অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি জিতলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে প্রশ্ন করা হয় দলটি যদি আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়, তবে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।
জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন এবং নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত মনে করেন, তাহলে অবশ্যই তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন। তবে যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই প্রধানমন্ত্রী হবেন— এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া অংশ নেবেন কি না— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে তার শারীরিক অবস্থার ওপর। যদি স্বাস্থ্য ভালো থাকে, নিশ্চয়ই অংশ নেবেন। আর যদি না থাকে, তাহলে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে বিএনপি। দলটি এবার মাঠের পাশাপাশি ডিজিটাল দুনিয়াতেও সমানভাবে সক্রিয় হতে চায়। সে লক্ষ্যেই গঠন করা হচ্ছে নতুন একটি অনলাইন ও তৃণমূলভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম— ‘বাংলাদেশ গ্রাসরুটস নেটওয়ার্ক’ (বিজিএন)।
এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিএনপি তাদের তৃণমূলের শক্তিকে সুসংগঠিত করবে এবং অনলাইন প্রচারকে আরও জোরদার করবে। একই সঙ্গে অপপ্রচার মোকাবিলায় কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলাই এর অন্যতম উদ্দেশ্য। বিজিএন গঠনের প্রস্তাব এরই মধ্যে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর অনুমোদিত হয়েছে। দলটির পরিকল্পনা অনুযায়ী, খুব শিগগির সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার ১৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। প্রত্যেক কেন্দ্রীয় নেতা ২০টি আসনের সমন্বয় করবেন। বিজিএনের অধীনে দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনে দুজন করে মোট ৬০০ স্নাতক পাস অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। এই অ্যাক্টিভিস্টরা সরাসরি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করবেন এবং নিয়মিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। তাদের প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে সম্মানী দেওয়া হবে। বিজিএন স্থায়ী কমিটিতে নিয়মিত রিপোর্ট জমা দেবে, যা দলের নীতিনির্ধারণী আলোচনায় ব্যবহৃত হবে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য অ্যাক্টিভিস্টদের সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী জমা পড়েছে এবং সেখান থেকে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৮ অক্টোবর বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বৈঠকে বিজিএনের কাঠামো ও কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দলটির ধারণা, এই নতুন উদ্যোগ শুধু তৃণমূল স্তরে সাংগঠনিক সক্ষমতা বাড়াবে না, একই সঙ্গে অনলাইন স্পেসেও ‘বট বাহিনী’র প্রভাব মোকাবিলায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। বিএনপির লক্ষ্য হলো— নির্বাচনী প্রচারে অনেক আগেই দলের বার্তা দেশের প্রতিটি প্রান্তে এবং অনলাইন মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে পৌঁছে দেওয়া।
বিএনপির তথ্য অনুযায়ী, বিজিএনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রাথমিকভাবে ১৫ নেতা থাকবেন, প্রয়োজনে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই সংগঠনের সব কার্যক্রম তদারকি করবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মাঠ পর্যায়ের কাঠামো— দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে দুজন করে অ্যাক্টিভিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। তারা হবেন তৃণমূল পর্যায়ে বিজিএনের মূল চালিকাশক্তি।