
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয় আমির নির্বাচন। এবারও নির্দিষ্ট সময়ে সে নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। ১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর চলবে ভোট গ্রহণ। দলের রুকনরা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করবেন আমির। কে হচ্ছেন নতুন আমির, দলের ভিতর-বাইরে এ নিয়ে চলছে নানান গুঞ্জন। এর মধ্যে আমির নির্বাচনে আলোচনায় উঠে এসেছে পাঁচ নেতার নাম। রুকনরা নতুন আমির নাকি বর্তমানের ওপরই আস্থা রাখবেন, জানা যাবে দীর্ঘ এক মাসের নির্বাচনপ্রক্রিয়া শেষে।
জামায়াতের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের আমির নির্বাচন প্যানেলে থাকছেন ডা. শফিকুর রহমান, সিনিয়র নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম।
জামায়াত সূত্র জানান, ১৫ অক্টোবর শুরু হবে দলের আমির নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। তবে ভোট শুরুর আগে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যরা আমির নির্বাচনে তিনজনের একটি সম্ভাব্য প্যানেল নির্ধারণ করবেন। ওই প্যানেল থেকে যে-কেউ নির্বাচিত হতে পারেন। তবে রুকনরা চাইলে এর বাইরের কাউকেও ভোট দিতে পারেন। যদিও দলটির রীতি অনুযায়ী সাধারণত ওই প্যানেল থেকেই একজন নির্বাচিত হয়ে থাকেন। প্যানেলের নামগুলো ভোট শুরুর আগ পর্যন্ত গোপন রাখা হয়। ভোট শুরু হলে প্রতিটি জেলায় দলের নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনীত প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা গিয়ে ভোট সংগ্রহ করেন। এ ভোটপ্রক্রিয়া ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এরপর গণনাসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। তখনই জানা যাবে কে হচ্ছেন নতুন আমির। সূত্র আরও জানান, সারা দেশে জামায়াতের ১ লাখ ৫ হাজারের বেশি রুকন (সদস্য) রয়েছেন। যাদের গোপন ভোটে আমির নির্বাচিত হন। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর নভেম্বরেই নতুন আমির শপথ গ্রহণ করবেন।
জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ১৫ নম্বর ধারায় আমিরে জামায়াত নির্বাচনের নিয়ম এবং ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আমিরে জামায়াতের নির্বাচনের জন্য বিদায়ি কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যগণ তিনজনের একটি প্যানেল নির্বাচন করবেন। তবে আমির নির্বাচনে প্যানেলবহির্ভূত যে কোনো সদস্যকে (রুকন) ভোট দেওয়ার অধিকার ভোটারগণের থাকবে। নির্বাচিত হওয়ার পর আমিরে জামায়াত কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা/কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ/কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণের উপস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট শপথ গ্রহণ করবেন।’
এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘এবারে নির্বাচনে ২০২৬-২৮ মেয়াদের জন্য নতুন আমির নির্বাচিত হবেন। জামায়াতের নির্বাচনে কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থী থাকেন না। মজলিসে শুরা মনোনীত তিন সদস্যের প্যানেল ঘোষণা করা হবে। রুকনরা এ তিনজনকে ভোট দেবেন। তবে রুকনরা চাইলে এ তিনজনের বাইরেও কাউকে ভোট দিতে পারেন। যিনি সর্বাধিক ভোট পাবেন তিনি আমির নির্বাচিত হবেন।’ জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান মাঠপর্যায়ে সক্রিয়তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে গতি ও মানবিক সহমর্মিতার কারণে দলে এবং সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্টের পর দলীয় কার্যক্রমে তাঁর ভূমিকা ইতিবাচকভাবে সবার নজর কেড়েছে। তিনি দলটির নেতৃত্বে আসার পর থেকে তাঁর দূরদর্শিতায় দলের অবস্থা ভালো হয়েছে। তাঁর সংস্কারমুখী ও যুগোপযোগী চিন্তাভাবনা ও কথা-কাজের কারণে ছোটবড় সব শ্রেণির মানুষের কাছেই তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বের কারণে দলের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে।
সে ক্ষেত্রে এবারও বৃহৎ স্বার্থে দলটির রুকনরা তাঁকেই নির্বাচিত করতে পারেন। তবে দলের অভ্যন্তরে বিকল্প ভাবনাও রয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর সদ্যঃকারামুক্ত সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের প্রতিও রয়েছে অনেকের সহানুভূতি। জানা যায়, ডা. শফিকুর রহমান ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর প্রথমবারের মতো আমির নির্বাচিত হন।
২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর প্রথম মেয়াদ। পরে ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর দ্বিতীয় মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি। এবার নির্বাচিত হলে এটি হবে তাঁর টানা তৃতীয় মেয়াদ।