Image description

‘গুলি করি মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না।’ মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভিডিও দেখছিলেন আর তার অনুগত পুলিশ কর্মকর্তা এই কথা বলছিলেন। চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশদাতা এই আসাদুজ্জামান খান কামাল।

এক সময় কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁও এলাকার মাস্তান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের এমপি হয়ে আরো দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তাকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব নিয়েই রাজারবাগে পুলিশের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘বিরোধী দলকে তিনি দেখে নেবেন। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’ তিনি তার কথা রেখেছেন। গুমের হুকুম দেওয়া, ক্রসফায়ারের অনুমতি প্রদান, রাজনৈতিক নিপীড়ন চালিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের শায়েস্তাকরণ ও অপহরণ মাদকের ব্যবসাসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। নানা অপকর্ম করে কামাল পরিণত হন সন্ত্রাসের মাফিয়া ডন হিসেবে।

ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরাসরি যোগাযোগ থাকায় তার প্রতিটি আদেশ তিনি বাস্তবায়ন করতেন। দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই সন্ধ্যার পর ছুটে যেতেন গণভবনে। সেখান থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশ নিয়ে এসে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতেন। তার হাত দিয়েই তৈরি হয়েছে কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ, প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার, মোল্লা নজরুল ইসলাম, বিপ্লব বিজয় মজুমদার, ডিবি হারুন ও র‌্যাবের ব্যারিস্টার হারুনসহ অসংখ্য কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা। কথিত জঙ্গি অভিযানে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা দৌড়ঝাঁপ করতেন এবং বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করতেন, আসাদুজ্জামান কামাল তাদের পদোন্নতির সুপারিশ করতেন। যোগ্য পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি থেকে তিনি বাদ দিতেন। মাঠ পর্যায়ে পুলিশ তার কাজ বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠাত। কিন্তু, তিনি পুলিশের কোনো সুপারিশ মানতেন না। তার কমান্ডই ছিল শেষ কথা। পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কামাল হয়ে উঠেছিলেন ভয়ংকর এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কথা কম বলতেন কিন্তু শেখ হাসিনার লাঠিয়াল হয়ে কাজ করতেন। অনেকে তাকে ‘ঠাণ্ডা মাথার খুনি’ বলতেন।

শুধু তা-ই নয়, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, পাসপোর্ট, আনসারের পদোন্নতিতে তার বিরুদ্ধে বস্তায় বস্তায় টাকা ঘুস নেওয়ার অভিযোগ ছিল। তার অত্যাচার ও নির্যাতনে ঢাকা-১১ তেজগাঁও নির্বাচনি আসনে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বছরের পর বছর পলাতক থাকতে হয়েছে। অনেকেই বাসা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। পুলিশ-আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীতে বদলি-পোস্টিংয়ে তার স্ত্রীর মাধ্যমেও মোটা অংকের টাকা ঘুস নিতেন তিনি।

 

আসাদুজ্জামান কামাল যেভাবে ভারতে পালিয়ে যান

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট রাতে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। ঢাকার ধানমন্ডির বাসা থেকে ৪ আগস্ট রাতে একটি সাদা প্রাইভেট কারে তিনি দিনাজপুরে যান। ওই প্রাইভেট কারটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা অপুর বলে জানা যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কামাল কলকাতার শোভাবাজার এলাকার একটি বাসায় রয়েছেন। শোভাবাজারে তার পুরোনো বন্ধু সুবোল চক্রবর্তীর বাড়ি। দোতালা বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বসবাস করছেন কামাল। নিচতলায় থাকেন সুবোলের পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি জানে। তার জন্য সেখানকার থানা পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তারও ব্যবস্থা রয়েছে। কলকাতা পুলিশের তালিকায় ২০০ জন পলাতক আওয়ামী নেতাকর্মীর যে নাম রয়েছে, শীর্ষে রয়েছে আসাদুজ্জামান খান কামালের নাম। জানা গেছে, কামালের স্ত্রী ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতেই রয়েছেন। আর কামাল কলাকাতায় একাই বসবাস করছেন। কলকাতায় আওয়ামী লীগের যে অফিস নেওয়া হয়েছে সেই অফিসের দেখভাল করছেন কামাল নিজেই। মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন। আওয়ামীঘেঁষা ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমেও তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

 

জুলাই বিপ্লবে গণহত্যার নির্দেশদাতা

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে চব্বিশের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সরাসরি যুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনে ১৪০০ জনের মতো নিহত হয়। তাদের বেশিরভাগ মৃত্যু হয়েছে রাইফেল ও শটগানের গুলিতে। ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয় কাজে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তাদের নির্দেশেই বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।

 

রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১২ জুলাই তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবি প্রধান ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে আসাদুজ্জামান খান কামাল অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে বিজিবি কমান্ডারকে আরো দ্রুত প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেন। এর পরদিন অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তখনকার প্রধানমন্ত্রী বিক্ষোভ দমনের জন্য বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে বলেছিলেন এবং হত্যার পর লাশ লুকিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই বৈঠকেও আসাদুজ্জামান খান কামাল ছিলেন। কামালের ধানমন্ডির বাসায় কোর কমিটির বৈঠকে তিনি নির্দেশ জারি করতেন।

 

পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ২ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে জুলাই গণহত্যার দায় স্বীকার করে যে জবানবন্দি দেন তাতে উল্লেখ করেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে এসব হত্যকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। ১৮ জুলাই ২০২৪ আসাদুজ্জামান খান কামালের মাধ্যমেই মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ পাই। জুলাই ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি ‘লেথাল উইপন’ ব্যবহার করার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আসাদুজ্জামান খান কামালই জানিয়েছিলেন।

 

পুলিশের মধ্যে মাফিয়া নেটওয়ার্ক এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগকে অস্ত্রের ঢালাও লাইসেন্স প্রদান

বঞ্চিত একাধিক পুলিশের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হতো কামালের একক সিদ্ধান্তে। এতে করে কামাল পুলিশের মধ্যে বড় মাফিয়া নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তাদেরই তিনি ওএসডি করেছেন। এডিশনাল ডিআইজি মনিরুজ্জামানের তিনি নিজ হাতে পদোন্নতি ঠেকিয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

কামালের অপকর্ম ছিল কয়েক ভাগে বিভক্ত। প্রথমত তিনি যত রকম পুলিশ নিয়োগ, পোস্টিং হতো সবকটি থেকে নিয়মিত অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করতেন। মেধা বা পরীক্ষার ভিত্তিতে নয়, কামালের একটি তালিকার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সব নিয়োগ হতো। সে তালিকায় যে শুধু কামালের পছন্দের ব্যক্তি থাকত এমনটি নয়, সারা দেশে যে মাফিয়াচক্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সে চক্রের লোকেরা পাঠাত তালিকা এবং বস্তাভর্তি টাকা। সে টাকা এবং তালিকা অনুযায়ী কাজ করতেন কামাল। ফলে পুলিশ বাহিনী পরিণত হয়েছিল কামালের অনুগত এক বাহিনীতে।

 

সূত্র জানায়, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরই জঙ্গি অভিযানের নামে নাটক সাজাতেন। বিরোধী মতের লোকদের জঙ্গি বানিয়ে জঙ্গি অভিযানের নাটক সাজান এবং এসব নাটকের মাধ্যমে বহু মানুষকে হত্যা করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকেও গুম করা হয়েছিল কামালের নির্দেশেই। তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন, সালাউদ্দিন আত্মগোপনে গেছেন। কামালই হলেন প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি গায়েবি মামলার সংস্কৃতি চালু করেছিলেন। গায়েবি মামলায় মরা মানুষকেও তিনি আসামি বানিয়েছিলেন।

 

সূত্র জানায়, কামালের আরেকটি বড় অপকর্ম হলো তিনি ছাত্রলীগ, যুবলীগকে অকাতরে অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছেন। কামালের ১০ বছরের মন্ত্রিত্বের সময় প্রায় ৩২ হাজার অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। সবই দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডারদের। বিরোধী দলের আন্দোলন দমনের জন্য এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। তিনি গড়ে তুলেছিলেন হেলমেট বাহিনী। এই হেলমেট বাহিনী বিরোধী দল ও মতের ওপর চড়াও হতো। এভাবেই একটি ‘প্যারালাল সন্ত্রাসী বাহিনী’ তৈরি করেছিলেন কামাল।

 

নিয়োগ-বাণিজ্য ও পুলিশের নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরি করে গড়ে তোলেন মাফিয়া পুলিশচক্র

পুলিশের বদলিতে কামাল নিজেই একটি বড় সিন্ডিকেট তৈরি করে তুলেছিলেন। কথিত ৪ সংস্থার রিপোর্টের নামে তিনি সেটি গণভবনে দিয়ে আসতেন। সেই রিপোর্ট তিনি নিজেই করাতেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি নিয়োগ করে হাতিয়ে নিতেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। এই নিয়োগ-বাণিজ্যে ছিলেন প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার ও মোল্লা নজরুল ইসলাম এবং তার ছেলে জ্যোতি। কোনো জেলার এসপি হতে হলে ১ কোটি টাকার নিচে কারো বদলি হতো না। আবার ভিআইপি জেলাগুলোর এসপি হতে হলে নিম্নে ৩ কোটি টাকা সিন্ডিকেটকে দেওয়া লাগত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের ২২ ব্যাচের এক কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, ‘তার ব্যাচমেটরা অনেকেই এসপি হয়ে গেছেন। কিন্তু, আমি এখনও এডিশনাল এসপি রয়ে গেছি। আমাকে হাওয়া ভবনের ট্যাগ দিয়ে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। আমার নামের পাশে হাওয়া ভবনের লোক বলে লেখা হয়েছে। অথচ আমি যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশে বিসিএস ক্যাডার হয়েছি। আমি বিষয়টি নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করি।

 

তাকে বিষয়টি বললে তিনি আমাকে বলেন, আমি নাকি সরকারবিরোধী লোক। এছাড়াও ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুককে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। তিনি চিত্রনায়িকা পরীমনি, মডেল মৌ ও পিয়াসার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর তত্ত্বাবধান করছিলেন। একই সঙ্গে শেখ ওমর ফারুক ছাড়াও খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন-৬)-এর কমান্ডার (এসপি পদমর্যাদার) মোহাম্মদ আব্দুর রহিমকেও অবসরে পাঠানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন)-এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে তাদের সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। কর্মকর্তারা বিধি মোতাবেক অবসরজনিত সব সুবিধা পাবেন। এই তিন কর্মকর্তাকে হাওয়া ভবনের লোক বলে পরিচিত করেছিল।

 

পুলিশের অস্ত্র ও ফায়ার সার্ভিসের পণ্য ক্রয়ের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ

গত ১০ বছরে পুলিশের যত অস্ত্র ক্রয় হয়েছে সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন কামাল। কেউ যাতে টেন্ডার ড্রপ করতে না পারে এজন্য গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে আগেই ভয় দেখাতেন। সাব্বির আহমেদ নামে এক ব্যক্তি পুলিশের সাপ্লাই বিভাগের টেন্ডার জমা দেওয়ার কারণে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে খিলগাঁও এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে এসেছিল। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের যত নিয়োগ ও বদলি তার ছেলে জ্যোতিকে দিয়ে করাতেন।

 

প্রত্যেক রাতে ধানমন্ডির বাসায় মিটিং করতেন

ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ি ছিল কামালের ষড়যন্ত্রের আখড়া। সচিবালয়ে কম থাকতেন। সন্ধ্যার পর তার বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ির লাইন লেগে যেত। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই বাড়িতে যেতেন। দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই ওই বাড়িতে আইজিপি, র‌্যাবের প্রধান, বিজিবির প্রধান, এসবি চিফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করতেন তিনি। এটা ছিল তার কোর কমিটি। কাকে ধরতে হবে, কাকে গুম করতে হবে ওই বাড়ি থেকে তার নির্দেশ আসত। এছাড়াও যারা বদলি ও তদবির করত তারা ওই বাড়িতে যেতেন। বিগত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ওই বাড়িতে প্রত্যেকদিন রাতে বৈঠক হতো। ছাত্রদের কীভাবে দমন করতে হবে, খুন করতে হবে, গুলি চালাতে হবে তার ‘মাস্টার প্লান’ হয়েছে সেই বাড়িতে। গত সোমবার ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি নির্জন এবং একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কয়েকজন পরিচ্ছন্নকর্মী ছাড়া বাড়িতে কেউ নেই।

 

গায়েবি মামলা ও হেলমেট বাহিনী

গায়েবি মামলা ও হেলমেট বাহিনীর কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। গায়েবি মামলার মূল পরামর্শদাতা ছিলেন কামাল। ওইসব মামলায় মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছিল। বিদেশে থাকে এমন ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছিল। এ নিয়ে ওই সময় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে কামালকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করলে তিনি সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে সারা দেশে ১৬ হাজার ৪২৯টি গায়েবি মামলা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওইসব মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে।

 

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট করেন। রিট আবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানায় বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৭৩৬টি গায়েবি মামলা দায়ের করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩ লাখ ১৩ হাজার ১৩০ জনকে। আর অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে কয়েক হাজার। ১০ বছর আগে মারা গেছেন এমন মানুষকেও এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। ২০০৭ সালে মারা গেছেন এমন ব্যক্তিও আছেন আসামির তালিকায়।

 

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট কোটা সংস্থার আন্দোলন চলাকালীন ধানমন্ডিতে ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। ওই হামলায় প্রায় ১০০ জন ছাত্র আহত হয়। ওই হেলমেট বাহিনী মূলত ছিল কামালের বাহিনী। ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হেলমেট পরিয়ে কামাল রাস্তায় নামিয়েছিলেন। হেলমেট বাহিনীর হামলায় শুধু সাধারণ ছাত্র নয়, সাংবাদিকরাও আহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনার এখনও বিচার হয়নি।

 

কামালের পরামর্শে হয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই ভাগ ও আনুগত্যশীলদের বানাতেন সচিব

২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর কামাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দুই ভাগে বিভক্ত করেন। কাজের সুবিধার কথা বলে বিভক্ত করা হয়। দুর্নীতি ও অনিয়ম করার জন্যই মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভাগ করা হয়। বর্তমান বৈষম্যবিরোধী সরকার ক্ষমতার আসার পর দুই বিভাগকে এক করা হয়েছে। গত ১০ বছরে ৬ জন সচিব কামালের অনুগত কর্মী হয়ে উঠেছিলেন। জননিরাপত্তা বিভাগে মোদাব্বের হোসেন নামে এক সচিবকে তিনি সেবা বিভাগে পাঠিয়েছিলেন। জানা গেছে, মোদাব্বের তার কথামতো কাজ করতেন না।

 

প্রমোশন সিরিয়াল ব্রেক

কামালের সময় পদোন্নতিতে বড় অনিয়ম হয়েছিল ২০২২ সালের ১১ মে। ওই দিন ডিআইজি পদে পুলিশের ৩২ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, ওই ৩২ জন কামালের অনুগত কর্মকর্তা। সারা দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে তারা পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। এদের কাছ থেকে আবার কামাল ২ কোটি টাকা করে ডিআইজির পদোন্নতির নামে হাতিয়ে নিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এদের অনেকেই পলাতক রয়েছেন। ওই ৩২ কর্মকর্তা হলেন, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) দুই পরিচালক (অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক) মো. মোজাম্মেল হক, মাহফুজুর রহমান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. রেজাউল হক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. মনির হোসেন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট) মো. মনিরুজ্জামান, হাইওয়ে পুলিশ ইউনিটের (ঢাকা) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শকের চলতি দায়িত্বে) মো. মুনিবুর রহমান, সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়) জয়দেব কুমার ভদ্র, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক কাজী জিয়া উদ্দিন। এ তালিকায় রয়েছেন— অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) মো. গোলাম রউফ খান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শকের চলতি দায়িত্বে) মো. আসাদুজ্জামান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) পরিচালক (অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক) শেখ মোহাম্মদ রেজাউল হায়দার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার শামীমা বেগম, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট) সালমা বেগম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক) মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়) এ কে এম এহসান উল্লাহ, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়) শাহ মিজান শাফিউর রহমান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (নৌ পুলিশ ইউনিট, ঢাকা) মোল্যা নজরুল ইসলাম, এ তালিকায় আরো রয়েছেন— অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক এস, এম, মোস্তাক আহমেদ খান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ঢাকা রেঞ্জ) জিহাদুল কবির, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মঈনুল হক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরীফ, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়) নুরে আলম মিনা, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়) মো. শাহ আবিদ হোসেন, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) পরিচালক (অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক) মো. জামিল হাসান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়) মো. মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়) মো. সাইফুল ইসলাম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তিন যুগ্ম কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, মো. আনিসুর রহমান ও মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

 

কামালের যত দুর্নীতি

আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পরিবারের নামে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পাশাপাশি সংস্থাটির অনুসন্ধানে আরো ২০০ কোটি টাকার বেশি মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটির অনুসন্ধান টিম। সব মিলিয়ে আপাতত ৩০০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে ১০০ কোটি টাকার বেশি স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ব্যাংকের নগদ অর্থ, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে। অনুসন্ধানে তাদের ব্যাংক হিসাবেই শত কোটি টাকার বেশি অর্থের সন্ধান মিলেছে। এছাড়া তার এপিএস মনিরের বিরুদ্ধে প্রায় ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ মিলেছে।

 

দুদক জানতে পেরেছে, ২০২২ সালের ৩০ জুন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ডিআইজি মোল্লা নজরুল ইসলাম। পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে মোল্লা নজরুলকে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এনজিওর ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ দিতে গিয়ে প্রতি সংস্থা থেকে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা দিতে হতো। এর মধ্যে ২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি উন্নয়ন সংস্থার এনওসি নিতে গেলে বিপত্তি শুরু হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর আগে পুলিশের বিশেষ শাখা, জেলা প্রশাসক, এনএসআই ইতিবাচক প্রতিবেদন দাখিল করে। তারপরও অদৃশ্য কারণে ফাইলটি মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় মন্ত্রণালয়ে। বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে মন্ত্রীকে ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ফার্মগেট এলাকায় কামালের বাসার সামনে টাকার ব্যাগটি দেওয়া হয় তার পরিবারের এক সদস্যের কাছে।

 

সূত্র জানায়, ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সে কোনো সার্কুলার হলেই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটি তালিকা পাঠানো হতো। সে মোতাবেক তাদের নিয়োগ দেওয়া হতো। ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর ৫৩৫ জনকে নিয়োগ দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এর মধ্যে ছিলেন ৪৩৬ পুরুষ ফায়ার ফাইটার, ১৫ জন নারী ফায়ার ফাইটার ও ৮৪ জন গাড়িচালক। নিয়োগ কার্যক্রমের শুরুতেই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে ২৫০ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। সাবেক এই মন্ত্রীর নির্দেশে সেই তালিকা মোতাবেক নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় ফায়ার সার্ভিস। নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ৮-১২ লাখ টাকা নিত কামাল-হারুন সিন্ডিকেট। এই দুর্নীতিতে কামাল ছাড়াও তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, তার ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান, মেয়ে সোফিয়া তাসনিম খান ও সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন জড়িত।

 

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন আমার দেশকে জানান, ‘ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

কাউন্সিলর শামীমের মাধ্যমে কারওয়ান বাজারে ছিল কামালের চাঁদাবাজি

কারওয়ান বাজারে কাঁচাবাজারে প্রত্যেকদিন প্রায় দেড় কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। পলাতক ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীমের মাধ্যমে ওই টাকা তুলতেন কামাল। ওই টাকা আবার তিনি দুই ভাগে ভাগ করে দিতেন। ৫ আগস্টের পর শামীম পলাতক রয়েছেন। শামীমের মাধ্যমে ২০০ জনের একটি বড় গ্যাং তৈরি করেছিলেন কামাল। ওই গ্যাংয়ের সদস্যরা চাঁদা তুলতেন। কারওয়ান বাজার ইত্তেফাক গলির কাঁচা তরকারি বিক্রেতা আরমান জানান, ‘পুরো কারওয়ান বাজার এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের নিয়ন্ত্রণে। তার হয়ে এই এলাকায় চাঁদা তুলতেন কাউন্সিলর শামীম। শামীম আওয়ামী লীগের পতনের পর পলাতক রয়েছেন। তিনি আরো জানান, শামীমের লোকজন এই এলাকায় চাঁদা তুলত। ওই টাকা হাতবদল হয়ে কামালের কাছে যেত। আমি চাঁদা না দেওয়ার কারণে একমাস ব্যবসা করতে পারিনি। পরে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করে আবার ব্যবসা শুরু করি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পাইকারি বিক্রেতা জানান, ‘চাঁদা না দেওয়ার কারণে তাকে কামালের লোকজন লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে।