
‘আমরা চাই এমন সংবিধান, যে সংবিধান মানুষের গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দিতে পারে। এমন সংবিধান, যেটা বাংলাদেশের মানুষের অভিপ্রায়কে ধারণ করতে পারে। বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকারকে সুরক্ষিত করতে পারে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে স্বাধীন রাখতে পারে। যাঁরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে পারে। ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত না করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণকে জারি রাখতে পারে।’ সংবিধান নিয়ে আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরে কথাগুলো বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার সন্ধ্যায় ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কেমন সংবিধান চাই’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন আখতার হোসেন। রাজধানীর বাংলামোটরে যুবশক্তির কার্যালয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি।
বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ভারসাম্য নিশ্চিত করতে পারে, এমন সংবিধান চান উল্লেখ করে এনসিপির সদস্যসচিব আরও বলেন, ‘আমরা এমন সংবিধান চাই, যেটা বাংলাদেশের সকল শ্রেণির মানুষকে ধারণ করতে পারে। বাংলাদেশের সকল ধর্মের মানুষ, সকল সম্প্রদায়ের মানুষ, সকল জনগোষ্ঠীর মানুষের অধিকারকে ধারণ করতে পারে।’
নতুন সংবিধান না হলে এসব চাওয়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘যেকোনো সময় কোর্টে এটাকে চ্যালেঞ্জ করা হবে; কোর্ট সিদ্ধান্ত যদি বাতিল করার অথরিটি দেখে, যেহেতু এই সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার ৭২–এর বেসিক স্ট্রাকচার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। আমরা এমন সংবিধান চাই, যে সংবিধান তার নতুন বেসিক স্ট্রাকচার নিয়ে জাতির কাছে হাজির হবে।’
জুলাই সনদকে ‘সম্পদ’ হিসেবে বর্ণনা করে সেটাকে বাস্তবায়ন করা হবে নাকি অঙ্গীকারের মধ্য ফেলে রাখা হবে, এমন প্রশ্ন তোলেন আখতার হোসেন।
সেমিনারে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘৭২ সালে গৃহীত সংবিধানে ফ্যাসিবাদী সকল কাঠামো বিদ্যমান ছিল। কারণ তার কয়েক বছর পরেই শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে সংবিধানের যতটুকু কাঠামো ছিল, সেটুকু ধ্বংস করে দিলেন। সে সংবিধান জনগণের অভিপ্রায় ধরে রাখতে পারেনি। ৩৬ জুলাই জনরায়ের মাধ্যমে সেই সংবিধান আসলে বাতিল হয়ে গেছে। সে জন্য আমাদের একমাত্র মুক্তির পথ হচ্ছে নতুন একটি গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান নির্মাণ।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘অভ্যুত্থানের ওপর দিয়ে যেই নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছি, সেই নতুন বাংলাদেশের যাত্রার দিকে, গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় আমরা যদি অগ্রসর হতে চাই, আমাদের মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই অগ্রসর হতে হবে।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরাও নির্বাচন চাই। সেই নির্বাচন অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে। যে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা এই জুলাই সনদকে একটি টেকসই অবস্থায় নিয়ে যেতে সক্ষম হব।’
দেশের বিদ্যমান সংবিধানকে মৃত উল্লেখ করে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমাদের সংকট হচ্ছে সংবিধান নিয়ে এবং এই সংবিধানের ভেতর থেকেই বারবার মিলিটারি শাসন আসে, বারবার জরুরি অবস্থা আসে।’
সেমিনারে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জাতীয় যুবশক্তির নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় যুবশক্তির ঢাকা মহানগরের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
যুগপৎ আন্দোলনে যাবে না এনসিপি
সেমিনারে জাবেদ রাসিন বলেন, ‘কোনো যুগপৎ আন্দোলনে এনসিপি যাবে না। এনসিপির অন্যান্য যে দাবিগুলো আছে, যে রাজনৈতিক দলগুলো সেই দাবিগুলোর সাথে তাঁদের আমাদের একাত্মতা আছে—আমরা সেই দাবিগুলো নিয়ে আমাদের মতো করে আন্দোলন বা কর্মসূচি দেব। কিন্তু কোনো জোটের সাথে, কোনো দলের সাথে, কোনো যুগপৎ আন্দোলনে এনসিপি যাবে না।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘অনেক কথা ছড়াচ্ছে বাজারে এনসিপি একটি জোটে যাচ্ছে। অমুক দলের সাথে, অমুক দলের সাথে—আমি আপনাদের স্পষ্ট করে বলতে চাই, এনসিপি কোনো জোটে যাবে না। এনসিপি সামনে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে, মধ্যমপন্থী বাংলাদেশি রাজনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে।’