Image description

শাপলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশন-ইসি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যকার চাপা উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। শাপলা না পেয়ে গতকাল ইসির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এনসিপি নেতারা। শাপলা ছাড়া বিকল্প প্রতীক পছন্দের শেষ দিনে নির্বাচন কমিশনে এসে দলটির নেতারা বলেছেন, কোনো ধরনের ‘চাপিয়ে’ দেওয়া প্রতীক তারা নেবেন না। গতকাল ইসি সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এনসিপির চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। এ সময় দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠির মধ্য দিয়ে শাপলা প্রতীকের বিষয়ে অনড় অবস্থানের কথা তুলে ধরে ইসির চিঠির জবাব দেন তারা।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান ইসির সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার যোগ্যতা নেই। আমরা দেখেছি যে নির্বাচন কমিশন একটি স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, এই সিদ্ধান্তগুলো আসলে চাপিয়ে দেওয়া। বর্তমান ইসির প্রতীক বরাদ্দের কোনো নীতিমালা নেই। ইসির মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে- ইসিতে প্রাতিষ্ঠানিক অটোক্রেসি তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান দলগুলোকে যে মার্কা দেওয়া হয়েছে, কোনো নীতিমালা নেই। আসলে রিমোট কন্ট্রোলটা অন্য জায়গায়। নির্বাচন কমিশন স্পাইনলেস (মেরুদন্ডহীন)।

তিনি আরও বলেন, শাপলা ছাড়া বিকল্প কোনো অপশন নাই। আমরা বিকল্প কেন নেব? এটার আইনগত একটা ব্যাখ্যা তো লাগবে। আমরা দেখেছি, এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যাখ্যা, কোনো কিছুই নির্বাচন কমিশন আমাদের দিতে পারেনি। এ মার্কার জন্য আমরা আমাদের জায়গায় দৃঢ় রয়েছি এবং আমাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে এই শাপলাকে অবশ্যই আমরা অর্জন করব।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দলের পক্ষ থেকে ইসির চিঠির জবাবে শাপলা দেওয়ার বিষয়ে চারটি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। আমরা শাপলা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।

বর্তমান ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না, সেই সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেড় কোটি মৃত ও প্রবাসী ভোটার রয়েছে তালিকায়। এটা সংশোধন করতে বলা হয়েছে। দলীয় কর্মকর্তা ও দুর্নীতিগ্রস্তদের সরাতে হবে। দলের পক্ষ থেকে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ এবং যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।

এদিকে সাংবিধানিক আইন ও বিধি অনুযায়ী প্রতীকের তালিকায় শাপলা না থাকায় এনসিপিকে সেই প্রতীক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল সিলেট পুলিশ লাইনসে নির্বাচনি দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আয়োজিত প্রশিক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, তাই আইনগতভাবে কাজ করে। আইনের বাইরে নির্বাচন কমিশন কোনো কাজ করে না। আইন ও বিধি অনুযায়ী এনসিপি যে প্রতীক চাচ্ছে সেটি দিতে পারছে না নির্বাচন কমিশন।

এ সময় নির্ধারিত তারিখে নির্বাচন হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে না হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এনসিপিসহ দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। দল দুটির প্রতীকসহ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে। নির্ধারিত তালিকা থেকে প্রতীক পছন্দ করতে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার এনসিপিকে চিঠি পাঠানোর পর ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেছিলেন, এনসিপি আগামী রবিবারের (গতকাল) মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা বিধির তফসিলে থাকা তালিকা থেকে প্রতীক বাছাই করে জানাতে ব্যর্থ হলে ইসি ‘নিজস্ব পদ্ধতিতে’ এনসিপিকে মার্কা বরাদ্দ দেবে। এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর এনসিপিকে তফসিলে থাকা ৫০টি প্রতীক থেকে ৭ অক্টোবরের মধ্যে মার্কা বেছে নিতে চিঠি দেয় ইসি।

 নির্ধারিত সময়ে এনসিপি পছন্দের প্রতীক বাছাই না করে বিধি সংশোধন করে ফের শাপলা বরাদ্দের দাবি জানায়। কিন্তু ইসি কাউকে শাপলা প্রতীক না দেওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে। ইসি বলছে, এনসিপি শাপলা দাবি করলেও প্রতীক তালিকায় না থাকায় তা বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। ইসির সিদ্ধান্তও বদলায়নি। এ পরিস্থিতির মধ্যে ইসির বেঁধে দেওয়া সময়ের শেষ দিন গতকাল নির্বাচন কমিশনে যান এনসিপির নেতারা। নির্বাচন ভবনে ইসি সচিবের সঙ্গে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাদের বৈঠক চলে।