রাজনীতি করে কি ধনী হওয়া যায়? রাজনীতি কি টাকা কামানোর মেশিন? রাজনীতিবিদের বেতনই বা কতো? এই প্রশ্নগুলো তখনই ওঠে, যখন রাজনীতিবিদরা বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে যান।
আর এক্ষেত্রে একেবারে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিলেন সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত ও সমোলোচিত সাধারণ সম্পাদক।
কাদের ছিলেন না কোনো ব্যবসায়ী। না ছিলেন কোনো পদস্থ চাকরিজীবী। পুরো জীবনই করেছেন রাজনীতি। দেশের বিতর্কিত ব্যক্তি ও গডফাদারদের দ্বারা থাকতেন পরিবেষ্টিত।
প্রায় আয় রোজগারহীন কাদেরের বিলাসী ও বাহারি জীবনযাপন ছিলো অবাক ও বিস্মিত হওয়ার মতো। নামদামি ব্র্যান্ডের ডজন-ডজন ঘড়ি ছিলো তার। প্রতিটির দাম ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা। ছিলো অত্যন্ত দামি ব্র্যান্ডের অসংখ্য স্যুট, মূল্যবান সানগ্লাসও পাল্টাতেন প্রায়ই। আর এর সবই আনা হতো বিদেশ থেকে।
তাই প্রশ্ন উঠে, কোথায় গেলো কাদেরে লাখ-লাখ টাকা দামের সেইসব ঘড়িগুলো? দামি স্যুটগুলোইবা এখন কোথায়?
ওবায়দুল কাদের সম্পদের হিসাব অনুযায়ী, তিনি একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ। তবে স্বল্প আয়ের সেই কাদের বেশভুষায় ছিলেন রীতিমতো ধনকুবেরের মতো।
তার কব্জিতে প্রায়ই শোভা পেতো ইউলিসি নারদিন ব্র্যান্ডের ঘড়ি। যে ঘড়ির দাম ৩০ লাখ টাকারও বেশি। রোলেক্সের ডেটজাস্ট ও সেলিনি; এমনকি দুষ্প্রাপ্য ব্র্যান্ডের লুই ভিটন ট্যাম্বু স্পিন টাইম রিগাতার মতো ঘড়িও ছিলো তার।
ওবায়দুল কাদের চোখে পড়েন রে-ব্যান, বস, পোলার্ড, অক্টো ব্র্যান্ডের মতো বেশকিছু দামি চশমা। আলোচনা ছিলো কাদেরের স্যুট ও জুতো নিয়েও। অভিজাত জিওভানি, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার ও গুচি ব্র্যান্ডের অসংখ্য স্যুট ছিলো তার। গুচির বেশকিছু জুতাও পড়তেন।
আওয়ামী লীগের অত্যন্ত বিতর্কিত এই সাধারণ সম্পাদক বিলাসী এসব পোশাক-পরিচ্ছদের পুরোটাই সংগ্রহ করতেন বিদেশ থেকে। এমনকি কাদেরের সংগ্রহে ছিলো বেশ কিছু দুর্লভ ও অত্যন্ত দামি চিত্রকর্ম ও শোপিস।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের উত্থান দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। কারণ, এই কাদেরের হাত ধরেই জেলা থেকে তৃণমূল সর্বত্র উত্থান হয় গডফাদার ও চাঁদাবাজদের। আওয়ামী লীগের প্রকৃত ও ত্যাগীরা কোনঠাসা হয়ে পড়েন।
গডফাদার পরিবেষ্ঠিত কাদের ডুব দেন বিলাসী জীবনে। কাদেরের ক্যাডাররা এতোটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে, সমস্ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তারা। সেই গডফাদাররাই উপঢৌকন হিসেবে ওবায়দুল কাদেরকে বিলাসী ঘড়ি-স্যুট-জুতো উপহার দিতেন। তিনি নিজেই একবার স্বীকার করেছিলেন এসব।
গত পাঁচ আগস্টের গণঅভ্যুত্থাণের পর বেশকিছুদিন দেশের মধ্যে আত্মগোপনে থাকার পর, কোনোমতে ভারতে পালিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তবে সেইসব দামি ঘড়ি-স্যুট-চশমার কিছুই প্রায় নিতে পারেননি তিনি।
গত প্রায় দেড় দশক গণভবনের উল্টোদিকে সংসদ ভবন এলাকার একটি বাংলোকে সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করতেন কাদের। শেখ হাসিনার পর লুটপাট হয় কাদেরের বাসভবন।
ওইদিন গণভবন ও সংসদ ভবনে প্রবেশ করে মানুষের ঢল। লুট হয় গণভবন ও সংসদ ভবন। রক্ষা পায়নি ওবায়দুল কাদেরের বাসভবনও। লুট হয়ে যায় তার সব ফ্যাশন পণ্য, নগদ অর্থকড়ি, আসবাবপত্র, মূল্যবান চিত্রকর্ম, ব্যবহার্য নানা উপকরণ।