Image description

দেশের জন্য ছেলে জীবন দিয়েছে। তার জীবনের বিনিময়ে দেশটা যেন সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে চলে। এই চাওয়া শহীদ আশরাফুল আলমের মা মাহমুদা বেগমের।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সঙ্গে আলাপকালে তিনি তার এ চাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, দেশে বৈষম্য, অস্থিরতা ও নৈরাজ্যের কারণে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে আমার ছেলে জীবন দিয়েছে। সে দেশকে মুক্ত করেছে। আমি চাই আমার ছেলের জীবনের বিনিময়ে দেশ সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে চলুক। মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে।

গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চূড়ান্ত দিনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বানিয়াচং উপজেলার জাতুকর্নপাড়া গ্রামের মো. আশরাফুল আলম।

আন্দোলনে যোগ দিয়ে মাত্র ১৮ বছরেই অকালে ঝরে গেছে একটি তাজা প্রাণ। তার বাবা আব্দুন নূর একজন দিনমজুর। মা মাহমুদা বেগম গৃহিণী। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে আশরাফুল ছিলেন পঞ্চম।

আশরাফুল শহীদ হওয়ার পর ইতোমধ্যে জেলা জামায়াত ২ লাখ টাকা, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ ৫০ হাজার, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান চৌধুরী জীবন ৫০ হাজার ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং সর্বশেষ সরকার থেকে ৫ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা আব্দুন নূর।

স্থানীয়রা জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে বানিয়াচং উপজেলার ছাত্র-জনতা। গত ৫ আগস্ট হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় থানা প্রাঙ্গণে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে রাজমিস্ত্রী আশরাফুল আলম গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

শহীদ আশরাফুল আলমের মা মাহমুদা বেগম বলেন, আমার পরিবারের মধ্যে আশরাফুল ছিলেন উপার্জনের অন্যতম ব্যক্তি। বিভিন্নভাবে টাকা পেয়েছি। কিন্তু তা দিয়ে পুত্রশোক ভোলা যায় না। ছেলেকে হারিয়ে আমি শূন্য হয়ে গেছি। দিনরাত কেবল কাঁদি।

তিনি বলেন, আমার ছেলে ছিল কাঠমিস্ত্রি। তার পুরোনো সহপাঠীর কথায় সে আন্দোলনে চলে যায়। সেখানে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায়।

তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি রাখেন, তার পরিবারকে যেন একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তিনি দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনারও দাবি জানান।

আশরাফুল আলমের বাবা আব্দুন নূর বলেন, আমি একজন দিনমজুর। আমার ছেলে পরিবারে সুখ ফিরিয়ে আনতে দিনরাত পরিশ্রম করত। কিন্তু একটি গুলি সব শেষ করে দিল।

আমি পুত্রহারা হয়ে পড়েছি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমরা এক আত্মীয়ের মাধ্যমে খবর পেয়েছিলাম। কিন্তু তাকে আর জীবিত দেখতে পাইনি।

তিনি ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বলেন, আমি চাই ছেলে হত্যার সঠিক বিচার। ছেলে হত্যায় প্রকৃত অপরাধীরা যদি শাস্তি পায় তাহলে আমরা শান্তি পাব। পাশাপাশি কোনো নিরীহ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।