
জামায়াত মুক্তিযোদ্ধা হলেও সমর্থন করতাম না বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় জামায়াতকে সমর্থন না করার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী কিংবা ইসলামী ছাত্রশিবির নিয়ে যখনই আমি কথা বলি এবং অনেক ক্ষেত্রেই তাদের প্রতি আমার সমালোচনা থাকে, বিরোধিতা থাকে, খুব কমন কতগুলো মন্তব্য থাকে, প্রচুর গালিগালাজ থাকে। অনেকে জানতে চান যে আমি কেন তাদের সমর্থন করি না? তারা এত ভালো, কেন তারপরও সমর্থন করছি না? তো আমি এই প্রশ্নটার একটু জবাব দেওয়া দরকার বলে মনে করি।
জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের একটা ভূমিকা আছে। আমরা ধরে নিই জামায়াতে ইসলামী ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেনি। তারা পাকিস্তানের পক্ষে থাকেনি। ধরে নিলাম তারা মুক্তিযুদ্ধই করেছে।
‘যখন আপনি ভালো আছেন বলে আপনি ঘাড় ধরে আমাকে ভালোটা মানাতে চাইবেন, এটা ফ্যাসিবাদ।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো ফর্মের আইডেন্টিটি পলিটিক্স আমি স্ট্রংলি ডিনাউন্স করি। একেবারে আমি কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। আমাদের জামায়াতে ইসলামী একটা ধর্মভিত্তিক আইডেন্টিটি পলিটিক্স করছে। তারা ইসলাম এবং শরীয়াহ আইন কায়েম করবেন বলেছেন। ইসলাম ধর্ম আর ইসলামিজম এক জিনিস না। আমরা যখন আইডেন্টিটিকে একটা ভিত্তি হিসেবে ধরি, তখন আরো নতুন নতুন আইডেন্টিটি এসে উদয় হয়। একটা উদাহরণ দিই। আমরা ৪৭-এ দেশভাগ করেছিলাম। আমাদের সামনে বলা হলো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হবে যেখানে মুসলিম মেজরিটি পাকিস্তান হবে। কিন্তু কিছুদিনের পরই দেখা গেল দুই পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হলো।’
‘ইসলামী আন্দোলন জামায়াতে ইসলামীকে ইসলামের শত্রু বলে মনে করে। হেফাজতে ইসলামের আমির বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে থাকলে ঈমান থাকবে না। তার মানে জামায়াতের সঙ্গ মানে আমরা ঈমানহারা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তার মানে ইসলামের মধ্যেও ডিফারেন্ট ইন্টারপ্রিটেশনস আছে এবং দল উপদল তৈরি হতে থাকে। সংকটের জায়গা কিন্তু এখানেই। একটার পর একটা আইডেন্টিটি বাড়তে থাকে এবং এটা মানুষের মধ্যে ক্রমাগত প্রবলেম তৈরি করতে থাকে।’
‘কিছুদিন আগে হাটহাজারিতে আহলে সুন্নাহ ও হাটহাজারি মাদরাসা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেনি। ভবিষ্যতে এটাকে কেন্দ্র করে মারাত্মক সংকট তৈরি হতে পারে। এটা যদিও পলিটিক্যাল ইস্যু না, কিন্তু দেখি যে আমরা এগুলোর মধ্য দিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। সুতরাং যখন রাজনীতিতে আসবে এটার সঙ্গে যখন ভোটের হিসাব জড়িত হবে তখন ক্রমাগত নতুন নতুন আইডেন্টিটি বের হতে থাকবে এবং একটা পর্যায়ে ইট উইলবি কমপ্লিট। আরেকটা জিনিস আমি সবসময় বলি, আইডেন্টিটি পলিটিক্স যত বেশি সামনে আসতে থাকে, তখন দলগুলো ওটাকে উসকে দিয়ে মানুষের ভোট পাওয়ার উপায় খোঁজার চেষ্টা করে।’