
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ, দুর্নীতি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে অসদাচরণ এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার গুরুতর অভিযোগে চাকরিচ্যুত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতা মুনতাসির মাহমুদের বিরুদ্ধে এবার কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিল তার দল।
রোববার এনসিপির দপ্তর সেলের সদস্য সাদিয়া ফারজানা দিনার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে দলের সকল প্রকার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মুনতাসির মাহমুদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নির্দেশে এই অব্যাহতি আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হয়েছে।
একইসাথে, কেন তাকে স্থায়ীভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে না, তার লিখিত ব্যাখ্যা নোটিশ প্রদানের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানের কাছে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চাকরিচ্যুতির নেপথ্যে জানা গেছে, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের উপ-পরিচালক হিসেবে মুনতাসির মাহমুদের নিয়োগ এবং কর্মকাণ্ড শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল। এ সংক্রান্ত দাপ্তরিক আদেশ ও ফাইলের কপি আমার দেশের হাতে এসেছে।
তার বিরুদ্ধে ওঠা সুনির্দিষ্ট দাপ্তরিক অভিযোগগুলো হলো: সোসাইটির নিয়ম লঙ্ঘন করে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ, পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও কোনো সাক্ষাৎকার ছাড়াই তাকে সরাসরি উপ-পরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া।
মাসিক ৮০,০০০ টাকা বেতনে তার এই নিয়োগকে সোসাইটির ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অফিসে অনুপস্থিতি ও শৃঙ্খলা লঙ্ঘন: যোগদানের পর থেকেই তিনি ডিজিটাল অ্যাটেন্ডেন্স সিস্টেমে হাজিরা দেয়া থেকে বিরত থাকেন। এ বিষয়ে দুইবার লিখিত নোটিশ (১৫ জুন ও ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) দেয়া সত্ত্বেও তিনি অমান্য করেন, যার ফলে তার বেতন-ভাতাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
আচরণবিধি ভঙ্গ করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড: রেড ক্রিসেন্টের আচরণবিধি অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের পদ গ্রহণ বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু মুনতাসির মাহমুদ এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক, ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রধান সমন্বয়কারী এবং বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন, যা ছিল সরাসরি আচরণবিধির লঙ্ঘন।
কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য ও মিডিয়ার অপব্যবহার: রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য ২২ জুলাই, ২০২৫ তারিখে সোসাইটির মহাসচিব কর্তৃক একটি অফিস আদেশ জারি করা হলেও তিনি তা অমান্য করেন। এর পাশাপাশি, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তিনি সোসাইটির বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করে আসছিলেন, যা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে অসদাচরণ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি: তিনি প্রায়শই অযৌক্তিক দাবি নিয়ে সরাসরি সোসাইটির মহাসচিব ও চেয়ারম্যানের সাথে অসদাচরণ করতেন। এমনকি, দাবি আদায়ের জন্য বাইরের লোক নিয়ে (মব সৃষ্টি করে) অফিসে বিশৃঙ্খলা তৈরির মতো গুরুতর অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।
সোসাইটির কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, একজন উপ-পরিচালকের এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠানের চেইন অব কমান্ড ভেঙে ফেলতে পারে এবং বিদেশি প্রতিনিধিদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে, যা আন্তর্জাতিক সহায়তায় পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মূলত এসব কারণেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় এবার তার রাজনৈতিক দলও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করল