Image description

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি’ (গোপন ছাত্ররাজনীতি) নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে ছাত্রদল। তারা বলছে, বাংলাদেশে আর আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির কোনো বাস্তবতা নেই। তারপরও কোনো ছাত্রসংগঠন এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকলে মনে করা হবে, তারা একাত্তরের মতো আবারও বড় কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

আজ শনিবার বিকেলে ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ শীর্ষক কর্মসূচিতে মিছিল পরবর্তী সমাবেশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসব কথা বলেন নেতারা। ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ কর্তৃক সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যথাযথ বিচার, সন্ত্রাসীদের সাজা নিশ্চিত করা এবং ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালনকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে’ এই কর্মসূচি করেছে ছাত্রদল।

মিছিলপরবর্তী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আজকের এই কর্মসূচি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি।’

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেই ঐক্য বিনষ্টের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করে তিনি এর নিন্দা জানান। রাকিবুল বলেন, যে পর্যন্ত ছাত্রলীগের বিচার সম্পন্ন না হবে, যে পর্যন্ত সব ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার সুনিশ্চিত না হবে, তত দিন ছাত্রদল আজকের এই মার্চ ফর জাস্টিসের মতো রাজপথে অবস্থান নেবে।

ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার দাবি করে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে হামলায় জড়িত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। অবিলম্বে ছাত্রলীগের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে এবং জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তা দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের বিষয়েও তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ শীর্ষক কর্মসূচিতে মিছিলের পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে  সমাবেশ করেন নেতা–কর্মীরা
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ শীর্ষক কর্মসূচিতে মিছিলের পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেন নেতা–কর্মীরাছবি: আসিফ হাওলাদার

ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের সব ক্যাম্পাসে সহাবস্থান বজায় রেখে ছাত্ররাজনীতি অব্যাহত থাকবে, এই প্রত্যাশা করেন ছাত্রদলের সভাপতি। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব ছাত্রসংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য কেউ না কেউ ওই ঐক্যকে বিনষ্ট করছে। এই ঐক্যকে কেউ যাতে নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান তিনি।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ যে হামলা-নির্যাতন করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের সাড়ে পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো কোনো বিচারের ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। যাঁরা ফ্যাসিবাদকে মেধা-মনন দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, তাঁরাও ক্যাম্পাসগুলোতে বহাল তবিয়তে আছেন। ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত বিচার দাবি করেন তিনি।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন। আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান ও সহসভাপতি জহির রায়হান আহমেদ।

হাজারো নেতা-কর্মীর মিছিল

সমাবেশের আগে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ শিরোনামে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনসংলগ্ন ফটকের সামনের সড়ক থেকে ছাত্রদলের মিছিল বের হয় বিকেল পৌনে চারটার দিকে। এর আগে বেলা দুইটা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে আসতে শুরু করেন ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা। সেখানে তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

মার্চ ফর জাস্টিস’ শিরোনামে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনসংলগ্ন ফটকের সামনের সড়ক থেকে মিছিলটি শাহবাগ হয়ে শহীদ মিনারে যায়
মার্চ ফর জাস্টিস’ শিরোনামে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনসংলগ্ন ফটকের সামনের সড়ক থেকে মিছিলটি শাহবাগ হয়ে শহীদ মিনারে যায়ছবি: দীপৃু মালাকার

বেলা সাড়ে তিনটার পর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সারিবদ্ধভাবে সড়কে দাঁড়াতে শুরু করেন। এ সময় প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগ অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সেখানে জড়ো হন হাজারো নেতা-কর্মী। ঢাকার বাইরের কিছু জেলার নেতা-কর্মীও এতে যোগ দেন। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের অবস্থানের কারণে এক ঘণ্টার বেশি সময় এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে তৈরি হয় তীব্র যানজট।

মিছিলের সামনে অন্তত ৪০ জন পুলিশের একটি দল আগে থেকেই অবস্থান নিয়েছিল। বিকেল পৌনে চারটার দিকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলে ‘ষড়যন্ত্র হয়নি শেষ, সজাগ থাকো বাংলাদেশ’, ‘সাঈদ ওয়াসিম মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন, এই বাংলায় হবে না’, ‘ছাত্রদলের অঙ্গীকার, নিরাপদ ক্যাম্পাস’, ‘ভারত যদি বন্ধু হও, হাসিনাকে ফেরত দাও’—এমন বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।

মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছায় বিকেল চারটার কিছু পরে। সেখানে সমাবেশ শুরু হয় বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। সংগঠনের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম, ঢাকার সাত সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন ইউনিটের হাজারো নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন।