জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সামনের সাঁড়িতে থেকে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনি ট্রেন উঠতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদসহ জাতীয় পর্যায়ে চলা সব সংস্কার প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। এই দলটি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নিজেদের শক্তি-সামর্থ ও সমর্থন সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছে দলটি। নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিবে নাকি বড় কোনো দলের সঙ্গে জোট বা নির্বাচনি সমঝোতায় যাবে তা ঠিক করতে নিজেদের মধ্যে একাধিক সভা করেছে দলটি। তবে এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি এনসিপি। নির্বাচনে এনসিপির পলিসি কী হবে? এককভাবে নাকি জোটগতভাবে নির্বাচন করবে, জোট করলে কোন দলের সঙ্গে করবে তা চূড়ান্ত করতে দলটি কাউন্সিল ডেকে নেতাকর্মীদের মতামত নিবে। বেশিরভাগের মতামতের ভিত্তিতেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে দলটি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে এনসিপি জোট গঠনের লক্ষ্যে সমমনা একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইতোপূর্বে বৈঠক করেছে। ছোট ছোট একাধিক দলের পাশাপাশি বড় দলের সঙ্গে বৈঠকের কথাও জানা গেছে। এসব বৈঠকে জোট বা সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন নিয়ে এনসিপি বর্তমানে দু’টি চিন্তা মাথায় রাখছে। একটি হচ্ছে- এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোটারদের স্বাধীন ও স্বচ্ছ রাজনীতির বার্তা দেওয়া, অপরটি হচ্ছে- গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পূর্ণ দলগুলোকে নিয়ে জোট করে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা। তবে শেষ পর্যন্ত ঠিক কোন দিকে যাবে তা এখনও আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে।
এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার শীর্ষনিউজ ডটকমের প্রতিবেদকে বলেন, আসছে নির্বাচনে এনসিপি জোটগতভাবে বা সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করবে । সে অনুযায়ী আমরা দেখছি আমাদের হাতে কী কী অপশন আছে। বিএনপি বা জামায়াত যে কারও সঙ্গেই জোট বা সমঝোতা হতে পারে। তবে নীতিগতভাবে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। তবে নীতির সঙ্গে আপস করে কোন জোটে যাব না। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব, এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। ক্ষমতার রাজনীতিতে ঘা ভাসাবেনা এনসিপি। তিনি বলেন, যে জোটেই আমরা যাই না কেন, তা হবে নীতিনির্ভর ও সমাঝোতার, স্বার্থের নয়। তিনি আরও বলেন, যে দলের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক দর্শন ও সংস্কারমুখী চিন্তার মিল থাকবে, আমরা তাদের সঙ্গেই জোট করব।
বেশ কয়েকটি ছোট দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করেছে এনসিপি। এদের মধ্যে গণঅভ্যুথান পরিষদ, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, জাতীয় গণসংঘ, জনঅধিকার, সহ কয়েকটি দল। রাজনীতে এদের খুব একটা প্রভাব না থাকায় এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই ছোট দলগুলো নিয়ে জোট গঠনে খুব একটা আগ্রহি নন, তবে এরা রাজপথে সহযোদ্ধার ভূমিকায় থাকুক সেটি চায় এনসিপি। এদিকে, দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ব্রিফিংকালে জানিয়েছে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির আলোচনা চলছে, এতে অগ্রগতি জানানোর মতো কিছু এখনও হয়নি।
অপরদিকে, জোটভিত্তিক রাজনীতি প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, সব দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। এনসিপির সঙ্গেও রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে এখনই জোট গঠন বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না; আলোচনা চলছে, অপেক্ষা করতে হবে।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মাঠপর্যায়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে এনসিপি। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদকরা ইতোমধ্যে ৪২টি জেলায় প্রতিনিধি সভা ও কর্মী সমাবেশ সম্পন্ন করেছে। দলটির তরুণ সদস্যদের অনলাইন ও সরাসরি নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে। অনেক আসনে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনি পোস্টারও লাগিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিরোধিতাকে পুঁজি করেই এনসিপি তাদের রাজনীতি এগিয়ে নিচ্ছে। তবে রাজনীতিতে তারা কিংমেকার হতে পারে, যদি তরুণ ভোটারদের আস্থায় নিতে পারে। তাহলে জাতীয় নির্বাচনে ভালো ফল করতে পারবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে এনসিপি যদি নিজেদের বিকল্প গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে বড় ভূমিক রাখতে পারবে। তরুণদের মাঝে দলটির গ্রহণযোগ্যতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তারা যদি সঠিক বার্তা দিতে পারে, তাহলে ভোটের মাঠে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অপরদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার আব্দুল হালিম বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মাঝারি শক্তির দলগুলো অনেক সময় বড় ভূমিক রাখে, যদি এনসিপি সংগঠিত ও নীতিনিষ্ঠ থাকে। আমি মনে করি এনসিপি এখনও তাদের সেই জায়গাটা ধরে রেখেছে।
দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নভেম্বরের শুরতেই এনসিপি জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করতে যাচ্ছে। সেখানেই নির্ধারিত হবে দলটি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিবে না জোটের সঙ্গে। কাউন্সিলের মাধ্যমেই সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মতামত নেব দলটি।
শীর্ষনিউজ