
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা হয়ে গেছে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে ঝিনাইদহের নির্বাচনি আসনগুলোতেও। দলের সুনজর পেতে কেন্দ্র ও হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন মনোনয়ন প্রার্থীরা। একই সঙ্গে জনমত গঠন ও সমর্থন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে নানা কৌশলে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের নেতারা।
ঝিনাইদহ সদর (৪টি ইউনিয়ন ব্যতীত) ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নিয়ে ঝিনাইদহ-২ সংসদীয় আসন। এটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। সব দলই আসনটিকে নিজেদের দখলে রাখতে চায়। বিগত দিনে বিএনপির আধিপত্য থাকলেও এখানে জামায়াত বেশ শক্তিশালী। তবে বিগত ১৬ বছরের বিতর্কিত নির্বাচনগুলোতে ভোট দিতে না পারায় ঝিমিয়ে পড়েছিল তৃণমূল ভোটাররা। এবার তারা সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
এদিকে ঝিনাইদহ-২ সংসদীয় আসনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী নতুন প্রেক্ষাপটে ভোটারদের মানসিকতার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। সাধারণ ভোটাররা জানান, বিগত ১৬ বছরে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থী বাছাই করা তো দূরে থাক, নাগরিক হিসেবে নিজের ভোটও প্রয়োগ করতে পারেনি। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এবার দেশকে নতুন করে সাজানোর সুযোগ এসেছে। পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধ, সামাজিক বিশৃঙ্খলা নিরসনে আসন্ন নির্বাচনে নীরব ভোট বিপ্লবের ইঙ্গিত দিচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা।
তারা বলছেন, সামাজিক কারণে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সামনে চুপচাপ থাকলেও ভোটের দিন নীরবে পছন্দের যোগ্য, মেধাবী, সৎ ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকেই তারা বেছে নেবেন। পেশিশক্তি প্রদর্শনকারী, টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ ও অসৎ প্রভাবশালী প্রার্থীদের তারা ভোটের মাধ্যমেই জবাব দিতে চান।
ঝিনাইদহ-২ আসনে জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একক প্রার্থী থাকলেও বিএনপির মনোনয়নে পেতে আগ্রহী একাধিক প্রার্থী। জেলা বিএনপির সভাপতি ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. এম এ মজিদ, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক, ঝিনাইদহ কোর্টের পিপি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ এসএম মশিয়ুর রহমান, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ্বাস (ছোট মজিদ), কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাবলু, সাবেক এমপি মশিউর রহমানের ছেলে ড্যাব নেতা ও জেলা বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. ইব্রাহীম রহমান বাবু এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে জামায়াতের জেলা আমির অধ্যাপক আলী আজম মোহাম্মদ আবু বকর এরই মধ্যে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দলটির শক্ত অবস্থান রয়েছে হরিণাকুণ্ডু ও সদরের পশ্চিমাঞ্চলেও। সেক্ষেত্রে একাধিক প্রার্থীর ফাঁক দিয়ে জামায়াত আসনটি দখলে নিতে পারে বলেও ধারণা অনেকের।
সাবেক এমপি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে আমার ভুমিকা রাখার প্রয়োজন আছে। তাই আমি ঝিনাইদহ-২ আসনের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। জনগণ আমার সঙ্গে আছে বলেই আগামী সংসদ নির্বাচনে আমি অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। গত নির্বাচনে জনগণ আমার পাশে ছিল বলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও চরম প্রতিকূলতার মধ্যে আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম।
এছাড়া এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক তারেক রেজা এ আসন থেকে লড়তে পারেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একক প্রার্থী দলটির জেলা সভাপতি এইচএম মোমতাজুল করিমও লড়বেন এই আসনে। তবে সব মিলিয়ে এ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই ভোটের লড়াই হবে বলে ধারণা ভোটারদের।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. এম এ মজিদ বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দলকে সুসংগঠিত রেখেছি। এলাকার মানুষের বিপদে-আপদে সব সময় পাশে থেকেছি। বিশ্বাস করি, বিএনপি পরিশ্রমী ও জনগণের পাশে থেকে কাজ করা নেতাদের মনোনয়ন দেবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। আশা করি এবারো আমি দলীয় মনোনয়ন পাব।
জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আলী আজম মোহাম্মদ আবু বকর জানান, ভোটাররা বিগত সময়ে অনেক রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু দলগুলো ভোটারদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। তাই এবার আশা করছি তারা জামায়াতকেই বেছে নেবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা সৎ, যোগ্য ও তরুণ নেতৃত্বকে ভোট দেবে। সেক্ষেত্রে ঝিনাইদহ-২ আসনের ভোটাররা গণঅধিকারের প্রার্থীকে বেছে নেবেন বলে আশা করি।