Image description
 

ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের বিশাল জয় নিয়ে সারাদেশে বেশ আলোচনা। শিবির এভাবে ঘুরে দাঁড়াবে এটা ছিল অনেকের চিন্তার বাইরে। কিন্তু গেল ১৭ বছরের নিপীড়ন, জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা ও জুলাই পরবর্তী এক বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীদের পাশে কল্যাণকর কাজে যুক্ত থেকে শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ভালোভাবেই জায়গা করে নেয়। যার ফল পেয়েছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে।

 

শিবিরের এ বিজয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কীভাবে দেখছেন-এমন প্রশ্নে গঠনমূলক কথা বলেছেন অনেকে। শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়, জনগণের বাস্তব সমস্যা নিয়ে কাজ না করলে মানুষ বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হবেন বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এবারের ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল রাজনৈতিক দলগুলোকে সে ধরনের বার্তা দিয়েছে। তারা বলেন, পুরোনো ন্যারেটিভ এখন আর চলে না। নতুন প্রজন্ম সামনের পথ নিজেদের মতো করে তৈরি করতে চায়। দলের নেতাকর্মীদের তরুণ ভোটারদের কথা বিবেচনায় রেখে কৌশল নির্ধারণের পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আসিফ শাহান যমুনা টিভিকে বলেন, তরুণদের প্রত্যাশার বিষয়গুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। নইলে আগামী দিনের রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে তার খেসারত দিতে হবে। জাতীয় রাজনীতিতেও জনমত তৈরিতে এর একটা প্রভাব থাকবে।

তিনি বলেন, বিদ্যমান বাস্তবতা পর্যালোচনায় আগামীর দিনগুলোতে হয়তো বিএনপি আর জামায়াতকে ছাড় দিতে চাইবে না। তবে ভোটের প্রচারণায় ৭১-এর ঘটনাকে ফোকাস করা ভুল ন্যারেটিভে পরিণত হয়েছে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. এম জসিম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ডাকসুতে ছাত্র-ছাত্রীরা যাদের যোগ্য মনে করেছে, তাদের ভোট দিয়েছে। তবে এবার যোগ্যতম প্রার্থীকে শিক্ষার্থীরা পছন্দের শীর্ষে রেখেছেন। কোনো পেশি শক্তিকে তারা পরোয়া করেনি। এবারের ডাকসুর ফলাফল বলে দিচ্ছে; ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীরা পেশি শক্তিকে কোনো গুরুত্ব দেবে না।

তিনি বলেন, ছাত্রদল বা অন্যরা পুরোনো ধ্যানধারণা নিয়ে কাজ করছে। যেটা শিক্ষার্থীরা পছন্দ করেনি। ব্যতিক্রমী নানা কার্যক্রম দিয়ে শিবির শিক্ষার্থীদের মন জয় করেছে। ডাকসুর নির্বাচনের ফলাফল এই বার্তাও দিয়ে গেল যে, ট্যাগিংয়ের রাজনীতি আর নতুন প্রজন্ম গ্রহণ করবে না। তিনি আরও বলেন, ডাকসুতে শিবিরের একচ্ছত্র বিজয় মূলত ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সমর্থন প্রকাশ পেয়েছে। ভবিষ্যতের রাজনীতিতে এ বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সেসব দিক বিবেচনা করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ যমুনা টিভিকে বলেন, দলের ইমেজটা যদি ক্রমাগতভাবে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী হয়ে যায়, তাহলে মানুষ বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হবে। তখন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার ন্যারেটিভে কাজ হবে না। মানুষ কী চায়? মানুষ চায় দিনশেষে তিনবেলা তারা খেতে পারবে, তারা আইনের শাসন পাবে এবং স্বাধীনভাবে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারবে।