Image description

চারটি সংস্কার কমিটি ইতোমধ্যে সরকারের কাছে রিপোর্ট উপস্থাপন করেছে। বাকি সাতটি কমিটি এ মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে। সংস্কার নিয়ে নানা মহলে নানা আলোচনা হলেও সবার জিজ্ঞাসা নির্বাচনের রোডম্যাপ কবে। রাজনৈতিক দলগুলো সারা দেশে ইতোমধ্যে নির্বাচনি পরিবেশ তৈরিতে ব্যস্ত। সম্ভাব্য নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীরা যার যার আসনে জনসংযোগ করছেন। সরকারের ওপরও দেশি-বিদেশি চাপ দিন দিন বাড়ছে। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে, সেই বিতর্ক ছাপিয়ে এখন আলোচনা হলো নির্বাচনের রোডম্যাপ কবে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে চার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বাকিগুলো এ মাসে জমা দেবে বলে জানা গেছে। 

সূত্রমতে, দিন যতই যাচ্ছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিও তত বাড়ছে। ভোটাধিকার নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ এবং ভোটাররা। তাঁদের বক্তব্য আর কথাবার্তায় জোরদার হচ্ছে নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি। সংশ্লিষ্ট দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা মূলত নির্বাচনি রোডম্যাপের প্রতিই গুরুত্ব দিয়েছেন। নির্বাচন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ইস্যুতে লিখিতভাবে প্রস্তাবনা দিতে পারে কোনো কোনো দল। দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ বাদে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ভোটের তারিখ নিশ্চিত করতে বলছে। বর্তমানে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি চায় চলতি বছরেই নির্বাচন হোক। দলটি বলছে, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকলে জবাবদিহি বেশি থাকে। কাজেই নির্বাচন নিয়ে সঠিক রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

গতকাল রাজধানীতে এক সেমিনারে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনেকেই আশা করছেন ছয় মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সব পেরে যাবে, যা আসলে সম্ভব নয়। এজন্য আমরা নির্বাচনে বেশি জোর দিচ্ছি। আমাদের সংসদে কখনো গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি। আমরা চেষ্টা করে দেখি পারি কি না। তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়ে দুই বছর আগেই বলেছি। এজন্য ৩১ দফা আমরা দিয়েছি, অর্থনৈতিক সংস্কার ও রাজনৈতিক সংস্কার। আমরা রাজনৈতিক সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। অনেকে এ গণ অভ্যুত্থানকে বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করেন। আমি বলব এটা গণ অভ্যুত্থান। এজন্য আমরা রাজনৈতিক সংস্কারের কথা বলছি। 

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এ সরকারের ওপর প্রথম থেকেই চাপ ছিল একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের। কিন্তু নতুন সরকারের পাঁচ মাস অতিবাহিত না হতেই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। তবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, তাদের মতপার্থক্য থাকলেও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে তাঁরা আপসহীন দেশের রাজনীতি ও সংস্কার নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বিগত বছরে কেউ কিছু না বললেও এখন চলতি বছরে নির্বাচনের দাবি করছে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট করে রোডম্যাপ চাইছেন তাঁরা। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে আগামী ডিসেম্বরে কিংবা ২০২৬ সালের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট ঘোষণা চান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আগামী এক বা দেড় বছরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, দিন ক্ষণের তারিখ দিয়ে সংস্কার হবে না। প্রয়োজনীয় সংস্কার তো হওয়া উচিত। ভোট কেন্দ্রে মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরোপুরি ভালোভাবে কাজ শুরু করেনি।   

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তাই অন্তর্র্বর্তী সরকারের উচিত নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ দেওয়া। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এখন থেকেই নির্বাচনি প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, রূপরেখা এখনই দেওয়া দরকার। এটা তো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিশ্রুতি ছিল। আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব তিনি একটা রূপরেখা দেবেন।