
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা কাটছে না। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর সর্বশেষ আলোচনায়ও ভিন্নমত উঠে এসেছে। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্য ঈষৎ সংক্ষিপ্ত আকারে এখানে তুলে ধরা হলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে যে প্রস্তাবগুলো এসেছে, সাধারণভাবে সেগুলো অগ্রহণযোগ্য এবং যৌক্তিক নয়। তিনি আরও বলেন, আলোচনার মাধ্যমে একটা জায়গায় যেতে পারলে বিএনপি সবচেয়ে খুশি হবে। কারণ, এই অনিশ্চয়তা বেশি দিন অব্যাহত রাখা যাবে না।
সালাহউদ্দিন আহমদ গত বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদের ঈষৎ সংক্ষেপিত বক্তব্য
আমার ভাই আখতার বলছে, গণপরিষদ। গণপরিষদ গঠিত হয় একটা নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য অথবা সংবিধানের মেজর চেঞ্জ করার ক্ষেত্রে ক্যারেক্টার অব দ্য কনস্টিটিউশন, অ্যান্ড নেচার অব কনস্টিটিউশন অ্যান্ড বেসিক স্ট্রাকচার অব কনস্টিটিউশন...আমি বলব তিনটা জিনিস। এগুলো যখন পরিবর্তন করতে হয়, তখন গণপরিষদ গঠন করা হয় এবং সেটার ইনস্ট্যান্স কোথাও কোথাও আছে। যেমন শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট ইলেকশনের পরে তারা দুই বছরের জন্য একটা ইনস্ট্যান্স আছে গণপরিষদ রূপে কাজ করেছে, অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ পার্লামেন্ট এবং সেই গণপরিষদ এসে তারা কনস্টিটিউশন সেভাবে গৃহীত হয়েছিল। দিস অল অ্যাবাউট দ্য কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি।
সেকেন্ডলি আপনারা আমার ভাই সিনিয়র অ্যাডভোকেট শিশির মনিরের বক্তব্য শুনেছেন, একটা প্রভিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার করা যায় কি না।
এখানে জুডিশিয়ারির ক্ষেত্রে অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেছেন যে হাইকোর্টের ডিসেন্ট্রালাইজেশনের বিষয়ে পার্লামেন্ট কি সেটা করতে পারে? হ্যাঁ, পার্লামেন্ট সেটা করতে পারে। তবে সেই ইন্টারপ্রিটিশনটা সুপ্রিম কোর্টের দেওয়ার এখতিয়ার যে এটা আল্ট্রাভাস কনস্টিটিউশন অর নট? সেটা অ্যামেন্ডমেন্টে দিয়েছে যে বাংলাদেশে ডিসেন্ট্রালাইজেশন অব দ্য হাইকোর্ট এটাকে আনকনস্টিটিউশনাল ডিক্লেয়ার করেছে। কিন্তু আপনারা এখানে যেভাবে ঐকমত্য হয়েছেন, সেদিন আমি নোট অব ডিসেন্ট আকারে দিয়েছিলাম এবং দুইবার পারস্যু করেছিলাম যে আপনারা এটা যখন প্রফেসর আলী রীয়াজ সাহেব প্রেসকে বলবেন, প্রথম দিন বলেন নাই, সেকেন্ড দিন আমাদের পারস্যুয়েশনের কারণে বলেছেন যে এই ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টকে আলোচনা করতে হবে যে সুপ্রিম কোর্ট কী বলে? আদারওয়াইজ এটা ইমপ্লিমেন্ট করা যাবে না। আমরা হয়তো পার্লামেন্টে সে আইনটা পাস করতে পারব কিন্তু পরের দিন সেটা চ্যালেঞ্জ হলে সেটা আনকনস্টিটিউশনাল ডিক্লেয়ার হয়ে যেতে পারে।
এখানে আমি মনোযোগ আকর্ষণ করব আপনাদের সকলের, এই যে আপনারা এখানে বলেছেন যে বেসিক স্ট্রাকচার অব দ্য কনস্টিটিউশন চেঞ্জ করার কোনো এখতিয়ার পার্লামেন্টের নাই। বেসিক স্ট্রাকচার চেঞ্জ করার এখতিয়ার পার্লামেন্টের আছে। সেই ক্ষেত্রে কীভাবে সেটা লেজিটিমেট করা হবে, সে ক্ষেত্রে আর্টিকেলগুলো বলা আছে যে প্রিম্বল আর্টিকেল এইট, ৪৮, ৫৬ অ্যান্ড আর্টিকেল ১৪২ ইটসেলফ যেটা অ্যামেন্ডমেন্ট প্রসিডিউর বলা আছে।
এখন আমরা প্রপোজ করেছি, আর্টিকেল ৫৮ ক এবং ক দুই পরিচ্ছেদ মানে চ্যাপ্টার টু ক দুই ক পরিচ্ছেদ হিসেবে পরিচিত; এগুলোকে যেন ইনক্লুড করা হয়। যাতে এইগুলো চেঞ্জের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টে পাসের পরেও বিফোর সিগনেচার অব প্রেসিডেন্ট, এটা গণভোটে যেতে হবে। এটা হচ্ছে বেসিক স্ট্রাকচারের ক্ষেত্রে।
বেসিক স্ট্রাকচারের ক্ষেত্রে আরও কিছু বিষয় বলা আছে, যেমন আপনি ডেমোক্রেসিকে বাদ দিতে পারবেন না। এটা বেসিক স্ট্রাকচার প্লাস ক্যারেক্টার অব দ্য কনস্টিটিউশন। কারণ, আমরা রাজতন্ত্রে ফিরতে পারব না। এটা হচ্ছে ক্যারেক্টার অব দ্য কনস্টিটিউশন; নেচার অব দ্য কনস্টিটিউশন। অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ বেসিক স্ট্রাকচার ইট ইজ মোর দ্যান বেসিক স্ট্রাকচার। এখানে আমরা যেতে পারব না, সেই এখতিয়ার পার্লামেন্টেরও নাই।
আমরা এখানে অ্যাগ্রিড হলাম, অনেকে প্রশ্ন করেছেন, তার মানে কি সেটা পাস হয়ে গেছে? এখানে আমরা অ্যামেন্ডমেন্টগুলো অ্যাগ্রিড হলাম যেগুলো কনস্টিটিউশনে আমরা অ্যাডপ্ট করতে চাই, সেটা অ্যাগ্রিমেন্ট। পলিটিক্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট, কনসেনসাস, ন্যাশনাল কনসেনসাস, ব্রডার কনসেনসাস। যদিও এখানে আমরা সবাই পুরা জাতিকে রিপ্রেজেন্ট করি, এটা বললে অসত্য হবে। কারণ, বাংলাদেশের সব পলিটিক্যাল পার্টি মিলেও সমগ্র জনগোষ্ঠীকে রিপ্রেজেন্ট করে, এটা থিওরেটিক্যালি ঠিক নয়। কারণ, সমগ্র জনগোষ্ঠী যখন কনসেন্ট দেবে পার্লামেন্ট ইলেকশনের মধ্য দিয়ে, তখন সেটা তাদের কনসেন্ট হবে।
আমরা কোনো পলিটিক্যাল পার্টি ও পারসন টু পারসন ফোরটি পারসেন্ট লোককে রিপ্রেজেন্ট করতে পারি। কিন্তু সেটা অফিশিয়ালি, লিগ্যালি, থিওরেটিক্যালি তখনই লেজিটিমেট হবে, যখন জনগণ তার সোভারিন্ট পাওয়ারটা প্রয়োগ করবে ভোটের মাধ্যমে। এটাই হচ্ছে সুপ্রিমেসি অব দ্য পিপল। অবশ্য আমাদের সংবিধানে বলা আছে যে সুপ্রিমেসি অব দ্য কনস্টিটিউশন এটা আমাদের জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি রূপে, প্রিয়াম্বলে বলা আছে, তৃতীয় চতুর্থ প্যারাগ্রাফে যে এই সংবিধানকে জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি হিসেবে, এর প্রাধান্য অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।
আবার সেটা আর্টার করা হয়েছে আর্টিকেল সেভেনের সাবসেকশন টুতে যে, জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন। এগুলো বলা আছে। কিন্তু সেই অভিপ্রায়টা এখানে যাঁরা বলছেন, বক্তৃতা দিচ্ছেন যে অভিপ্রায়ের মূলে আমরা এখানে এসেছি। অভিপ্রায় চূড়ান্ত...সে অভিপ্রায়টা যখন কনস্টিটিউশনে অ্যাম্বেডেড হবে জনগণের অভিপ্রায় হিসেবে, তখনই সেটা মান্য হবে। তার আগপর্যন্ত আমার অভিপ্রায় আমি এখানে প্রকাশ করতে পারি; আমাদের কেউ প্রেসক্লাবের সামনে অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে পারে, কেউ মুক্তাঙ্গনে করতে পারে। সেটা অভিপ্রায়টা তখনই কনস্টিটিউশনে অ্যাম্বডেড হবে, যখন সেটা পার্লামেন্টের অ্যাকসেপ্ট হয়ে যাবে অভিপ্রায় হিসেবে। তখন সেটা প্রতিভাত হবে। তখন সেটা মান্য করতে বাধ্য হবে। তা ছাড়া যদি আমরা প্রত্যেকেই বলি যে এটা জনগণের অভিপ্রায়, ওইটা জনগণের অভিপ্রায়, আমরা প্রত্যেকে এখানে ৩০টা ২৯টা দল আছে আমরা অভিপ্রায় বিভিন্নভাবে প্রকাশ করতে পারি এবং প্রত্যেকেই বলতে পারি, এটা জনগণের অভিপ্রায়। সেটা তখন পর্যন্ত লেজিটিমেসি পাবে না।
আমি মনে করি, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে যে কনস্টিটিউশনের অ্যাডভাইজারি রোল, সুপ্রিম কোর্টের যে অ্যাডভাইজারি রোল অ্যাপিলেট ডিভিশনের সেই বিষয়ে বর্ণনা করা আছে। সেখানে বলেছে যদি রাষ্ট্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয় অথবা হতে পারে; যা অতীব জরুরি। মানে জনগুরুত্বপূর্ণ। যেটার বিষয়ে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভাইস চাইতে পারে রেফারেন্সের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের কাছে। সেই বিষয়ে উপযুক্ত শুনানির মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট মতামত দিতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট অ্যাপিলেট ডিভিশন হেডেড বাই চিফ জাস্টিস মতামত দিয়েছে এবং সে অর্ডারটা আমাদের কাছেও আছে, যেটা অ্যাটর্নি জেনারেল শুনেছেন। এখন যদি অ্যাটর্নি জেনারেলের বাইরে আর কাউকে শুনতে চাই, সেটা তাদের এখতিয়ার।
এখন ১০৬–এর সেই ডিসিশনের যদি আমরা কোশ্চেন তুলি, তাহলে লেজিটিমেসি অব গভর্মেন্ট থাকে না। আর সেটার রিভিউর কথা বলা হয়েছে, রিভিউ করার জন্য উপযুক্ত ফোরাম কোনটা? সেটাও তো সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশন হেডেড বাই চিফ জাস্টিস। এখন সেটার রিভিউ কেউ করতে চাইলে সেটা কনস্টিটিউশনে কোথাও অ্যালাউ করেছে কি না জানি না। হয়তো আর্টিকেল ১০২ অনুসারে যাওয়া যেতেও পারে। বাট ইট ইজ নাউ ফ্যাক্টাম ব্যালেট, যে ঘটনাক্রমে সিদ্ধ। এটা একটা আইনের টার্ম। এখন যদি সে ফ্যাক্টাম ব্যালেটকে আমরা মেনে না নেই, তাহলে টোটাল লেজিটিমেসি অব দ্য গভর্নমেন্ট নিয়ে কোশ্চেন হবে। ফরমেশন অব রিফর্মেশন কমিশনগুলো কোশ্চেন হবে। ফর্মেশন অব দ্য ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিশন কোশ্চেন হবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের এই আলোচনাগুলো আর কোনো দরকার হবে না।
আমার মনে হয় যে রাষ্ট্র স্ট্যাবিলিটির জন্য আমরা যদি সব বিষয়ে এভাবে কোশ্চেন তুলি, তাহলে হয়তো আমাদের জন্য এটা কল্যাণের পরিচয় হবে না। আমরা একটা জায়গায় এসেছি, সেখানে জনগণের অভিপ্রায় নিয়ে আমরা কথা বলছি। গণ–অভ্যুত্থান, আমরা কেউ কেউ এটাকে বিপ্লব বলতেও পছন্দ করছি। অবশ্য আমি বিপ্লব বলি না। কারণ, বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক স্ট্রাকচার টোটাল চেঞ্জ হতে হয়। এটা শুধু একটা সরকারের পতন হয়েছে। এটা অটোক্রেসির পতন হয়েছে।
এই গণ–অভ্যুত্থানে জনগণের অভিপ্রায় অবশ্য ব্যক্ত হয়েছে। সে অভিপ্রায়টা ছিল এই যে আমরা ভোটের অধিকার ফেরত চাই। গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত চাই। বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা চাই। চাকরির বৈষম্য নিয়ে যেহেতু শুরু হয়েছিল, পরবর্তীতে তার সাথে যুক্ত হয়েছে আমরা রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার চাই। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার চাই। দ্বিমত নাই। সেই রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের জন্য আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এই সরকার গঠিত হওয়ার আরও দেড় বছর আগে তো আমরা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি এবং তখন ফ্যাসিবাদের পতন কখন হবে? কীভাবে হবে? সেটা আমরা জানতাম না।
সেই সংস্কারের সাথে আমরা একমত এবং এখানে অনেকগুলো সংস্কার আছে, যেগুলো ৩১ এর সাথে হুবহু মিল অথবা তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর এমন কিছু সংস্কার আছে, যেগুলো এখানে আসেই নাই, যেগুলো আমাদেরকে করতে হবে, যেগুলো আমাদের নেশনের প্রতি কমিটমেন্ট আছে, সেই বিষয়ে আমরা একমত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই সংস্কারগুলো যেগুলো আমরা অ্যাগ্রিড হয়েছি, এগুলো বাস্তবায়ন কীভাবে হবে? এটা গোড়ার প্রশ্ন।
আমরা কন্টিনিউয়েশন অব দ্য কনস্টিটিউশনে আছি। এই সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্যই আর্টিকেল ১০৬–এর অ্যাপ্লিকেশন হয়েছে। এখন যদি বলি যে আমরা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় নাই, তাহলে সেই ডিবেট আলাদা করতে হবে। যদি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় না থাকি, বাকি সবকিছু কিন্তু অবৈধ হয়ে গেল। যদি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় আছি, তাহলে আমরা আলোচনা করতে পারি। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা যদি না থাকে, তাহলে উপদেষ্টা পরিষদ অবৈধ হয়ে যাবে। যদি সেটা অবৈধ হয়, বাকি সবকিছু থেকে উৎপত্তি যা হওয়া হয়েছে, সেগুলো সব অবৈধ হয়ে যাবে। যদি আমরা কনস্টিটিউশনের কন্টিনিউয়েশনে না থাকি, সেটা আগে ডিসাইড করতে হবে।
আমি আছি, এটা এস্টাবলিশ করার পক্ষে। কারণ, আমরা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা যে রক্ষা করে কনস্টিটিউশন অনুসারে এই সরকার গঠিত হয়েছে, সেই সরকার ঐকমত্য কমিশন পর্যন্ত এসেছে সংস্কার কমিশন হয়েছে, এগুলো চিফ অ্যাডভাইজারের এখতিয়ার। কারণ, প্রধান নির্বাহীর এখতিয়ার আছে যে কোনো কমিশন গঠন করে অ্যাডভাইস দেওয়ার জন্য, রিকমেন্ডেশন দেওয়ার জন্য। এখন আমরা এখানে আলোচনা করছি, সেটা মেনেই তো করছি। সেটা আলোচনার প্রথম দিনেই তো আমরা বলতে পারতাম যে এটা কীভাবে গঠিত হলো? এই সংস্কার কমিশন কীভাবে গঠিত হলো? কেন হলো? কারা করল, এখতিয়ার কী? সে প্রশ্ন তো কেউ তুলি নাই আমরা।
যে বিষয়টা এসেছে যে প্রভিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার ২০২৫ নামে একটা ড্রাফট জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, সেটা পড়লাম। রেফারেন্স হিসেবে ওনারা বলেছেন, অবশ্য দলের নাম নিয়ে বলাটা উচিত হচ্ছে না, যেহেতু সবার সামনে আছে এ জন্য বললাম। আপনারা দয়া করে কিছু মনে করবেন না। প্রভিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার একটা হয়েছিল, তার আগে বাংলাদেশের প্রথম আইন হয়েছে...কন্টিনিউয়েন্স এনফোর্সমেন্ট অর্ডার ১৯৭১, ডেটেড ১০ এপ্রিল। সেকেন্ড প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার ১৯৭২, কখন হয়েছিল? যখন কনস্টিটিউশন ছিল না; যখন রাষ্ট্র গঠন করা হয়েছে, এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্সের মাধ্যমে। তাদের সোর্স অব পাওয়ার ছিল তখনকার গণপরিষদ নিজেদেরকে গঠন করল এবং ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্সের মাধ্যমে গণপরিষদ নিজেদেরকে ঘোষণা করে ভূখণ্ডের জন্য তারা নির্বাচিত হয়েছিল যদিও পাকিস্তানের জন্য। তারপরেও সেই ইলেকশনের প্রধানতম উদ্দেশ্য ছিল একটা কনস্টিটিউশন ফ্রেইম করা। যেহেতু সেই পার্লামেন্ট কল করার পরেও সেটা পেন্ডিং করে দেওয়া হলো, তখন নিজেদেরকে এই গণপরিষদ গঠন করা হলো এবং যেহেতু একতরফা যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সে জন্য নিজেদেরকে রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হলো। সেই গণপরিষদের মাধ্যমে সোর্স অব পাওয়ার হিসেবে প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রিপরিষদ গঠন করার ক্ষমতা দেওয়া হলো এবং তাদেরকে নির্বাহী ক্ষমতা, আইন প্রণয়নের ক্ষমতা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ সার্বিক ক্ষমতা দেওয়া হলো। তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট অর্ডারের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে এবং তত দিন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট অর্ডার অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে, যত দিন পর্যন্ত ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচন হয়ে, অধিবেশন হয়ে, স্থগিত হয়ে, রাষ্ট্রপতি অর্ডিন্যান্স জারির ক্ষমতা পেল না, তত দিন পর্যন্ত।
কনস্টিটিউশন গৃহীত হওয়ার পরে ৪ নভেম্বর ১৯৭২ অ্যাকশন দেওয়া হলো, এটার ইফেক্ট দেওয়া হলো ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২, তখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট অর্ডারেই চলেছে। এরপরে কনস্টিটিউশন অনুসারে পার্লামেন্ট ইলেকশন হয়েছে, পার্লামেন্ট গঠিত হওয়ার পরে সেশন হয়েছে, সেশন স্থগিত হওয়ার পরে যে কনস্টিটিউশন আর্টিকেল ৯৩ অনুসারে অর্ডিন্যান্স জারির ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট পেয়েছে, তার আগপর্যন্ত এই প্রেসিডেন্ট অর্ডারে (পিও) চলেছে।
এখন এগুলোকে সবগুলোকে লেজিটিমেসি কীভাবে দেওয়া হলো? সেই কনস্টিটিউশন গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে এবং যে আইনগুলো আমি কথা বললাম, সেগুলো সব রিপিল করা হয়ে গেল আর্টিকেল ১৫১ অনুসারে। বলা হলো, কনস্টিটিউশন ফ্রেইম হয়ে গেছে, এগুলো এখন রিপিল্ট। এখন যদি আমরা সেই অবস্থায় থাকতাম আমি বলতাম যে ঠিক আছে স্পেশাল প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অর্ডার এখন করা যাবে। আমরা কি সেই অবস্থায় আছি? নাই তো। আমাদের একটা কনস্টিটিউশন আছে, এই কনস্টিটিউশন আমরা মেজর অ্যামেন্ডমেন্টগুলো প্রপোজ করছি।
এখন ইম্পলিমেন্টেশনের পর্যায়ে আমাদের যে সাজেশন এবং ২৯টা দলের যে সাজেশন, সেটার রিটেন আপনাদেরকে দেওয়া হয়েছে। এই আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা যদি একটা জায়গায় যেতে পারি, তাহলে সবচাইতে খুশি হব আমরা। কারণ, এই আনসার্টেনিটি নিয়ে বেশি দিন আর কন্টিনিউ করা যাবে না।
আমি মনে করি, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা রাইটলি আর্টার করেছিলেন যে এটা একটা জাতীয় প্রতিশ্রুতি। এই জাতীয় প্রতিশ্রুতিটা রিটেনড অ্যাম্বেডেড করে আমরা যারা এখানে আলোচনা করছি সবাই মিলে অ্যাগ্রিড হই, সিগনেচারড করি। আমরা একটা বিশাল জাতীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সেটা লঞ্চ করি। জাতি দেখুক এবং এই প্রতিশ্রুতিগুলো ওয়েবসাইটে যাক। আমরা সবাই প্রত্যেকটা দলের ম্যানিফেস্টোতে সেটা উল্লেখ করি। উল্লেখ করার পরে সেটা এই কমিটমেন্টে যাই যে যারাই পার্লামেন্টে যাবে, তারা এটা বাস্তবায়ন করবে।
এখন প্রশ্ন আসে সেটার গ্যারান্টি কী? এই জবাব তো আমাদের কাছে নাই। সেটার গ্যারান্টি, প্রশ্ন যদি আপনারা তোলেন, তাইলে সেই জবাব আমরা দিতে পারব না। আমরা শুধু কমিটমেন্ট দিতে পারব। তবে আমরা তারপরও আহ্বান করেছিলাম, যদি এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইনগত ভিত্তির কথা আপনারা যাঁরা তুলছেন, সে রকম যেকোনো একটা আইনগত ভিত্তি যদি প্রসিডিউর যদি আপনারা বের করতে পারেন, তার সাথে আমরা একমত হব। সে জন্যই আমরা আলোচনায় আসছি। সেটা কি আপনারা বের করতে পেরেছেন? আজকে যে কাগজটা দিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে, যে ২৯টা দলের যে সমস্ত প্রস্তাব এই সনদ বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে তার মধ্যে মোদ্দা বিষয়ে ছয়টা আইটেম আপনারা এখানে কম্পাইল করেছেন যে এই মতামতগুলো এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে।
তারপর আপনারা এটাও বলেছেন যে পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ অন্তর্ভুক্ত হওয়া বিষয়সমূহকে, যার মধ্যে ভিন্নমত অবলিগ নোট অব ডিসেন্ট আছে উইদিন ব্র্যাকেট, সেগুলো চারভাবে বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন এর ওপর আমি আলোচনা করতে চাই।
এর বাইরের আলোচনাগুলো হচ্ছে আমাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত সেটার ওপর আলোচনা করা আমার সঠিক হবে না, যদিও ইতিমধ্যে কিছু করে ফেলেছি। এই চার ভাগের মধ্যে আপনারা দিয়েছেন অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এবং নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে। এই বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি যেগুলো কনস্টিটিউশনকে টাচ করে না সেগুলো আপনারা অধ্যাদেশ এবং নির্বাহী আদেশ এবং অন্যান্য আদেশের মাধ্যমে করতে পারেন।
কিন্তু তার বাইরে যেগুলো সাংবিধানিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় সে আলোচনাগুলোর মধ্যে আমরা এখন মোটামুটি আলোচনা এভাবে যেতে পারি যে আপনারা বলেছেন যে প্রেসিডেন্ট জিয়ার রেফারেন্সে, আমার ভাই জনাব হামিদুর রহমান আযাদও বলেছেন, অ্যাডভোকেট শিশির মনির সাহেবও বলেছেন। এই রেফারেন্সটা টেনেছেন যে প্রক্লেমেশন জারির মধ্য দিয়ে কনস্টিটিউশন কি চেঞ্জ করা হয়নি? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে কনস্টিটিউশন প্রক্লেমেশন জারির মধ্য দিয়ে চেঞ্জ হয়নি। কারণ, তখন কনস্টিটিউশন স্থগিত ছিল। স্থগিত থাকার কারণে রাষ্ট্র পরিচালনার স্বার্থে প্রক্লেমেশন জারি করতে হয়েছে। সেই প্রক্লেমেশন লেজিটিমেসি দিয়েছে কোথায়? বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের অধিবেশনে, সে ফিফথ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল আনার মধ্য দিয়ে। এটা একটা এক পৃষ্ঠার অ্যামেন্ডমেন্ট। যে প্রক্লেমেশনগুলোর মাধ্যমে এই যে কনস্টিটিউশনাল প্রভিশনগুলো জারি করা হলো, সেগুলোকে ফিফথ অ্যামেন্ডমেন্ট অন্তর্ভুক্ত করে চতুর্থ তফসিলে সেটা ইনক্লুড করে, এটাকে ফিফথ অ্যামেন্ডমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করা হলো। তার মধ্য দিয়ে বাকশালের বিলুপ্ত হলো, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন হলো এবং এরপর অন্যান্য যে যে চেঞ্জেস আসছে, জুডিশিয়ারির ক্ষেত্রে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ক্ষেত্রে, আরও অন্যান্য ক্ষেত্রে যে সমস্ত বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে সেটা গৃহীত হলো। কখন? যখন পার্লামেন্টের বৈধভাবে বিল আনা হলো তখন।
যদি এই প্রক্লেমেশনগুলো সংবিধান চেঞ্জ হয়েছে বলা হয়, এটা একটা রং ইন্টারপ্রিটেশন। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এটা ফরমান হিসেবে, প্রক্লেমেশন হিসেবে জারি হয়েছে। এখন যদি আমাদের সংবিধান বহাল থাকে, আপনারা যদি সবাই স্বীকার করেন যে সংবিধান বহাল আছে, তাহলে প্রক্লেমেশন জারি করার কোনো সুযোগ নেই এবং সংবিধান প্রক্লেমেশন জারির মধ্য দিয়ে স্পেশাল প্রভিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডারের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন করা যায় না। কারণ, সেই এখতিয়ার কারও নেই। সেই এখতিয়ারটা যদি প্রয়োগ করতে হয়, আপনাদের সাজেশন অনুসারে এখানে যেভাবে দেখেছি, প্রেসিডেন্টকে দেওয়া হবে সেই প্রফেশনাল অর্ডার জারি করার জন্য। প্রেসিডেন্ট আনকনস্টিটিউশনাল কাজটা করতে পারেন না। কারণ, আজকে উনি ইমিউনিটি অ্যান্ড প্রিভিলেজ ভোগ করছেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে। কালকে যখন উনি থাকবেন না, তখন তার কনস্টিটিউশনাল ভায়োলেশনের জন্য তার বিরুদ্ধে, এটার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা যাবে এবং সেটা প্রপার আদালতে যাবে।
কিন্তু আমরা কি সেই নজির স্থাপনের জন্য কোনো সাজেশন দিতে পারি? এবং যেটা আমার ভাই হাসনাত কাইয়ূম সাহেব বললেন যে প্রসিডিউরাল মিসটেকের কারণে নাল অ্যান্ড ভয়েড হয়ে যাবে, সে রকম কোনো প্রেসক্রিপশন কি আমরা দিতে পারি? আজকে আমরা আপনারা রাজনৈতিক দল হিসেবে উপযুক্ত আদালতে হয়তো এটা নিয়ে যাব না। যেহেতু আমরা এখানে সাইন করব। আমি ধরে নিলাম বিতর্কের স্বার্থে বাংলাদেশের যেকোনো সিটিজেন লিবার্টি টু গো টু প্রপার কোড যে এখানে কনস্টিটিউশন কি চেঞ্জ হয়ে গেল? বাংলাদেশে কি দুইটা কনস্টিটিউশন আছে? তখন কোর্ট কী বলবে? এ কনস্টিটিউশন কে চেঞ্জ করল? কার এখতিয়ার আছে? ফোরামটা কোথায়—এই প্রশ্নটা করবে। তাহলে আমরা যে জুডিশিয়ারিতে বিচার করছি, কোন কনস্টিটিউশন অধীনে করব?
আর এখানে একটা প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছে যে ফিফথ অব আগস্ট থেকে অথবা এখন থেকে সেটার কার্যকারিতা দেওয়া হোক। এখন যদি সেটার কার্যকারিতা দেওয়া হয়ে থাকে সে কনস্টিটিউশন প্রভিশনগুলো যদি চেঞ্জ হয়ে গেছে, অ্যামেন্ডমেন্ট হয়ে গেছে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে বর্তমান কনস্টিটিউশনের কী হবে? এই গভর্নমেন্ট কোথায় থাকে? বেসড অন হোয়াট প্রভিশন থাকবে? এখন কনস্টিটিউশনের ধারাবাহিকতা যদি থাকে, এক নম্বর স্বীকার করি আমি মনে করি, আছে এবং সেটার ওপর রাষ্ট্র চলছে। সে ক্ষেত্রে যদি একটা ওভারল্যাপিং অথবা ডুপ্লিকেশন অথবা এই কনস্টিটিউশনাল অ্যামেন্ডমেন্টগুলোকে যদি আমরা কার্যকারিতা দেই, তাহলে এটা তো দুইটা কনস্টিটিউশন চলার মতোই অবস্থা হবে। জুডিশিয়ারি কোনটা মানবে? অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কোনটা মানবে? এবং সিভিল রাইটস ক্ষেত্রে, প্রপার্টি রাইটের ক্ষেত্রে, যেকোনো ল এর আশ্রয় নেওয়ার ক্ষেত্রে আর্টিকেল ৩ অনুসারে কোনো সিটিজেন যদি যায়; তখন কোর্ট কোনটা মানবে? জুডিশিয়ারি কোনটা মানবে? কোন প্রভিশনটা মানবে? আর্টিকেল ৩১ অনুসারে সে যেন রিলিফ পাইতে পারবে তখন কোন কোন কনস্টিটিউশন অনুসারে যাবে, এগুলো সব আমার মনে হয় যে সমস্ত প্রস্তাবনা আসছে, এটা সাধারণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং এটা যৌক্তিক নয়।
সুতরাং আমরা একটা জায়গায় আসি যে আমরা একটা ন্যাশনাল কমিটমেন্টে যাই। সেই কমিটমেন্ট অনুসারে আমরা অঙ্গীকারনামায় সই করি এবং সেটা পরবর্তী জাতীয় সংসদে গৃহীত হওয়ার জন্য সবাই আমাদের যার যার ম্যানিফেস্টোতে উল্লেখ করি। এইটাকে ভায়োলেট করে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল ভবিষ্যতে রাজনীতি করবে, সে রকম কোনো সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।