
জামায়াতের অন্যতম শীর্ষ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছেন, আজ থেকে ৩৬ বছর আগে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফমূলা দিয়েছিল। এ ফর্মুলায় তিনটি নির্বাচন হয়েছিল। এরপর এ ফর্মুলাকে বাদ দেওয়া হয়। এতদিন পরে এসে আজও সবাই মনে করছে, এটাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে তৃতীয় দিনের আপিল শুনানি শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করলেই বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। যে প্রক্রিয়ায় এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দেওয়া হয়েছে, তা ছিল পরিপূর্ণভাবে পূর্বপরিকল্পিত নকশার আলোকে। এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ করতে চায়নি। এক ব্যক্তির ইচ্ছায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে দেশে একনায়কতান্ত্রিক শাসন কায়েম করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, এর ফলে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে বড় ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গেছে। আবার আমরা এখন আলোচনা করে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। যদি নির্বাচন ব্যবস্থাকে সঠিক নিয়মে দাঁড় করাতে হয়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলার মধ্যেই যদি আমরা যেতে পারি; এটি হবে আমাদের জন্য জাতিগতভাবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মাধ্যম। ইতোমধ্যে ঐকমত্য কমিশন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান নিয়ে জুলাই সনদে একটি নতুন বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামীতে আদালত যে আদেশই দেয় না কেন, তা যেন জুলাই সনদের সঙ্গে বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জুলাই সনদে যে আলোচনা হয়েছে, তার সঙ্গে মিল রেখে হয়। নইলে সংস্কার প্রক্রিয়া অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।
এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৬ অক্টোবর একটি আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এছাড়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
পররে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর একটি আবেদন করেন।