১৯৮১ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮২ সালে বিএনপির একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে যাত্রা শুরু করেন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে তিনি দলের চেয়ারপারসন। অন্যদিকে ১৯৭৫ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আবার ২০১৯ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর সংসদে টানা বিরোধী দলের প্রধান হিসেবে ছিলেন রওশন এরশাদ।
বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুধু নির্দিষ্ট সংখ্যা পূরণ করার জন্য তো রাজনীতি না, একজন নারীকে অবশ্যই তাঁর যোগ্যতা প্রমাণ করে রাজনীতিতে আসতে হবে। সেই বিবেচনায় আগে আমাদের দেশের অসুস্থ রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান একটি মাইলফলক সৃষ্টিকারী আন্দোলন।
এনসিপির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এদিক থেকে এনসিপি যথেষ্ট এগিয়ে আছে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব নেই বলে বারবার আলোচনা-সমালোচনা করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে জামায়াতে ইসলামী সব সময় দাবি করে আসছে, তারা নির্ধারিত শর্তের বেশি অর্থাৎ ৪৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব পূরণ করেছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আহসানুল মাহবুব জুবায়ের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যদিও আমরা আমাদের নির্ধারিত শর্তের বেশি নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছি, তবু আমরা সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে রাজনীতিতে অগ্রাধিকার দিই। আমরা আমাদের তৃণমূল থেকে সব নেতাকর্মীর মতামতের ভিত্তিতে ঠিক করি কে কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। সে ক্ষেত্রে নারী বা পুুরুষ বিবেচনায় আসে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজনীতিসচেতন নারীর সংখ্যা খুব কম। তবে এটি ক্রমবর্ধমান রয়েছে এবং আরো বাড়বে।’
তবে রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব যেটুকু আছে সেটিকে আলংকারিক বলছেন বিশ্লেষকরা। প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারণে নারী নেতৃত্বের মতামত কতটুকু প্রাধান্য পায় তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমাদের এনসিপি অ্যাকশন এবং পারসেন্টেজ—এই দুই জায়গায় অন্য দলের চেয়ে এগিয়ে আছে। এই দলে যাঁরা আছেন তাঁরা রাজনৈতিকভাবে নিজেদের যথেষ্ট যোগ্যতা প্রমাণ করছেন। এত পরিমাণ যোগ্যতাসম্পন্ন নারী আপনি অন্য কোনো দলে পাবেন না।’
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরিন পারভীন হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের সমাজ অনেক দিক থেকে পরিবর্তন হলেও এখনো পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। পুরুষরা এখনো নারীদের পিছিয়ে রাখতে চায়। নারীদের নিয়ে বৈষম্য তৈরি করে। যেখানে জুলাই আন্দোলনে আমাদের নারীরাই ছিল সবার সামনে, সেখানে আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে নারীদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হলো, যেন তারা ছিলই না। ঐকমত্য কমিশন গঠন হলো, জুলাই সনদ স্বাক্ষর হলো, অথচ কোথাও নারীদের নিয়ে কোনো কথা নেই। কোনো রাজনৈতিক দল যদি রাজনীতি করার জন্য নারীদের নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে না দেয়, তাহলে সেই দলে নারী থাকবে কিভাবে! যখন নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন করা হলো, তখনকার জনসংখ্যা আর এখনকার জনসংখ্যা আকাশ-পাতাল তফাত। অথচ সংরক্ষিত আসনে কোনো পরিবর্তন নেই। এ ধরনের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব বজায় রাখলে একটি রাষ্ট্রে রাজনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়বে তা আশা করা যায় না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলে পুরুষদের যেমন সামনের সারি থেকে রাজনীতি করতে দেখা যায়, নারীদের তেমন দেখা যায় না। শুধু দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নারী সদস্য রাখলাম কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তাঁদের অগ্রণী ভূমিকায় রাখা হলো না, তাহলে তো নারী নেতৃত্ব তৈরি হবে না। আমাদের নারীরা শিক্ষায়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও পলিসি মেকিংয়ে এখনো পিছিয়ে আছেন। দলে কজন নারী আছেন, তার চেয়েও জরুরি কজন দলের হয়ে রাজনীতি করতে পারছেন।’
গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে দেখা গেছে। তৌহিদি জনতার নামে নারীদের পোশাক নিয়ে মোরাল পুলিসিং, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর নারীদের নিয়ে যা ঘটেছে তাতে নারীদের রাজনীতিতে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলাটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা তাদের কর্মীদের জন্য একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উচিত আগে তাদের নারী নেতৃত্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’