Image description

রংপুরের ছয়টি সংসদীয় আসনের নির্বাচনি এলাকায় জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ায় দলটির কার্যক্রম কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। একই অবস্থা আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের দলগুলোরও। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপি ও জামায়াত জোরেশোরে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নির্বাচনি মাঠে শক্ত অবস্থান নিয়েছে জামায়াত। 

অপরদিকে, নেতৃত্বের লড়াইয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দলের আদর্শের চেয়ে নিজস্ব প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার নেতাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে। রংপুর মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপির জনপ্রিয়তা থাকলেও দলীয় কোন্দল ও শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ায় দলটির রাজনৈতিক শক্তি ক্ষয় হচ্ছে। জেলা কমিটি, মহানগর কমিটি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বে কোন্দল রয়েছে, যা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করছে। এমন মন্তব্য করেছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মী।

তবে সংকটের কথা অস্বীকার করে রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। দলে কোটি কোটি নেতাকর্মী রয়েছে। উপজেলা, মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটিতে দলীয় কোন্দল নেই। দল আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হয়েছে। তবে দলে কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকতে পারে। এগুলো সুরাহা করে দলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, দলকে গুছিয়ে নিচ্ছি। 

 

সামসুজ্জামান সামু বলেন, এরই মধ্যে মহানগর কমিটির অধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন।

নীরবে দলীয় কার্যক্রম সুসংগঠিত করে জামায়াত ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। রংপুরের সবকটি আসনে বিএনপির বিপরীতে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে জামায়াত।

জামায়াত নেতারা বলছেন, আগে সাধারণ মানুষের মধ্যে যারা জাতীয় পার্টির প্রতি সহানুভুতিশীল ছিলেন তারা এখন জামায়াতে ইসলামের প্রতি ঝুঁকেছেন। জামায়াতের আদর্শ-উদ্দেশ জেনে তারা দলটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছেন। আমরাও গুরুত্বসহ দেখছি। আগামী সংসদ নির্বাচনে তারাও আমাদের ভোট দেবেন বলে আমরা মনে করছি। 

তারা আরও বলেন, উত্তরাঞ্চলে আর জাতীয় পার্টির ভোট ব্যাংক নেই। রংপুরে আমাদের দলের মতো বিএনপি সুসংগঠিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি না।

জামায়াতের জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, আমাদের কাছে নির্বাচন একমাত্র মুখ্য নয়। দলকে শক্তিশালী করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আদর্শিক লড়াইয়ে রয়েছি। ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দলের সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আদর্শ নিয়ে কাজ করছেন। ব্যক্তি আমাদের কাছে মুখ্য নয়। দলের আদর্শই মূল ভিত্তি। তাই দলের ভেতর নেতৃত্ব নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।

অধ্যাপক গোলাম রব্বানী আরও বলেন, সব ধরনের অনুকূল-প্রতিকূল পরিস্থিতিতিতেও জামায়াতের কার্যক্রম চলমান থাকে। স্বৈরাচার আমলে অনেক নির্যাতন-অত্যাচার সহ্য করে দলের নেতাকর্মীরা টিকে ছিলেন। জামায়াত এখন আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা দলের আদর্শ সাধারণ মানুষের কাছে প্রচার করছি।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াসির বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে মব সন্ত্রাস চলায় গোটা দেশ নিরাপত্তাহীন ও ভয়ের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোনো বিচার নেই, আইনি সহয়তা নেই, পুলিশ প্রশাসনের মাঝে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থা আমরা লক্ষ্য করছি। তাই এ অবস্থায় আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছি। এ কারণে আমাদের সাংগঠনিক ভিত্তি কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবুও সীমিত পরিসরে আমরা দলের সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচিত হবেন। কোনো শক্তিই তা ঠেকাতে পারবে না।

 

১৯৯১ সাল থেকে রংপুরের ছয়টি আসনে জাতীয় পার্টির একক আধিপত্য বিরাজ করছেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়-রংপুর-১ আসনে (গংগাচড়া-সদর আংশিক) জাতীয় পার্টির প্রার্থী চারবার নির্বাচিত হন। তবে সর্বশেষ পাতানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত হন। রংপুর-২ আসনে (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) দুইবার বিএপি, একবার জাতীয় পার্টি, দুইবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে। রংপুর-৩ আসনে (রংপুর সদর) বরাবরই জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিতেছে।

সর্বশেষ নির্বাচনে জিএম কাদের নির্বাচিত হন। এ আসন থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ নির্বাচিত হতেন। রংপুর-৪ আসনে (কাউনিয়া-পীরগাছা) জাতীয় পার্টির করিম উদ্দিন ভরসা দুইবার নির্বাচিত হন। এছাড়া এ আসনে বরাবর আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী টিপু মুনশি নির্বাচিত হন। রংপুর-৫ আসনে (মিঠাপুকুর) জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুইবার, স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার ও বাকি সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত হন। রংপুর-৬ আসনে (পীরগঞ্জ) জাতীয় পার্টি প্রার্থী তিনবার নির্বাচিত হন। বাকি সময়ে সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী নির্বাচিত হন।