
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার এক কিটনাশক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া এবং প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, ‘চাঁদা নিয়েছি, আপনার কাছ থেকেও নেবো’।
ভুক্তভোগীর নাম মো. রবিউল হাসান। তিনি একই এলাকার ব্যবসায়ী। রবিউল অভিযোগ করে বলেন, আদালতের নির্দেশে পূর্বের একটি জের মামলা আপস-মীমাংসা হওয়ার পরও বিবাদী মো. রেজাউল করিম পূর্ব শত্রুতার জেরে তার কাছ থেকে পুনরায় তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি বলেন, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রেজাউল করিম একাধিকবার তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন, যার অডিও প্রমাণ তার মোবাইলে সংরক্ষিত রয়েছে। হুমকি দিয়ে তিনি ইতোমধ্যে তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় করেছেন বলেও জানান রবিউল। এছাড়া দুই লাখ টাকা ক্যাশ নিয়েছেন।
রবিউল হাসান জানান, এই অর্থ তিনি রূপালী ব্যাংক বাউসা শাখার তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে একটি চেকের মাধ্যমে দিয়েছেন, যা নগদায়ন করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আখের মেম্বার। তিনি আরও অভিযোগ করেন, রেজাউল করিম প্রকাশ্যে তাকে বলেন, ‘এক লাখ পঁচাশি হাজার টাকা দিয়ে পিস্তল কিনেছি শুধু তোর জন্য।’ তার আশঙ্কা, অভিযুক্তের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, যা তিনি ব্যবহার করতে পারেন।
ভুক্তভোগী বলেন, ‘বর্তমানে আমি দোকান খুলতে পারছি না, ১৫ দিন ধরে গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছি। রেজাউল করিম আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তার ভয়ে আমি ঘর থেকেও বের হতে পারি না।’
তিনি অভিযোগ করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট পর থেকে রেজাউল করিম ও তার অনুসারীরা বাউসা ইউনিয়নে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, বাড়িঘর ভাঙচুরসহ নানা অপরাধে জড়িত। একবার তাকে গ্রেপ্তার করে মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া হলেও সে আবারও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে।
ভুক্তভোগী মো. রবিউল হাসান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছে। আমার দেওয়া চেক থেকে আখের মেম্বারের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা তিনি উঠিয়েছেন। বাকি দুইলাখ নগদে নিয়েছেন। এখন তারা আরও টাকা চাইছেন। কিন্তু আমার কাছে আর কোনো টাকা নেই যে, আমি দিতে পারি। আজ প্রায় ১৫ দিন ধরে আমি গৃহবন্দি, বের হতে পারছি না। ওই নেতা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।’
বিষয়টি জানতে বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের এই প্রতিবেদককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং বলেন, ‘আমি চাঁদা নিয়েছি, প্রয়োজনে আপনার কাছ থেকেও নেবো।’ একইসঙ্গে তিনি প্রতিবেদকের আর্থিক অবস্থা, পড়াশোনা এবং ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও কটূক্তি করেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। যেহেতু এখন জেনেছি, আমি অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের ব্যবস্থা করব।’
সাংবাদিকের সঙ্গে মো. রেজাউল করিমের অশালীন আচরণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘অবশ্যই এ বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি যে অন্যায় করে, তার বিরুদ্ধেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিই। কোনো অন্যায়কারীকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
অভিযুক্ত রেজাউল করিমের সঙ্গে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। তবে জেলা আহ্বায়ক দাবি করেছেন, তিনি এই নেতাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ, রেজাউল করিমের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পায় না। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।