গত ৫ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে সংসদ ভবন এলাকায় নিজের সরকারি বাসভবন থেকে বেরিয়ে যান দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরীর শারমিন চৌধুরী। একটি সাধারণ প্রাইভেট কারে করে সপরিবারে তড়িঘড়ি বের হন তিনি। এ সময় স্পিকারের জন্য বরাদ্দ গাড়ি ব্যবহার করেননি তিনি। সংসদ সচিবালয়ের পরিবহন পুল থেকে গাড়ি পাঠানো হলেও তিনি ওই গাড়ি ব্যবহার করেননি। গাড়িতে কয়েকটি লাগেজ ছিল বলে জানান স্পিকারের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্বামী ও কনিষ্ঠ সন্তান। তবে সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে তিনি কোথায় গেছেন তা জানা নেই তাদের।
স্পিকারের স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইন পেশায় ফার্মাসিউটিক্যাল কনসালট্যান্ট। অন্যদিকে ছোট ছেলে সৈয়দ ইবতেশাম রফিক হোসাইন ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজে আই.বি কোর্সে অধ্যয়নরত। দুই সন্তানের জননী ড. শিরীন শারমিনের বড় মেয়ে লামিসা শিরীন হোসাইন যুক্তরাষ্ট্রে ফাইন্যানসিয়াল অ্যানালিস্ট পদে চাকরি করছেন।
সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে সংসদের মতো লুটপাট চালানো হয় স্পিকারের বাসভবনেও। সেখানে গ্যারেজে থাকা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তালাবদ্ধ দরজা ভেঙে জনতা ঢুকে পড়ে স্পিকারের বাসভবনে। সেখানে ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাটও চালানো হয়। গণ অভ্যুত্থানের পর একটি হত্যা মামলায় ফেরারি তিনি। পুলিশ তাকে খুঁজছে। একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেও স্পিকারের অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি দেশে নাকি বিদেশে চলে গেছেন। গত ২৭ আগস্ট স্বর্ণশ্রমিক মুসলিম উদ্দিনকে হত্যার অভিযোগে শিরীন শারমিনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। রংপুর শহরের পূর্ব গণেশপুর এলাকার বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার (৩২) মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন শিরীন শারমিন চৌধুরী। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে সরকার পতনের ২৭ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন তিনি। অজ্ঞাত স্থান থেকেই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। এদিকে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, তার স্বামী, সন্তানসহ চারজনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা। এ সংক্রান্ত চিঠি দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিএফআইইউর চিঠিতে শিরীন শারমিন চৌধুরী, তার স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইন, তাদের ছেলে সৈয়দ ইবতেশাম রফিক ও মেয়ে লামিসা শিরীন হোসাইনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় স্পিকার নতুন সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। পাসপোর্ট কর্মচারীদের কাছে তার আঙুলের ছাপ এবং আইরিশ দিয়েছেন। তবে তিনি এখনো পাসপোর্ট পাননি।