
এনসিপিকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আপনাদের শাপলা না দিলে ধানের শীষ দেওয়া হবে না। এ ধরনের অযাচিত বিতর্ক তৈরি করে কেন আপনারা সময় নষ্ট, আরেক দিকে আমাদের প্রত্যেকের যে ঐক্যবদ্ধ স্পিড, সেই স্পিড নষ্ট করছেন?
তিনি বলেন, ছাত্রদের একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে ভালো কথা।
রিজভী বলেন, ধানের শীষ ৪৭ বছরের নির্বাচনের প্রতীক। তার আগে ছিল মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক দলের প্রতীক ছিল। পরে বিভিন্ন দল একত্র হয়ে যখন বিএনপি গঠিত হলো তখন এ প্রতীকটি বিএনপির নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে চলে আসছে। এটা যেন বাড়ির আবদারের মত যে, ছোট ভাই বলছে যদি এই চকলেট আমাকে না দেওয়া হয় তাহলে বড় ভাইকেও দেওয়া হবে না। ব্যাপারটা এরকম। যে তারা শাপলা না পেলে ধানের শীষও দেওয়া হবে না। ধানের শীষ আপনার জন্মের আগেই বিএনপির প্রতীক। সেই প্রতীক আপনারা কাউন্টার করছেন।
শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে গাজীপুর জেলা শহরের রাজবাড়ী মাঠে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও ফরম বিতরণ কর্মসূচি- ২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, অনেক সুরঙ্গ তৈরি করার চেষ্টা করছে। মাটি কেটে যেমন সুরঙ্গ তৈরি হয় সেই সুরঙ্গ তৈরি করার চেষ্টা করছে। যিনি পালিয়ে গেছেন পার্শ্ববর্তী দেশে তাকে যাতে ফিরিয়ে আনা হয়। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে গভীর চক্রান্ত চলছে, গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি আরও বলেন, যারা জনগণের কাছে ভীতির সঞ্চার করে, কোনো দুর্নীতিবাজ ও সমাজের মানুষ যাদেরকে আতঙ্ক মনে করে তারা বিএনপির সদস্য হবে না। তাছাড়া সবাই হবে। কারখানার শ্রমিক, মাঠের কৃষক, স্কুল শিক্ষক ও চাকরিজীবী যাদের রাজনীতি করার আইনগত অধিকার আছে তারা সবাই সদস্য হতে পারবে। শুধু অপরাধীরা সদস্য হবে না। এটা সুস্পষ্টভাবে আমাদের নীতিমালায় বলা আছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে যারা ক্ষমতায় এসেছেন তারা শুধু কালোবাজারি করেই লিপ্ত ছিলেন না। তারা চোরাকারবারি করে লিপ্ত ছিলেন না, তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। তারা বাকশাল কায়েম করেছে। সমস্ত পত্রিকা বন্ধ করেছেন। কেউ যাতে টুশব্দ করতে না পারে। এটাই ছিল এ ১৭ বছরের ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার এবং তার বাবাও সেটি করেছে ৭২ থেকে ৭৫ সালে।
তিনি বলেছন, ন্যূনতস একটু সমালোচনা করলেই অনেক কালো আইন, অনেক কালাকানুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সন্ত্রাস দমন আইন, তার (শেখ হাসিনার) বাপের বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যেকটি আইন ব্যবহার করে তারা বিরোধী দলকে দমন করতে চেয়েছেন। মিথ্যা মামলায় শুধু নয়, দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলেন, অদৃশ্য করলেন, যেটাকে বলা হয় গুম। তারা আবার ক্রসফায়ার করলেন যেটা বিচার বহির্ভূত হত্যা। যশোরের উপজেলা চেয়ারম্যান-বিএনপি নেতা তার লাশ পাওয়া গেল গাজীপুরের শীতলক্ষ্যা নদীর ধারে। ইলিয়াস আলী তার বাসার সামনে থেকে অদৃশ্য হলেন। এভাবেই যুব সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, জনপ্রতিনিধি, এমপি, কাউন্সিলর কেউ বাদ গেল না। শেখ হাসিনা ভয়ে থাকতেন, যদি এদের সুযোগ দেই, তারা যদি মিছিল বের করে, তাহলে হয়তো তার অবৈধ ক্ষমতা আর থাকবেন না। এ ভয়ে তিনি তার পথের কাঁটা নিশ্চিহ্ন করার জন্যই বিরোধী দল বিএনপিকে টার্গেট করলেন এবং ১৭ বছর নিপীড়ন-নির্যাতন, অসংখ্য গুম, অসংখ্য বিচার বহির্ভূত হত্যা, মিথ্যা মামলা দিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি কারাগার ভরিয়ে দিয়েছে। মাসের পর মাস বছরের পর বছর আমাদের কেটেছে কাশিমপুর কারাগারে, পুরান ঢাকার কারাগারে, কেরানীগঞ্জ কারাগারে। এ পরিস্থিতির পর আমরা একটু আলোর মুখ দেখতে পেলাম।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ড. মোহাম্মদ ইউনূস একজন গুণীজন, তিনি আন্তর্জাতিক সম্মান বয়ে নিয়ে এসেছেন। ড. ইউনূস সাহেব অনেক অনেক ভালো পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমি অস্বীকার করি না। অনেক দিকে ভালো পদক্ষেপ নিচ্ছে কিন্তু সামগ্রিক দিক দিয়ে কেন সামাল দিতে পারছেন না? তার সভাপতিত্বে কালো আইন যেটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে খারাপ ধারাগুলো সেটা বাতিল করেছে, তিনি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আজকে যদি গ্রামাঞ্চলে বেগুনের কেজি ৩৫ টাকা হয়, সিমের কেজি ৪০ টাকা। আর ঢাকায় বিক্রি হয় ১২০ টাকা। এটা কেন হবে? কারণ এটা হয় এজন্য বারবার হাত বদল হয়, চাঁদাবাজি হয় রাস্তার মধ্যে চাঁদাবাজরা চাঁদা তুলে। শাক সবজির দাম শহরের বাজারে এসে চারগুণ, পাঁচগুণ হয়। ড. ইউনূস সাহেবের আমলে চাঁদাবাজ থাকার কথা নয়। অপরাধীরা কেন এখনো বিচরণ করবে? কেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারছেন না?
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার।
গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি'র সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি জাকির হোসেন নান্নু, গাজীপুর মহানগর বিএনপি সদস্য ও নবায়ন কার্যক্রম টিম প্রধান ডা. তৌহিদুর রহমান আওয়াল।