Image description

ভোটের মাঠে আগে থেকেই 'বহিরাগত' ট্যাগ দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে ঘায়েল করে আসছেন দলের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। 

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে দলের মনোনয়ন চান ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তবে রুমিন ফারহানার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ৭ প্রার্থী। এ নিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে আশুগঞ্জের একটি রেস্তোরাঁয় তারা বৈঠক করেছেন। 

তারা বলছেন, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দার বাইরে কাউকে যেন ধানের শীষ প্রতীক না দেওয়া হয়, সেজন্য জোটবদ্ধ হয়েছেন তারা।

স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে আশুগঞ্জের একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠকে মিলিত হন বিএনপির ছয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া আরেকজন নেতা যুক্ত হন ভার্চুয়ালি। তারা হলেন- বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মো. শামীম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনিসুল ইসলাম ঠাকুর, আইন সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর তপু, জেলা বিএনপির সদস্য আহসান উদ্দিন খান শিপন, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন। এছাড়া বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এসএন তরুণ দে। মূলত আগামী নির্বাচনে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে ঠেকাতেই তাদের এ বৈঠক।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক বিএনপি নেতা জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপি থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে কাজ করছেন। তারা দীর্ঘদিন দলের পাশে ছিলেন, কারাভোগ করেছেন। গত ১৫ বছর নেতাকর্মীদের নিয়মিত খোঁজ নিয়েছেন। তারা সবাই আসনের স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু এখান থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সরাইল ও আশুগঞ্জের বাসিন্দা কিংবা ভোটার নন।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এতে বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। দুই ইউনিয়ন ভাগের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। আর বিপক্ষে অবস্থান জেলা বিএনপির সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব (শ্যামল) সহ স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী।

‘বিএনপির ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই মাঠে নেমেছিলেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। এখনো মাঠ দখলে আছে তার। তবে দলের ভেতরে একটি অংশ তাকে ‘বহিরাগত’ হিসেবে মনে করেন।

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বাবা ভাষাসৈনিক অলি আহাদ ছিলেন বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এখন সরাইলের শাহবাজপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিজয়নগর উপজেলা সদর উপজেলার অধীন ছিল। ২০১২ সালে সদর উপজেলার বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়নসহ ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে বিজয়নগর উপজেলার যাত্রা শুরু হয়। আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস হওয়ায় ‘বহিরাগত’ বলে তার বিরুদ্ধে যে প্রচারণা ছিল, তা কেটে গেছে বলে মনে করছেন অনেকে।

বিএনপির একটি গ্রুপের বহিরাগত বলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, সবচেয়ে বড় কথা আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক। বুধন্তি ইউনিয়নে আমার বাবার জন্মস্থান। বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়ন এখন সরাইলের সঙ্গে। তাছাড়া আমার বাবা ভাষাসৈনিক অলি আহাদ দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে হওয়া প্রথম নির্বাচনে এই এলাকা থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। আমার দাদা এক সময় ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্টার ছিলেন। এখনো পুরো সরাইল উপজেলায় আমার ১০০ বিঘার মতো পৈতৃক সম্পত্তি রয়েছে। সেখানকার শাহাজাদাপুর গ্রামে ৪৫০ শতক জায়গা রয়েছে। তাহলে আমি কিভাবে বহিরাগত হই? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

রুমিন ফারহানা বলেন, এটি বিএনপির আসন। সরাইল ও আশুগঞ্জে প্রতিটি জনসভাই প্রমাণ করে এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা কতটুকু। কয়েক দিন আগে সরাইলে আমার জনসভায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার লোকের সমাগম হয়েছিল। আমি প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন এলাকায় যাচ্ছি এবং সাধারণ মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

সরাইল উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান মাস্টার বলেন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরের ভোটার। বিজয়নগরের বুধন্তি তার আদি বাড়ি। বিজয়নগরের দুটি ইউনিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তাই তাকে আর কোনোভাবেই বহিরাগত বলা যাবে না।

সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপু জানান, ১৫ থেকে ১৬ বছর যারা দলের জন্য কাজ করেছেন, দীর্ঘদিন মাঠে ছিলেন, কারাবরণ করেছেন তাদের মধ্য থেকে একজনকে যেন দল মনোনয়ন দেয়। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আশুগঞ্জের একটি রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজ করেছেন। তারা কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছেন। তারা এ আসনের স্থায়ী বাসিন্দার বাইরে কাউকে চান না। যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক, তিনি যেন দুই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা হন। বিষয়টি তারা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের জানাবেন। তবে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাকে তারা মেনে নেবেন।