ঢাকা বিভাগের দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছে বিএনপি। তাদের আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, পদ-পদবি, বর্তমান অবস্থান এবং এলাকায় মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার তথ্য নেয়া হচ্ছে। আগামী ২৭শে অক্টোবর ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিএনপি। এদিন রাত ৮টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে যারা ডাক পেয়েছেন শুধুমাত্র তারাই এদিন কার্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভাগভিত্তিক মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। ঢাকা বিভাগ ব্যতীত ইতিমধ্যে সব বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক শেষ হয়েছে। চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সম্ভাব্য সব প্রার্থীদের একই বার্তা দেয়া হচ্ছে। দল থেকে একক প্রার্থী দেয়া হবে। দলীয় মনোনয়ন যাকেই দেয়া হবে তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। দলের এই নির্দেশনা যারা অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপি’র একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিভাগের দায়িত্বে আছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠকসহ নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে গত বৃহস্পতিবার রাতে সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকা বিভাগীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল। ওদিকে চলতি মাসেই ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি। তাদেরকে এই মাসেই গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হবে। গত সোমবার বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, একাধিক প্রার্থী এবং গ্রুপিং থাকায় শতাধিক আসনকে জটিলতাপূর্ণ বিবেচনা করে সংকট নিরসনে সাংগঠনিক উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে এসব আসনের প্রার্থীদের কেন্দ্রে ডেকে দল থেকে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই সাংগঠনিক উদ্যোগের পরেই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে দলটি। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলীয় সাংগঠনিক প্রক্রিয়া তথা পার্লামেন্টারি বোর্ডের মধ্যদিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, আমরা তো আমাদের দলীয় সম্ভাব্য সব প্রার্থীর তথ্য জানি। এখন বলা হচ্ছে, দল এককভাবে যাকে মনোনয়ন দেবে- তারপক্ষে সবাই কাজ করবে।
১৩টি জেলা নিয়ে ঢাকা বিভাগ গঠিত। এরমধ্যে ঢাকায় আসন রয়েছে ২০টি আসন। এসব আসনের মধ্যে কয়েকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে, এর মধ্যে ঢাকা-৪ আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা-৮ মির্জা আব্বাস, ঢাকা-১৩ সমমনা দল এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ঢাকা-১৬ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমিনুল হক, ঢাকা-১৭ সমমনা দল বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে চূড়ান্ত বার্তা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গাজীপুরে আসন ৬টি। এরমধ্যে গাজীপুর-৪ শাহ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজকে চূড়ান্ত বার্তা দেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
নারায়ণগঞ্জে ৫টি আসন। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নান দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র অনেকটা নিশ্চিত করেছেন। টাঙ্গাইলে আসন রয়েছে ৮টি, এরমধ্যে টাঙ্গাইল-৫ সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু গ্রিন সিনগ্যাল পেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ফরিদপুরে আসন ৪টি, এরমধ্যে ফরিদপুর-২ শামা ওবায়েদ এবং ফরিদপুর-৪ আসনে শহীদুল ইসলাম বাবুলকে চূড়ান্ত বার্তা দেয়া হয়েছে। মাদারীপুরে আসন রয়েছে ৩টি, এরমধ্যে মাদারীপুর-৩ আসনে আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। শরীয়তপুরে আসন রয়েছে ৩টি, এরমধ্যে শরীয়তপুর-৩ আসনে মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপুকে চূড়ান্ত বার্তা দেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছেন। মুন্সীগঞ্জে আসন রয়েছে ৩টি, এরমধ্যে মুন্সীগঞ্জ-২ মিজানুর রহমান সিনহা এবং মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে কামরুজ্জামানকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া নরসিংদী জেলায় ৫টি, মানিকগঞ্জে ৩টি, কিশোরগঞ্জে ৬টি, গোপালগঞ্জে ৩টি এবং রাজবাড়ীতে ২টি করে আসন রয়েছে।
ঢাকা বিভাগীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল মানবজমিনকে বলেন, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাই করছেন বিএনপি’র হাইকমান্ড। আর প্রার্থীদের ডেকে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হচ্ছে। তাদেরকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে।