দেশে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি আছে । রয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা । এতে তরুণদের বড় অংশের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে । এমন পরিস্থিতিতে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় বিদেশমুখী হচ্ছেন তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা । জাতিসংঘ শিক্ষা , বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার ( ইউনেসকো ) তথ্য বলছে , উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক দশকে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে । অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী , বিগত ৯ অর্থবছরে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে দেশ থেকে বেরিয়ে গেছে প্রায় ৩১১ কোটি ডলার , যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা ( হিসাবটি গত ৯ টি অর্থবছরের ডলারের দর অনুযায়ী ) । শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা
আমাদের শিক্ষা - দীক্ষার অবস্থা খুবই শোচনীয় । যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মসংস্থানেরও ঘাটতি রয়েছে । মনজুর আহমেদ- ইমেরিটাস অধ্যাপক , ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
বাড়ার কারণ জানতে বিদেশে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থী , বিদেশে পড়তে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবক , শিক্ষকসহ অন্তত ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা । তাঁরা মোটাদাগে পাঁচটি কারণের কথাই বলেছেন । কারণগুলো হলো মানসম্মত উচ্চশিক্ষার অভাব , কর্মসংস্থানের ঘাটতি ও বেকারত্ব
বহুমাত্রিক কারণে দেশ ছাড়ছে শিক্ষার্থীরা । মেধাবীদের দেশে রাখতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন । মো . আলী জিন্নাহ অধ্যাপক , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বৃদ্ধি , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা , উন্নত ভবিষ্যতের হাতছানি এবং নিরাপদ ও আধুনিক জীবনযাত্রার আকাঙ্ক্ষা । এর সঙ্গে একমত শিক্ষাবিদেরাও । তাঁরা বলছেন , দেশে উচ্চশিক্ষার মান ও গবেষণার সুযোগ এবং কর্মসংস্থান না বাড়লে এই প্রবণতা আরও বাড়বে ।
সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড . চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি । পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় যোগাযোগ করা হলে তাঁরা দেশের উচ্চশিক্ষা দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ( ইউজিসি ) সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন ।
জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য ১৯ অক্টোবর অধ্যাপক ড . মো . সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ আপাতদৃষ্টে যে চিত্র আপনারা তুলে এনেছেন , তার সঙ্গে আমি একমত । ' মানসম্মত উচ্চশিক্ষার বিষয়টি সামগ্রিক শিক্ষার ওপর নির্ভর করে জানিয়ে তিনি বলেন , প্রাথমিক , মাধ্যমিক , উচ্চমাধ্যমিকে যে শিক্ষার ঘাটতি তৈরি হয়েছে , এর প্রভাব পড়ছে উচ্চশিক্ষায় । এটা সত্য যে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ- শিক্ষার মান এক নয় ; বিশেষ করে নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । কেন বিদেশমুখীনতা গত এক সপ্তাহে রাজধানীর গুলশান ও বনানীতে অবস্থিত ভিএফএস গ্লোবাল
( বিভিন্ন দেশের সরকার ও দূতাবাসের জন্য ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ) অফিসের সামনে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের । তাঁরা সবাই এখানে এসেছেন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার জন্য ।
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে ওই সব শিক্ষার্থীর ভাষ্য , কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই , অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই । কেউ কেউ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টি বিবেচনা করে উন্নত ভবিষ্যৎ , আধুনিক ও নিরাপদ জীবনের জন্য বিদেশকে বেছে নিচ্ছেন বলে জানান । গুলশানে ভিএফএস গ্লোবাল অফিসের সামনে কথা হয় ২০২৪ সালে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা শাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে । তিনি জানান , দেশে পড়াশোনার মান দিন দিন কমছে । তাই পরিবার চাইছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষে সেখানেই ক্যারিয়ার গড়তে । আর দেশের পরিস্থিতি তো দিন দিন খারাপ হচ্ছে , তাই না ? দেশের উচ্চশিক্ষার মান কমার বিষয়টি উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের চলতি বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , একটি শিশু ১৮ বছর বয়সে সাধারণত ১১ বছর মেয়াদি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ( প্রথম শ্রেণি থেকে একাদশ শ্রেণি ) । কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শেখার মান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায় ৬ দশমিক ৫ বছরের সমতুল্য । অর্থাৎ শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মানে অন্তত সাড়ে ৪ বছর পিছিয়ে বাংলাদেশ ।
বিদেশে পড়াশোনা শেষে সেখানেই স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পাস করা মো . শাহরিয়ার । কথা হলে তিনি জানান , দেশে চাকরির নিশ্চয়তা কম । এ ছাড়া যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিও পাওয়া যাচ্ছে না । তাই সব মিলিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি । বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ( বিবিএস ) পরিচালিত সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বলছে , ২০২৪ সালে দেশে মোট ২৬ লাখ ২৪ হাজার বেকার ছিলেন । তাঁদের মধ্যে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ছিলেন স্নাতক ডিগ্রিধারী । ভিসার আবেদন জমা দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট থেকে পাস করা জহির রায়হান জয়ের সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর বাবা তবিরুল রায়হান ।
উচ্চশিক্ষার জন্য ছেলেকে বিদেশে পাঠানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন , ‘ দিন দিন আমাদের পড়ালেখার মান কমে যাচ্ছে । এ তো সবাই জানে । তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি , ছেলেকে বিদেশে পড়তে পাঠাব । পড়াশোনা শেষে যেন সে সেখানেই চাকরি পায় । ” সম্প্রতি উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপের দেশ সুইডেনে গিয়েছেন সাইম আখন্দ । উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশকে বেছে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সেখান থেকে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান , বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী নয় , বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার মতো নয় । এ জন্যই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা ।
উচ্চশিক্ষার জন্য মেধাবীদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ার পেছনে পাঁচ কারণের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড . মো . আলী জিন্নাহ । তাঁর মতে , এই কারণগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু ছোটখাটো কারণ থাকতে পারে । আলী জিন্নাহ বলেন , রাজনৈতিক অস্থিরতা তো আছেই , ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি , কর্মসংস্থানের ঘাটতি , উপযুক্ত সম্মান , মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকা , বসবাসের অনুপযুক্ততা , জীবনমান নিম্নমুখী হওয়া — এমন বহুমাত্রিক কারণে দেশ ছাড়ছেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা । মেধাবীদের দেশে রাখতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক । একই ভাষ্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদের । তিনি বলেন , “আমাদের শিক্ষা - দীক্ষার অবস্থা খুবই শোচনীয় । যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মসংস্থানেরও ঘাটতি রয়েছে । এগুলোই প্রধান কারণ । এ ছাড়া রাজনৈতিক , সামাজিক নানান সংকট তো রয়েছেই । ' বছরে বিদেশে যান অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থী ইউনেসকোর সর্বশেষ ‘ গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস ' শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে , ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫৫ টি দেশে পড়াশোনার জন্য গেছেন ৫২ হাজার ৭৯৯ শিক্ষার্থী । ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ১৫১ আর ২০২১ সালে ৪৪ হাজার ৩৩৮ জন । এ সংখ্যা ২০১৩ সালে ছিল ২৪ হাজার ১১২ জন । তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় , ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থী বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি । সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন , এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে ।
অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো . জুলফিকার আলী জুয়েল বলেন , ইউনেসকোর যে পরিসংখ্যান , তার চেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেছেন । রাজধানীতে আইইএলটিএস ও জিআরই কোচিং করায় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিড় বাড়া দেখেই বোঝা যায় , শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ কতটা । বর্তমানে অনলাইনেও বাড়ছে ইংরেজি শেখা ও আইইএলটিএস , টোয়েফল , জিআরই এবং বিভিন্ন দেশের ভাষা শেখার আগ্রহ । রাবেয়া তানহা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন , “ দেশের অনিরাপদ পরিবেশ আমাকে খুবই ভাবাচ্ছে । তাই বিদেশে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । ' বৈধ পথেই ৯ বছরে গেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা বিগত ৯ অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে , দেশে উচ্চশিক্ষা বাবদ ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো টাকার পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে , ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশিদের বিদেশে শিক্ষার ব্যয় ছিল ৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলার , যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ । বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় করা এই অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ৭৬ কোটি টাকা ( প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে ) । একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৩ কোটি ৩২ লাখ , ২০২২- ২৩ অর্থবছরে ৫২ কোটি ৮ লাখ , ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১ কোটি ৪৫ লাখ , ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ কোটি ৩১ লাখ , ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১ কোটি ৮০ লাখ , ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৬১ লাখ , ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৭ লাখ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৪ লাখ ডলার বৈধ চ্যানেলে নিয়ে গেছেন শিক্ষার্থীরা ।
টাকা বেশি যাচ্ছে অবৈধ পথে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সাধারণত ভর্তি ফি , এক সেমিস্টারের টিউশন ফি এবং বাসস্থান ও অন্যান্য ফি ইত্যাদি দিয়ে বিদেশে পড়তে চলে যান । এ টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে দুটি পথ — একটি ব্যাংকিং চ্যানেল , অন্যটি অবৈধ পথ হুন্ডি । একাধিক স্টুডেন্ট কাউন্সেলিং ফার্মের কর্ণধার এবং একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন , বৈধ পথে বা ব্যাংকের মাধ্যমে যত টাকা যায় , তার চার - পাঁচ গুণ টাকা অবৈধ পথে যায় । এ ছাড়া উচ্চশিক্ষার অর্থ পাঠানোর নামে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে । গত ১০ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন , একজন তাঁর সন্তানের টিউশন ফি হিসেবে এক সেমিস্টারেই ৪০০-৫০০ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন ।
হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে একটি কাউন্সেলিং প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জানান , কোনো শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনার জন্য যেতে চাইলে স্থানীয় ব্যাংকে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় । অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ( বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে ) বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ফি পরিশোধ করা হয় । অনেক ক্ষেত্রে আয়ের উৎস জানাতে অভিভাবকের অনীহা থাকে । ফলে তাঁরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান । আবার অনেকে কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে আর কিছু হুন্ডিতে পাঠান । আবার অনেকে টাকা পাচারের জন্যও শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে । সম্প্রতি কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে গেছেন ঢাকার ধানমন্ডির এক তরুণ ।
তিনি জানান , বৈধ পথে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচই আনা সম্ভব হয় । এর বাইরে আরও অনেক খরচ রয়েছে । হুন্ডির মাধ্যমে এই টাকা আনা অনেক সহজ । ওই তরুণ বলেন , তাঁর পরিচিত এক কনসালট্যান্ট ফার্মকে নগদ টাকা দিয়েছেন , তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেছে । বিষয়টি নজরে আনা হলে অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো . জুলফিকার আলী জুয়েল অবশ্য বলেন , ‘ আমাদের সদস্যদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছি , এ ধরনের বেআইনি কাজ যেন কেউ না করে । এতে দেশের ক্ষতি হয় । ’
প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় , বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী । রাজধানীতে গড়ে ওঠা একাধিক কনসালট্যান্সি ফার্ম এসব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে । ভুক্তভোগী গগীরা বলছেন , সরকারের মনিটরিং না থাকা এবং বিদেশ গমনে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় প্রতারক চক্রগুলো এখন লাগামহীন । অনুসন্ধানে জানা যায় , চটকদার প্রচারণার মাধ্যমে অসাধু এজেন্সিগুলো প্রধানত তিন ধরনের প্রতারণা করে । এগুলো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপ্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ রাখা এবং বিদেশে না পাঠানো , আগ্রহী প্রার্থীদের ভুয়া কাগজ তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করা এবং ভিসা করে বাইরে পাঠিয়ে প্রতিশ্রুত সুযোগ - সুবিধা না দেওয়া ।
এরই মধ্যে গত বছরের ১৭ অক্টোবর ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান মো . খায়রুল বাশার বাহার এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা । পরে গত ১৪ জুলাই খায়রুল বাশারকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ।
ভিসা
ভিসাপ্রাপ্তিও কঠিন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন , জটিলতায় ইউরোপের অনেক দেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন কঠিন হয়ে পড়েছে । কারণ , ইউরোপের বেশ কিছু দেশের ভিসা নিতে শিক্ষার্থীদের ভারতে যেতে হয় । কিন্তু এখন ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়া কঠিন হওয়ায় ইউরোপে যাওয়া জটিল হয়ে পড়ছে । এর বাইরে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সারা বিশ্বের জন্য ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন । এ ছাড়া শুধু জার্মানিতে ভিসা আবেদনে ব্যয় হয় লম্বা সময় । জার্মান দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী , তারা বছরে দুই হাজার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে । কিন্তু এর বিপরীতে প্রায় ৪০ গুণ আবেদন জমা পড়ে জার্মান দূতাবাসে । যে কারণে এই ধীরগতি । ৮ অক্টোবর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো . তৌহিদ হোসেন বলেছেন , জার্মানিতে শিক্ষাব্যবস্থা খুবই উচ্চমানের এবং সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে । বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ফি লাগে না । কাজেই বাংলাদেশি ছাত্ররা খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়ার জন্য । ৮০ হাজার আবেদন পড়েছে । পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন , জার্মান রাষ্ট্রদূত কয়েক দিন আগে চলে গেছেন । তিনি বলেছিলেন , “ দেখুন , আমার কিছুই করার নেই । কারণ , আমার মোট সামর্থ্যই হচ্ছে দুই হাজার কেস প্রতিবছর ডিল করা । তার মানে , এত আবেদন তাঁরা গ্রহণ করতে পারবেন না । '
দেশে কমছে বিদেশি শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ( ইউজিসি ) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী , ২০২৩ সালে দেশের ৫৩ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৩৩ জন । তাঁদের মধ্যে ছাত্রী ১৭১ ও ছাত্র ৪৬২ । ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬৭০ জন । সেই হিসাবে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী কমেছে ৩৭ জন ।