
ফরিদপুরের মাটিতে আওয়ামী দুঃশাসনের আমল নতুন রূপে শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। বলেছেন, ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে এসেও অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে ফরিদপুরের পুলিশ প্রশাসন এসব আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
ফরিদপুর সদর আসনে অপপ্রচারের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা বিএনপি, মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের লিয়াকত হোসেন মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য একে আজাদ (আব্দুল কাদের আজাদ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং তার মিডিয়ায় বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী চৌধুরী নায়াব ইউসুফের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্য ও অভিযোগের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলন শেষে একটি মিছিল প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক প্রতিবাদলিপি জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নায়াব ইউসুফ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৯ অক্টোবর কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের পরমানন্দপুর বাজারে পূর্বঘোষিত ৩১ দফার প্রচারপত্র বিতরণের সময় সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা একে আজাদের সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত হন।
তিনি আরও বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত যুবলীগ, ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে আপত্তিকর ভাষা ও স্লোগান দিয়ে আমাদের (বিএনপির) নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হওয়ায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থিত জনতা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন, একপর্যায়ে উৎসুক জনগণ তাদের ঘটনাস্থলে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। সেই সময় সেখানে থাকা বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রশাসনের সাহায্যে একে আজাদসহ তার সফরসঙ্গীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় এক বালক ছেলে যে আমাদের দলের কেউ না- সে আখ বা স্থানীয় গেন্ডারি (আখ) দিয়ে গাড়িতে একটি হালকা আঘাত করে এবং সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নেতাকর্মীরা তাকে নিবৃত্ত করেন। আক্রান্ত গাড়িটিকে সেই স্থান ত্যাগ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নায়াব ইউসুফ বলেন, একে আজাদ আমাকে দোষারোপ করে তার নিজস্ব টিভি চ্যানেল ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার নামে (চৌধুরী নায়াব ইউসুফ) মিথ্যা অপপ্রচার করে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এটি তার নিছক একটি নির্বাচনী অপকৌশল বলে মনে করি।
তিনি বলেন, এসব মিথ্যা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথা বলে জনগণের মধ্যে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে তিনি তার নিজস্ব গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে এবং প্রশাসনের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে এবং আমাদের দলের নেতাকর্মীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেন।
তিনি আরও বলেন, গত দুই দিন যাবত আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভয়ভীতির সৃষ্টি করছে- যেমনটা অতীতে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা বিএনপির নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করতেন।
নায়াব ইউসুফ বলেন, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে ফরিদপুরের মাটিতে আওয়ামী দুঃশাসনের আমল নতুন রূপে শুরু হয়েছে। ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে এসেও অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে ফরিদপুরের পুলিশ প্রশাসন এসব আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগ ফরিদপুর জেলা শাখার সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য একে আজাদসহ ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ, জুলফিকার হোসেন জুয়েল, আজম খান, তানভীর চৌধুরী রুবেল, অ্যাডভোকেট আলি আশরাফ নান্নু, দেলোয়ার হোসেন দিলা, জেলা বিএনপির সদস্য রশিদুল ইসলাম লিটন, এবি সিদ্দিকী মিতুল, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এএফএম কাইয়ুম জঙ্গি, সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বেনজির আহমেদ তাবরিজ, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ান বিশ্বাস তরুণসহ মহিলা দল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা, ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সদস্য এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের পর ঝাড়ু হাতে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি প্রেস ক্লাব থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে একাধিক মিছিলে নেতাকর্মীরা ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে এসে উপস্থিত হন।