
ভারতের সঙ্গে গত মে মাসে সংঘাতে ব্যবহৃত চীনা তৈরি অস্ত্রব্যবস্থার পারফরম্যান্সের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক (ডিজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী।
তিনি বলেন, এসব চীনা প্ল্যাটফর্ম ‘অসাধারণভাবে কার্যকর’ ছিল। পাকিস্তানি গণমাধ্যম দ্য নিউজ ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও নিউজ।
ইসলামাবাদ থেকে গত সপ্তাহে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল চৌধুরী বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সাম্প্রতিক চীনা সামরিক প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের সক্ষমতা অসাধারণভাবে প্রদর্শন করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব ধরনের প্রযুক্তির প্রতি উন্মুক্ত।’
গত মে মাসে চারদিনব্যাপী সংঘাতের সময় পাকিস্তান প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে আধুনিক চীনা অস্ত্রব্যবস্থা ব্যবহার করে। এর মধ্যে ছিল জে-১০সি যুদ্ধবিমান, যা দিয়ে পাকিস্তান একাধিক ভারতীয় যুদ্ধবিমান—এর মধ্যে ফরাসি তৈরি রাফালও রয়েছে—ভূপাতিত করার দাবি করে। সংঘাতের পর থেকেই এসব অস্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
ডিজি আইএসপিআর জানান, পাকিস্তান এখন পর্যন্ত সাতটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করার প্রমাণ দিয়েছে, যা এর আগে ছয়টি বলা হয়েছিল। এই সংখ্যাটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের সঙ্গেও মিলে, যিনি সম্প্রতি ভার্জিনিয়ায় এক সমাবেশে বলেন, ‘ওরা সাতটি বিমান নামিয়েছে,’ যদিও তিনি কোন পক্ষের কথা বলছেন তা স্পষ্ট করেননি।
অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য না করে গত শুক্রবার দেশটির বিমানবাহিনীর প্রধানের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করেন। ওই ভাষণে ভারত দাবি করে, সংঘাতে তারা প্রায় এক ডজন পাকিস্তানি বিমান ধ্বংস করেছে।
জেনারেল চৌধুরী বলেন, ‘পাকিস্তানের কোনো বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আমরা কখনোই তথ্য-উপাত্ত নিয়ে খেলিনি।’
চলতি বছরের আগস্টে পাকিস্তান ঘোষণা দেয়, তারা তাদের অস্ত্রভাণ্ডারে যুক্ত করেছে জে-১০এমই আক্রমণ হেলিকপ্টার, যা চীনের সীমান্ত পাহারায় ব্যবহৃত মডেলের অনুরূপ।
গত মাসে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি চীনের চেংদু শহরে যান এবং সেখানে জে-১০ যুদ্ধবিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।
চীনা অস্ত্র ব্যবহারে পাকিস্তান ভবিষ্যতেও অগ্রাধিকার দেবে কিনা—এই প্রশ্নে আইএসপিআর প্রধান বলেন, দেশটি চীন ও পশ্চিমা—উভয় উৎস থেকেই সরঞ্জাম ক্রয় করে। ‘আমাদের কৌশল সবসময়ই কার্যকর, দক্ষ এবং অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী প্ল্যাটফর্ম ও প্রযুক্তি গ্রহণ করা,’ তিনি বলেন।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান কোনো অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নেই। ‘আমাদের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় খুবই অল্প। আমাদের হাতে সীমাহীন অর্থের বিলাসিতা নেই,’ মন্তব্য করেন তিনি।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি)–এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যয় ছিল ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভারতের ব্যয় ৮৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। তবে জিডিপির অনুপাতে দুটি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রায় সমান—পাকিস্তানের ২.৭ শতাংশ, ভারতের ২.৩ শতাংশ।