Image description

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগেই সংগঠনটিকে নতুন আমির নির্বাচন করতে হচ্ছে। এমন মুহূর্তে জনমনে কৌতুহল জেগেছে, কে হবেন এ দলটির পরবর্তী আমির? ডা. শফিকুর রহমান তৃতীয় মেয়াদে থাকছেন, নাকি আসছেন নতুন মুখ?

জামায়াত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডা. শফিকুর রহমান দলটির নেতৃত্বে আসার পর থেকে তার দূরদর্শিতায় দলের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সংস্কারমুখী ও যুগোপযোগী চিন্তা-ভাবনা ও কথা-কাজের কারণে ছোট-বড় সব শ্রেণির মানুষের কাছেই তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন এবং তাদের কাছে দলের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। এবারও বৃহৎ স্বার্থে দলটির রুকনরা (সদস্য) তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

তবে সম্প্রতি ডা. শফিকুর রহমানের হৃদরোগজনিত কারণে ওপেন হার্ট সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে তার চিকিৎসা চলমান। ফলে ডা. শফিকুর রহমানের শারীরিক অবস্থার ওপরেও নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া নির্ভর করছে। দলের নেতৃত্ব দেওয়ার মত সুস্থতা থাকলে তিনি ফের নেতৃত্বে আসলে দলের জন্য কল্যাণকর হবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীদের একটি অংশ। যদিও নির্বাচনের আগে অন্য দলগুলোর মতো জামায়াতের নেতা নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আন্দাজ করা কঠিন। কারণ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অভ্যন্তরীণভাবে সারা দেশের সদস্য বা রুকনদের ভোটগ্রহণসহ কয়েকটি ধাপের বিশাল এ কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করে দলটির আমির নির্বাচন করা হয়।

জানা গেছে, ডা. শফিকুর রহমান ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর রুকনদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে আমীর নির্বাচিত হন। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর ২০২০-২০২২ কার্যকালের জন্য আমিরে জামায়াত হিসেবে ১ম বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন তিনি। পরে ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর দ্বিতীয় বারের মতো আমির নির্বাচিত হন এবং ১৮ নভেম্বর ২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য ২য় বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন। এখন পর্যন্ত সংগঠনের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান ১৯৭৭ সালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। পরে সংগঠনটির সিলেট মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ও সিলেট শহর শাখার সভাপতির দয়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে জামায়াতে যোগদানের মাধ্যমে বৃহত্তর রাজনীতিতে পদার্পন করেন শফিকুর রহমান। এরপর সিলেট শহর, জেলা ও মহানগরে আমির হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি পদে আসীন হন। ২০১৬ সালে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, ব্রিটিশ উপনিবেশকালে ভারতের লাহোরে (বর্তমানে পাকিস্তান) মাওলানা মওদূদীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় জামায়াতে ইসলামী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও বর্তমান বাংলাদেশে আমির নির্বাচিত হয়েছেন ৬ জন নেতা। তাদের মধ্যে ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মাওলানা আবদুর রহিম, ১৯৬০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযম, ১৯৭৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আব্বাস আলী খান (ভারপ্রাপ্ত), ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মতিউর রহমান নিজামী, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মকবুল আহমদ এবং সর্বশেষ ডা. শফিকুর রহমান ২০১৯ ও ২০২২ সালে টানা দুইবারের মতো নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় কাউন্সিলের সদস্যদের সরাসরি গোপন ভোটে তিন বছরের জন্য আমির নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর আমিরে জামায়াত কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার নির্বাচিত সদস্য, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট শপথ গ্রহণ করেন।

‘জামায়াতের আমির কে হলে দলের জন্য কল্যাণকর হবে?’ এ প্রশ্নে ব্যক্তিগত মতামত জানতে চাইলে দলটির রাজধানীর এক থানা শাখার সেক্রেটারি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সারাদেশ থেকে ভোটের মাধ্যমে আমাদের আমির নির্বাচিত হবে। এ বিষয়ে আমাদের কথা না বলাই ভাল। তবে কর্মী হিসেবে বলতে পারি, দলের বৃহৎ স্বার্থে ডা. শফিকুর রহমান আসলে দলের জন্য ভাল হবে। কারণ, উনার নেতৃত্বে আমরা দলের অনেক অর্জন দেখতে পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমি যতদূর জানি, তাঁর শরীর ভাল নেই। যদি তিনি শারীরিকভাবে ফিট থাকেন বা নিজের প্রতি নিজে কনফিডেন্ট থাকেন তাহলে তিনিই আসতে পারেন। শরীর ভাল না থাকলে তো আসলে অন্য কেউ আসবেন। সংশ্লিষ্টদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করে আল্লাহ তায়ালা যাকে আমাদের জন্য পছন্দ করবেন, আমরা তাকেই সাদরে গ্রহণ করব।

তাছাড়া, প্রান্তিক পর্যায়ের জামায়াত নেতাকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলে তাদের মাঝে ডা. শফিকুর রহমানকেই নেতা হিসেবে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পরিলক্ষিত হয়েছে।

আমির নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমির নির্বাচনের সময়সীমা এ বছরের ডিসেম্বর। ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।

কারা প্রার্থী প্যানেলে আসতে পারেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আগাম বলা যাচ্ছে না। কারণ, ভোটের মাধ্যমে কে আসবেন সেটা আগেই কখনো বলা যায় না। এসব বিষয়ে বা সব অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সবসময় গঠনতন্ত্র মেনে কাজ করি আমরা।

তিনি বলেন, মজলিশে শূরার সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে প্রথমে তিনজনের একটি প্যানেল ঘোষণা করেন। এরপর নির্বাচনে তিনজনের যেকোনো একজনকে সদস্যরা ভোট দিতে পারবেন। এই তিনজনের বাইরেও যেকোনো ব্যক্তিকে যোগ্য মনে করলে ভোট দিতে পারবেন। তিনজনের প্যানেল একটা প্রস্তাবনা মাত্র। প্যানেল ঘোষণার পর সেই নামগুলো সব শাখায় পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়।