রাজশাহী অঞ্চল বরাবরই জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থী রাজনৈতিক শক্তির অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে দীর্ঘ ১৬ বছরের রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, মামলা ও গ্রেফতারের কারণে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি।
অন্যদিকে, ইসলামী মূল্যবোধের স্লোগানকে সামনে রেখে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
রাজশাহীর রাজনৈতিক মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিএনপি এখনো সাংগঠনিকভাবে বিভক্ত—নেতা-কর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ ও গ্রুপিং পরিস্থিতিকে জটিল করছে।
প্রার্থী নির্ধারণে বিলম্বে অনেক এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। সেই সুযোগে জামায়াত সক্রিয়ভাবে মাঠ দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ৩৯টি সংসদীয় আসনে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ ভোটার। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে জাতীয়তাবাদী ধারার দলগুলো প্রভাব বিস্তার করেছিল।
তবে বর্তমানে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের মধ্যে বিএনপি আগের মতো প্রভাব বজায় রাখতে পারছে না, যেখানে জামায়াত সংগঠিতভাবে কাজ করছে।
রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে অন্তত তিনটিতে জামায়াত শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশেষ করে রাজশাহী-১ আসনটি তাদের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমিরের এলাকা হওয়ায় এখানে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে দলটি।
রাজশাহী শহরকেন্দ্রিক আসন-২ এবং পাশের আসনগুলোতেও জামায়াতের তৎপরতা বেড়েছে।
অন্যদিকে, বগুড়া, জয়পুরহাট ও নওগাঁয় বিএনপির প্রভাব এখনো তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় দ্বন্দ্ব ও প্রার্থী বাছাইয়ের অনিশ্চয়তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। এই তিন জেলায় জামায়াত ৬ আসনে জিততে পারে।
বগুড়ায় সাতটি আসনের ৪টিতে ভালো অবস্থানে আছে বিএনপি। বাকী ৩ আসনে জামায়াতের সঙ্গে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবে।
জয়পুরহাটের দুইটি আসনেও বিএনপির সম্ভাবনা বেশি, যদিও জামায়াতের তৎপরতা বেড়েছে।
সিরাজগঞ্জে ছয়টি আসনের মধ্যে ৩টিতে বিএনপির প্রার্থী এগিয়ে থাকতে পারেন, বাকী ৩টিতে জামায়াত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
নাটোরে চারটি আসনের মধ্যে দুইটিতে বিএনপি এবং দুইটিতে জামায়াত শক্ত অবস্থানে রয়েছে। নওগাঁয় ছয়টি আসনের মধ্যে বিএনপি এগিয়ে, তবে কিছু এলাকায় জামায়াতের প্রভাব বাড়ছে।
পাবনায় বিএনপি তুলনামূলক এগিয়ে থাকলেও একাধিক আসনে জামায়াতের তৎপরতা চোখে পড়ছে। বিশেষ করে পাবনা-১ ও পাবনা-৫ আসনে জামায়াতের ঐতিহ্যবাহী প্রভাব রয়েছে। এবারও এই ২ আসন ছাড়াও পাবনা ৩ আসনে বিশেষ নজর জামায়াতের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনটি আসনের মধ্যে একটি আসনে বিএনপি, একটি আসনে জামায়াত এবং অপরটিতে সমান তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।
সর্বশেষ মাঠ-তথ্য বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বর্তমানে রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনের মধ্যে বিএনপির পক্ষে অনুকূল ২৪টি এবং জামায়াতের সম্ভাবনাময় ১৫টি আসন রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে এই অঞ্চলে ফল নির্ভর করবে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন, সাংগঠনিক ঐক্য ও তরুণ ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ওপর।
অন্যদিকে জামায়াতের মূল শক্তি হচ্ছে তাদের ঘনিষ্ঠ সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক ও ধারাবাহিক মাঠকর্ম।