Image description

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, শনিবার একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আমার একটা বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আমাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। আমি এটাকে স্বাগত জানাই, এভাবেই রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক চর্চা হওয়া উচিত। যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে তারা কথাগুলো বলেছেন। 

তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা সফল হবে না।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানী গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গত শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদের ঐতিহাসিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দুপুরের দিকে কিছু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার মাঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন করা হলে আমি বলেছিলাম, জুলাই যোদ্ধা নামে একটি সংগঠন আমাদের সঙ্গে ও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের একটা যৌক্তিক দাবি ছিল সেই যৌক্তিক দাবি পূরণের জন্য আমি নিজেও স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম ও কথা বলেছিলাম। সেটা ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সঠিকভাবে অ্যাড্রেস করেছেন এবং সংশোধন করেছেন। এরপরে তাদের অসন্তোষ থাকার কথা নয়। যেসব বিশৃঙ্খলা হয়েছে আমরা খোঁজ নিয়েছি, এটা তদন্তাধীন।

তিনি বলেন, দেখা গেছে, সেখানে জুলাই যোদ্ধাদের নামে কিছুসংখ্যক ছাত্র নামধারী, সেটা ইন্টারভিউতে আমি দেখেছি, কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক ঢুকেছে, সেটা ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী বলে আমি মনে করি। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী যে এখনো সব জায়গায় বিভিন্ন ফাঁকফোকর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে সেটা দৃশ্যমান হয়েছে। এখানে কোনো জুলাই যোদ্ধা, জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত কোনো সংগঠন বা কোনো ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে না। এটা ছিল আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, এই কথার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে আমি জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, সংগঠন ও শক্তিদের সম্মানিত করার চেষ্টা করেছি। যেন কোনোক্রমে কেউ যেন জুলাই যোদ্ধাদের এসব কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত করতে না পারে। তাদের সম্মানহানি না হয়। কারণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থান জাতীয় জীবনের জন্য শক্তি। সামনে এই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য তারা সমুন্নত রাখতে চাই। জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। জাতি বিনির্মাণ করতে চাই। সে জন্য আমরা সব সময় তাদের সম্মানের চোখে দেখছি, দেখবো, দেখতে হবে।

'জুলাই গণঅভ্যুত্থান জাতীয় জীবনের একটি লিডিং ফোর্স, ড্রাইভিং ফোর্স। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের মধ্যে কোনোরকমের কোনো কলঙ্ক দাগ স্থাপন হোক, তা আমরা কখনোই চাইতে পারি না। যে কোনো বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় সবাই যেন এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করেন, আমরা সবাইকে সেই আহ্বান জানাই,' যোগ করেন তিনি।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, আমার বক্তব্য কাটিং করে বিভিন্নভাবে অপব্যাখ্যা দেওয়া থেকে সব মহলকে বিরত থাকার জন্য আমি অনুরোধ জানাই।

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিএনপির ৪২২ জন নিহত হয়েছেন। আমরা ছবিসহ নেতাকর্মীদের তালিকা প্রকাশ করেছি। এই সংখ্যা আরও বেশি হবে, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। শহীদ হয়েছেন। দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপির যে ভূমিকা, যে সংগ্রাম, যে ত্যাগ, সেই রক্তের সিঁড়ি বেয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। এখানে শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর অবিরাম সংগ্রাম-আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে রক্তের সোপান তৈরি হয়েছে। 

বিএনপির এ নেতা বলেন, শাপলা চত্বরের যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেটা মনে রাখতে হবে। যে কোনো একটি রাজনৈতিক দল নয়, সব রাজনৈতিক দল, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অবদান রেখেছে, অবিরাম সংগ্রাম করেছে, তাদের সবার অবদানে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে একটা ফ্যাসিবাদী শাসকের পতন হয়েছে বলে যদি মনে করা হয়, তবে তা সঠিক নয়। 

তিনি আরও বলেন, এটা হচ্ছে ১৬ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলন ও সংগ্রামের ফসল। সুতরাং বিএনপিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা সফল হবে না।