Image description

বেরিয়ে এলো ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সংসদীয় আসন সীমানা পুনর্বিন্যাসের দাবির আড়ালে থানা ও সরকারি অফিস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার পেছনে কলকাঠি নাড়া মূল হোতার নাম। দাবির আড়ালে ফ্যাসিবাদীয় এই তাণ্ডবে ঘোষণা দিয়ে অংশ নিয়েছে পতিত আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। তাদের সরাসরি উস্কানি দিয়ে মাঠে নামিয়েছে ফরিদপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল একটি ভিডিওতে নিজ মুখেই প্রকাশ্যে ভাঙ্গা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার উস্কানি দিতে দেখা গেছে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে।

দৈনিক ইনকিলাবে এ নিয়ে আগেই সংবাদ প্রকাশ করে সতর্ক করা হয়েছিল। সংবাদ প্রকাশের পর এরইমধ্যে সামনে এলো ফ্যাসিস্ট নিক্সন চৌধুরীর দেওয়া একটি ভিডিও বার্তা। ফেসবুকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ওই ভিডিও বার্তায় রাস্তা-ঘাট অচল করে দেওয়ার হুমকি দিতে দেখা গেছে তাকে। তার এই ভিডিও বার্তার পরই ভাঙ্গার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হঠাৎ সহিংসতায় মোড় নেয়।

ভিডিও বার্তায় নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘‘ভাঙ্গা থেকে দুটি ইউনিয়নকে কেটে নগরকান্দার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে রয়েছে এই অবৈধ ইলেকশন কমিশন ও অবৈধ সরকার। সাথে আসছে এই এলাকায় নির্বাচন করতে আসা এক ভন্ড-চিটার। বলছে, ভাঙ্গা নাকি বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা।’’

ভাঙ্গা আবার কবে বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হলো?- এমন প্রশ্ন তুলে ফ্যাসিস্ট নিক্সন চৌধুরী দাবি করেন, ‘‘স্বাধীনতার পরে পুরো ভাঙ্গা উপজেলায় বিএনপি কোনোদিন ১৮শ এর উপরে ভোট পায় নাই। ইতিহাস জানতে হবে। ৯১, ৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের কোনো নির্বাচনেই ধানের শীষ পুরো উপজেলায় ১৮শ এর উপরে ভোট পায় নাই। ভাঙ্গার কোনো ইউনিয়নে বিএনপির ২০০ ভোটও নাই।’’

ভিডিও বার্তায় যুবলীগের এই শীর্ষ নেতা আরও দাবি করেন, ‘‘ভাঙ্গা থেকে দুটি ইউনিয়নকে বাদ দিলে নৌকার ভোট কমবে- এই হিসাব করেই এতবড় ক্ষতিটা করেছে। আন্দোলনের মাধ্যমেই এই অবৈধ সরকার ও অবৈধ নির্বাচন কমিশনের উচিত জবাব দেবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত ভাঙ্গার দুই ইউনিয়নকে ফেরত না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের গায়ের রক্ত থাকতে এই অবৈধ সরকার, অবৈধ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে রাস্তাঘাট যে যেখানে আছেন বন্ধ করে দেন। আমরা সবাই আপনাদের সাথে আছি।’’

 

দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিবেদনে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, আন্দোলনের মাঝে ফ্যাসিবাদের অনুপ্রবেশের কারণে ভাঙ্গায় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। কেউ কেউ জানিয়েছেন, বৈধ আন্দোলনকে পেছনে ফেলা দেয়ার জন্য একটি কুচক্রী মহল আন্দোলনকারীদের পেছনে থেকে ভাঙ্গার শান্তিপ্রিয় জনতার ওপর দোষ চাপিয়ে, তারা জনতার কাতারে এসে ছদ্মবেশ ধারণ করে। আর এ পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়ানো মহলটিই ভাঙ্গার সকল সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ী বলে সুশীল সমাজ মনে করেন। বোদ্ধা ও শিক্ষিত মহল মনে করেন, আল্লাহ তাআলা ভাঙ্গাবাসীসহ সকল প্রশাসনকে অল্পতে বাঁচিয়েছেন। এখানেও যে গোপালগঞ্জের মত ঘটনা জন্ম হতো না এ কথাটা তা উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই।

 

উল্লেখ্য, প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনার ভোটারের সংখ্যা আনুপাতিক হারে সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণ করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুর ভাঙ্গার সংসদীয় আসন সংশোধন করা হয়েছে। যা যুক্তিযুক্ত বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশনার মনে করেন।এ সীমানা নির্ধারণকে মানতে পারছেন না ফরিদপুর-৪ আসনের ভোটাররা। তারা তাদের পুরোনো আসন সীমানার দাবিতে গত এক সপ্তাহ যাবৎ আন্দোলন করে আসছেন। গত সাত দিনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাঝে হঠাৎ করে গত সোমবার বেলা ১২টায় ভাঙ্গার এ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহিংসতার রূপ নেয়।

 

এ আন্দোলনের মধ্য থেকে কেউ কেউ থানা, হাইওয়ে পুলিশ বক্স, নির্বাচন অফিস, অফিসার ক্লাবসহ, সরকারি পাঁচটি গাড়ি, কিছু পাবলিক গাড়িসহ, বেশকিছু মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। অপরদিকে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সহ একতলা থেকে পুরো অফিসের প্রত্যেকটি কক্ষে সরকারি সম্পদ ভাঙচুরের তা-বলীলা চালায় তারা। এসময় বিক্ষুব্ধদের কাছে ইউএনও প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে অফিস ত্যাগ করতে বাধ্য হন। বিষয়টি গণমাধ্যমে ইউএনওর সিএ নিশ্চিত করেন।