেবল মির্জা আব্বাসের প্রচারণাই দৃশ্যমান। তাই তাকে নিয়েই আলোচনা বেশি। তাছাড়া রাজনীতিতে তিনি সব সময় বেশ প্রভাবশালী। একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। অবিভক্ত ঢাকার মেয়রও ছিলেন। মন্ত্রী ছিলেন বিএনপির ১৯৯১ ও ২০০১-এ বিএনপির শাসনামলে।

 

মির্জা আব্বাস-ড. হেলালের লড়াইয়ের আভাস, আলোচনায় ওসমান হাদী

বিএনপি এখনো কোনো আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেনি। মাঠের প্রচার-প্রচারণা দেখে ভোটাররা ধরে নিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থী কে। তাকে নিয়েই চলছে আলোচনা। মির্জা আব্বাস এদিক থেকে এগিয়ে।

গণসংযোগ ও সেবামূলক কাজে প্রচারণা সারছেন ড. হেলাল উদ্দিন

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির একক প্রার্থী হিসেবে। প্রতিদিনই তিনি গণসংযোগে ব্যস্ত। দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থানে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, খাদ্যসামগ্রী ও রিকশা-ভ্যান বিতরণ করা হচ্ছে। পোস্টার ও ব্যানারে শোভিত এলাকাজুড়ে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক দৃশ্যমান সর্বত্র।

ড. হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জয়ী হলে ঢাকা-৮ আসনকে সুশাসন, সামাজিক নিরাপত্তা ও নাগরিক সেবার সবুজ মডেলে রূপান্তর করবো। দুর্নীতি, ঘুস ও চাঁদাবাজিমুক্ত সমাজ গড়াই আমাদের অঙ্গীকার। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে হেলথ কমপ্লেক্স স্থাপন ও জনগণের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।’

আলোচনায় নতুন মুখ শরিফ ওসমান হাদী

রাজনীতিতে নতুন মুখ শরিফ ওসমান হাদী, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বেশ সক্রিয় এবং তরুণদের মাঝে সাড়া ফেলেছেন। হাদী সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ঢাকা-৮ আসনে প্রতিদিন বিকেলে আমি এলাকার অলিগলিতে গিয়ে মানুষের কথা শুনবো, চা-শিঙাড়া খাবো এবং তাদের পরামর্শ নোট করবো।

ব্যবসা করলে চাঁদা দিতে হয়—এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। আমাদের কাছে উন্নয়নের চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে চাঁদাবাজি বন্ধ করা। যেহেতু ঢাকা-৮ ব্যাংক পাড়া ও অফিস পাড়া হিসেবে পরিচিত, তাই নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও চাঁদামুক্ত সমাজ—এই তিনটি বিষয়েই আমরা ভোটের সিদ্ধান্ত নেবো।- পল্টন এলাকার ব্যবসায়ী অরিন

২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে ওঠা ইনকিলাব মঞ্চ প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার ভাবধারায় পরিচালিত এ সংগঠন সংস্কৃতি ও পরিবর্তনের রাজনীতি সামনে আনার চেষ্টা করছে।

মির্জা আব্বাস-ড. হেলালের লড়াইয়ের আভাস, আলোচনায় ওসমান হাদী

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীও মাঠে

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (চরমোনাই) প্রার্থী মুফতি কেফায়েত উল্লাহ কাশফী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন। তিনি গণসংযোগে সক্রিয় এবং ভোটারদের কাছে ‘পরিবর্তনের রাজনীতি’র বার্তা দিচ্ছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় সভার মাধ্যমেও ভোটারদের আকর্ষণ করতে চাচ্ছে দলটি।

রাস্তাঘাটের উন্নয়ন-চাঁদাবাজি বন্ধ চান ভোটাররা

ঢাকা-৮ আসনের সাধারণ ভোটারদের মতে, এবারের নির্বাচনে মূল ইস্যু হবে চাঁদাবাজি রোধ ও স্থানীয় উন্নয়ন। উত্তর শাহজাহানপুরের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে আমরা ঠিকভাবে ভোট দিতে পারিনি, উন্নয়নের কথাও বলতে পারিনি। এবার আমরা এমন প্রার্থীকে ভোট দেবো, যিনি মহল্লার রাস্তা মেরামত করবেন, চাঁদাবাজি করবেন না এবং এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন।’

রমনা এলাকার গৃহিণী শাহেরা বলেন, ‘বাসার নিচে ছোট কয়েকটি দোকান ভাড়া দিয়ে সংসার চালাই। কিন্তু এখানে প্রায়ই চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। আমরা চাই, যে প্রার্থী সত্যিকারের চাঁদাবাজমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পারবেন, তাকেই বেছে নেবো। শুধু মুখের প্রতিশ্রুতি নয়, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দিতে হবে।’

মির্জা আব্বাস-ড. হেলালের লড়াইয়ের আভাস, আলোচনায় ওসমান হাদী

পল্টন এলাকার প্রেস ব্যবসায়ী অরিন বলেন, ‘ব্যবসা করলে চাঁদা দিতে হয়—এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। আমাদের কাছে উন্নয়নের চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে চাঁদাবাজি বন্ধ করা। যেহেতু ঢাকা-৮ ব্যাংক পাড়া ও অফিস পাড়া হিসেবে পরিচিত, তাই নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও চাঁদামুক্ত সমাজ—এই তিনটি বিষয়েই আমরা ভোটের সিদ্ধান্ত নেবো।’

ভোটের হিসাব-নিকাশ

ঢাকা-৮ আসন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির তীব্র লড়াই হয়েছে। যাতে দুবার বিএনপি ও একবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন।

মির্জা আব্বাস-ড. হেলালের লড়াইয়ের আভাস, আলোচনায় ওসমান হাদী

২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন নৌকা প্রতীকে জয়ী হন এবং পরপর তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন। সবশেষ নির্বাচনে বাহাউদ্দিন নাছিম নৌকা প্রতীকে জয় পান।

 

 

বর্তমানে আসনটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ৮–১৩ (মতিঝিল-পল্টন) এবং রমনার ওয়ার্ড ১৯–২১ নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ৬৩৪, এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৭ ও নারী ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ২৭৭ জন। মতিঝিল, রমনা, শাহবাগ, পল্টন ও শাহজাহানপুর থানা পড়েছে এর মধ্যে।