Image description

মাদারীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা মেরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ বালু উত্তোলন, নারীদের কুপ্রস্তাব, মামলা বাণিজ্য ও পুলিশ দিয়ে হয়রানির মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কিছু ব্যক্তিগত ছবি ও অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকেলে এনসিপির মাদারীপুর জেলা কমিটি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন সৈয়দ রাহাত হোসেন (ডাসার উপজেলা), সেলিম মোল্লাহ (শিবচর উপজেলা) এবং বিপ্লব কাজী (মাদারীপুর সদর)। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে এনসিপির মাদারীপুর জেলার প্রধান সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘অভিযোগগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। দোষী প্রমাণ হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্র জানায়, প্রায় এক মাস আগে এক নারী সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন মেরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিযোগে তিনি গত চার থেকে পাঁচ মাস ধরে ওই নেতার দ্বারা উত্ত্যক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন। এর কিছুদিন পরই আরেক নারীর সঙ্গে মেরাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

মেরাজুল ইসলাম মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার শংকরদী গ্রামের ফার্নিচার মিস্ত্রি সিরাজ ব্যাপারীর ছেলে। একসময় তিনি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকতা ও প্রাইভেট পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে নারীকে কুপ্রস্তাব, স্কুলের অর্থ আত্মসাৎসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তিনি একাধিক স্কুল থেকে চাকরি হারান বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তিনি সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মী দাবি করে এনসিপিতে যোগ দেন। যদিও আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও মাদারীপুর জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য পদ পেতে কোনো বাধা হয়নি। এরপর থেকেই এলাকায় প্রভাব বাড়তে থাকে তার।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কমিটিতে জায়গা পাওয়ার পর থেকেই মেরাজুল অবৈধ বালু উত্তোলন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে নেয়। রাজৈর উপজেলার তাতিকান্দা, শংকরদী, হোসেনপুর, ফুলতলা ও কাশিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় তার প্রভাব বিস্তার রয়েছে। এসব এলাকায় বালু উত্তোলনে বাধা দিলে হামলা, মামলা ও হুমকির শিকার হতে হয় স্থানীয়দের।

এ ছাড়া মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও মামলা নিষ্পত্তির নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে মেরাজুল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়ে মেরাজুল ইসলাম দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বেশিরভাগই মিথ্যা। বালু ভরাটের কাজ করার কথা তিনি স্বীকার করলেও নারীসংক্রান্ত ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তদন্ত কমিটির সদস্য বিপ্লব কাজী বলেন, “আমরা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত চালাচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”