
শাপলা প্রতীক ছাড়া এনসিপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে না এনসিপি। এমন কথা সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন এনসিপির একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব। নিবন্ধনপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দল হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতীক নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে টানাপোড়েনে জড়িয়েছে। আজ রোববার (১৯ অক্টোবর) প্রতীক পছন্দ করে জানিয়ে দেয়ার শেষ দিন হলেও, দলটি এখনো তাদের একমাত্র দাবি শাপলা প্রতীকেই অনড় রয়েছে।
ইসির পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক দলের জন্য নির্ধারিত প্রতীক তালিকায় শাপলা না থাকায় সেটি কোনোভাবেই বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নয়। কমিশন এনসিপিকে নির্দেশ দিয়েছে তালিকাভুক্ত প্রতীকগুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে। অন্যথায় কমিশন নিজ সিদ্ধান্তে প্রতীক বরাদ্দ দেবে বলে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শাপলা ছাড়া তারা নাকি নির্বাচনে যাবে না। আজ, ১৯ তারিখ, সম্ভবত তাদের শেষ সময়সীমা। যদি এনসিপি কালকের মধ্যে সম্মতি না দেয় বা বিকল্প প্রতীক না দেখায়, তাহলে নির্বাচন কমিশন প্রতীক প্রদানের মাধ্যমে এই ধাপ শেষ করবে। এমন পরিস্থিতিতে, আগের দিন এমন অনমনীয় মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে এনসিপি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হয়তো অংশ নেবে না। অনুমান করা যায়, তারা চাপ তৈরি করার জন্য আন্দোলন বেছে নেবে এবং বিভিন্ন ইস্যু উত্থাপন করবে। তবে কতটুকু এটি কার্যকর হবে এবং কতটুকু জনগণের সমর্থন পাবে, তা স্পষ্ট নয়। জুলাইযোদ্ধারা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, যদি দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তারা জেলায় জেলায় মহাসড়ক অবরোধ করবে। এটি সফল হবে কি হবে না, তা অনিশ্চিত।
এদিকে,এনসিপির পক্ষ থেকে শাপলার দাবি প্রথমে তোলা হয় গত জুনে নিবন্ধনের আবেদনের সময়। প্রাথমিকভাবে ‘কলম’ ও ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীক চাইলেও পরে দলটি শুধুমাত্র ‘শাপলা’ প্রতীকেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনে শাপলার সাতটি নমুনাচিত্র পাঠিয়ে আবারো আবেদন জানায় এনসিপি।
তবে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দেয়- নির্বাচনী প্রতীকের তালিকায় শাপলা না থাকায়, সেটি কোনোভাবেই বরাদ্দ দেয়া যাবে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শাপলা প্রতীক না পেলে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। আমরা পার্টি গঠনের পর থেকেই শাপলাকে প্রতীক হিসেবে চেয়েছিলাম। তখন কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু পদযাত্রা শেষ হওয়ার পর হঠাৎ করেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
সামান্তা বলেন, পদযাত্রার প্রথম ১৫ দিন মানুষ যেভাবে শাপলা প্রতীককে গ্রহণ করেছে, তা অভূতপূর্ব। আমরা যখন অফিশিয়ালি কাগজপত্র জমা দিই, সেদিন সোশ্যাল মিডিয়া ভরে যায় শাপলার ছবিতে। এই প্রতীক নিজেই এক জনপ্রিয় প্রতীক। শাপলা শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতীক নয়, এটি নমনীয়তা, সহজলভ্যতা এবং অভিযোজনক্ষমতার প্রতীক—যা আমাদের দলীয় দর্শনের সঙ্গেও মিলে যায়। আমাদের দলে যত তাত্ত্বিক ও জ্ঞানসমৃদ্ধ নেতা আছেন, অন্য কোনো দলে এত দক্ষ লোক নেই। ইসি যেসব যুক্তি দেখিয়েছে, আমরা তথ্যসহ সবকিছু খণ্ডন করেছি। এক পর্যায়ে তারা আর কিছু বলতে পারেনি।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইসি আমাদের এমন এক অবস্থায় নিয়ে গেছে, যেখানে শাপলা না পেলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো অর্থই থাকবে না। যদি শাপলার ওপর ‘হাত’ প্রতীক দেওয়া হয়, তাহলে পরবর্তীতে ধানের শীষ, তারকা, ঈগলসহ অন্যান্য প্রতীকও ঝুঁকিতে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, শাপলার অনেকগুলো নকশা আমরা জমা দিয়েছি। বিকল্প যা কিছু রয়েছে, তা আমরা শাপলার মধ্যেই খুঁজে নিতে চাই। অন্য প্রতীক আমাদের দেয়া হলে আমরা তা গ্রহণ করবো না। এর আইনি ও রাজনৈতিক প্রতিকার আমরা নেবো।
এর আগে নাগরিক ঐক্যও শাপলা প্রতীক চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। তবে এনসিপি দাবি করছে, নাগরিক ঐক্য যথেষ্টভাবে লড়াই করেনি, ফলে শাপলার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আখতার হোসেন বলেন, নাগরিক ঐক্য শুধু দাবি তুলেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। এনসিপি সেই লড়াই করে যাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আখতারুজ্জামান এর আগে জানিয়েছেন, নির্বাচনী বিধিমালায় শাপলা প্রতীক নেই। রোববারের মধ্যে তালিকাভুক্ত প্রতীক বেছে না নিলে কমিশন নিজ বিবেচনায় প্রতীক বরাদ্দ দেবে।
শীর্ষনিউজ