
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসাবে আব্দুল ওয়ারেছ আলীর নাম ঘোষণার পর তিনি চষে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। বিএনপির পাঁচজন সম্ভাব্য প্রার্থী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের মন জয় করতে চেষ্টা করছেন।
যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদীবেষ্টিত দুই উপজেলা সাঘাটা ও ফুলছড়ি। এ দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসন। এখানে নদীভাঙনের কারণে বেশির ভাগ ইউনিয়নের জনপদ এখন চরাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। নদীভাঙনের হাত থেকে জনপদ ও চরাঞ্চলের মানুষকে যারা রক্ষা করতে এগিয়ে আসবেন তাদেরই ভোট দেবেন বলে জানান।
আসনটি দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। ২০০৮ সালে অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া জাতীয় পর্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তারপর নৌকার টিকিটে নির্বাচন করে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে নেন। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ক্ষমতার সময়ে তিনি অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে মাঠে নামতে দেননি। এলাকার উন্নয়নে ও সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তেমন কিছু করেননি। পরবর্তীকালে তার মৃত্যুর পর এ আসনে উপনির্বাচনে নৌকার প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। তিনিও ফজলে রাব্বীর পথ অনুসরণ করেন।
গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। ত্রয়োদশ নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন ঘোষণা করা হলে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসাবে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও গাইবান্ধা-৫ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য রোস্তম আলী মোল্লার ছেলে মাহমুদুন্নবী টিটুল, মোহাম্মদ আলী, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক আলম সরকার ও ময়নুল ইসলাম শামীম, কামরুজ্জামান সাইদী সোহাগের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের পক্ষে সমর্থন বাড়াতে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও সভা-সেমিনারে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে মাহমুদুন্নবী টিটুল বলেন, আমি দীর্র্ঘদিন ধরে রাজনীতির মাধ্যে আছি। আমার বাবা প্রয়াত সংসদ-সদস্য রোস্তম আলী মোল্লার ক্লিন ইমেজ ধরে রাখতে চাই। চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা পালন করতে চাই।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক আলম সরকার বলেন, আমি মাঠে কাজ করছি অনেক দিন আগে থেকেই। সাঘাটায় বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য দিনরাত মাঠে কাজ করেছি। ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে ভোটারদের কাছে গিয়েছি। তারা আমাকে পেয়ে খুশি। তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছি।
জামায়াতে ইসলামীর গাইবান্ধা জেলা সেক্রেটারি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়ারেছ আলীর নাম ইতোমধ্যেই একক প্রার্থী হিসাবে চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি নানা কৌশলে ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করছেন। ভোটারদের অনেকেই বলেন, এ আসনে বিএনপির ভোটার সংখ্যা বেশি হলেও জামায়াতের প্রার্থীকে বাদ দিয়ে কোনো হিসাব হবে না। জামায়াত প্রার্থীকে হিসাবে রেখেই বিএনপিসহ অন্য দলগুলোকে ভোটারদের মন জয় করতে হবে। এ আসনে পার্টির প্রার্থী হিসাবে কেন্দ্রীয় নেতা আতাউর রহমান সরকার আতা ও অ্যাডভোকেট গোলাম শহীদ রঞ্জু নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছেন বলে জানান। এ ছাড়া প্রার্থী হিসাবে গাইবান্ধা জেলা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ইতোমধ্যেই পোস্টার, ব্যানার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে জানান দিচ্ছেন।