
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আসন্ন এই নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন কৌশলে ইতোমধ্যে ভোটের মাঠে তৎপর হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা মাথায় রেখেই এবারের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তরুণদের বিশেষ গুরুত্ব দেবে দলটি। এমনকি ৫০ শতাংশ আসনে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতারা চূড়ান্ত মনোনয়ন পেতে পারেন। তথ্য মতে, দলটির হাইকমান্ড থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে প্রায় দেড় শতাধিক তরুণ প্রার্থী ভোটারদের ‘ডোর টু ডোর’ পৌঁছে গেছেন। এসব প্রার্থীদের মধ্যে দলের সুনজরে রয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী।
এ ব্যাপারে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা শীর্ষনিউজ ডটকমকে জানিয়েছেন, দেশের মোট ভোটারের এক-তৃতীয়াংশ তরুণ। তাছাড়া ২০২৪ সালের ‘জুলাই-আগস্ট’ গণঅভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থেকে লড়াই করেছেন দলের তরুণ নেতারা। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর দেশের রাজনীতিতে এক ধরণের গুনগত পরিবর্তন আবশ্যক হয়ে পড়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এবারের নির্বাচনে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একাধিকবার বলেছেন। বিএনপির নেতারা আরও জানান, এখন পর্যন্ত কাউকে সবুজ সংকেত দেওয়া না হলেও এবার প্রার্থী বাছাইয়ে দলের তরুণ নেতারাই এগিয়ে থাকবেন।
এদিকে সারাদেশে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে প্রচারণায় নেমেছেন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ও বর্তমান অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। তারা ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। তারেক রহমানের নির্দেশে আগামীর রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ঘোষিত বিএনপির ৩১ দফা তুলে ধরছেন। সরকার গঠন করলে বিএনপি কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তা বোঝাচ্ছেন। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে ক্ষুদামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মানের সবচেয়ে বড় অংশীদার হবে সাধারণ মানুষ, এই বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন এসব তরুণ প্রার্থীরা।
অনেক আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলেও পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন এসব তরুণ প্রার্থীরা। এ ব্যাপারে একাধিক তরুণ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেষমেষ দলের সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন সবাই। এটা নিয়ে কোন বিরোধ থাকবে না। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ারও সুযোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা পেয়ে বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা) আসনে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা নিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের দুয়ারে।
এ ব্যাপারে রাজীব আহসান জানান, ফ্যাসিবাদ বিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম। চরম নির্যাতন, অত্যাচার সহ্য করেছি। জেল খেটেছি। এখন দলের নির্দেশনা পেয়েই সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি। বিএনপি জনগণের দল। আগামী দিনে জনগণের সমর্থন নিয়েই বিএনপি সরকার গঠন করবে ইনশাআল্লাহ। সেই সঙ্গে দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে জয়ের ব্যাপারে একশভাগ আশাবাদী।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে প্রচারণায় নেমেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বর্তমান বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। তিনি সব শ্রেণী-পেশার ভোটারদের কাছে বিএনপির ৩১ দফা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করছেন। সাধারণ মানুষদের নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি ও তা বাস্তবায়নের কৌশল জানাচ্ছেন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে কিভাবে আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে তা তুলে ধরছেন।
এ ব্যাপারে শ্রাবণ জানিয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যনির্ভর। দলের নির্দেশেই তৃণমূলে কাজ করছি। মনোনয়ন পাব কিনা, নির্ভর করছে হাইকমান্ডের উপর। তবে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মেনে নেব।
পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া, কাউখালি, নেসারাবাদ) আসনে প্রচারণায় নেমেছেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা ও বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নুরুল আলম বিপ্লব। মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে শীর্ষনিউজ ডটকমকে তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেবে তরুণরাই। সেই ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে শুরু করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে চলেছি। সংগঠনকে ভালবেসে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছি। এখন দলের নির্দেশ মেনে কাজ করছি। স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণের বার্তা নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। আশা করছি, সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে হাইকমান্ড চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুণ নেতাদের তালিকায় আরও আছেন ব্যারিস্টার নওশাদ জামির, শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, মাহমুদুর রহমান সুমন, নিপুন রায় চৌধুরী, ইশরাক হোসেন, ইস্রাফিল খসরু, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, ফারজানা শারমীন পুতুল, মঞ্জুরুল ইসলাম রনি, সাঈদ আল নোমান, তানভীর আহমেদ রবিন, রিয়াজুল হান্নানসহ আরও অনেকে।
এদিকে বিএনপির হাইকমান্ড সূত্রে জানা গেছে, দলীয় পরিচিতির ঊর্ধ্বে সাধারণ জনগণ যাকে চাইবে সেই মনোনয়ন পাবে। এ ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজের তরুণ, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, সৎ ও জনপ্রিয়, সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন এবং বিগত ১৭ বছর ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন আন্দোলনে অবদান রাখাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ও সিনিয়র নেতা ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আগামীতে দেশ পরিচালনার ঝান্ডা থাকবে তরুণদের হাতে। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে দলের তরুণ নেতারা এগিয়ে থাকবে।
শীর্ষনিউজ