
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এই প্যানেলে শেখ নূর উদ্দিন আবীরকে সহসভাপতি (ভিপি), নাফিউল ইসলাম জীবনকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও জাহিন বিশ্বাস এষাকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী করা হয়েছে।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক রাকসু নির্বাচনের এই প্যানেল ঘোষণা করেন।
শেখ নূর উদ্দিন আবীর শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী, নাফিউল জীবন শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক ও আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী এবং জাহিন বিশ্বাস এষা শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সঙ্গীত বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী।
শেখ আবীর ও নাফিউল জীবন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে আওয়ামী শাসনামলে নিজ ক্যাম্পাসেই কয়েকবার মারধরের শিকার হন। এ ছাড়া তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও রেখেছিলেন ভূমিকা।
ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। তার বাসা মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার চৌগাছি গ্রামে। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। তার বাবা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও মা গৃহিণী। বিএনপির মিছিলে যাওয়ায় ২০২৩ সালের ২২ মে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে ছাত্রলীগ নেতা সাকিবুল হাসান বাকির হাতে মারধরের শিকার হন আবীর। তখন তিনি রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন।
ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী শেখ আবীর সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান করে বলেন, ‘আমি সবার কাছে অনুরোধ করছি, মূল্যবোধ, নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে আমাদের আপনারা মূল্যায়ন করবেন এবং ভোট দেবেন। মনে রাখবেন, ফ্যাসিবাদের দমনের সময় যারা নির্যাতিতদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করেছে, যারা নৈতিক চরিত্র ধরে রেখে রাজপথে সংগ্রাম করেছে—তাদেরই রাকসুতে আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।’
ছাত্রদল মনোনীত জিএস পদপ্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবনের বাসা রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার মণিগ্রাম ইউনিয়নের হাবাসপুর গ্রামে। তার বাবা নুর হোসেন একজন ব্যবসায়ী ও মা মমতাজ বেগম গৃহিণী। ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হন নাফিউল। রাবি ছাত্রদলের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ আলী ও তাকে মারধর করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাকিবুল হাসান বাকী, মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিয়াদ, সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের কর্মী মুন, দর্শন বিভাগের ছাত্র টিপু সুলতান। ওই দিন দুপুরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনের একটি চায়ের দোকানে এ ঘটনা ঘটে।
২০২৪ সালের ৮ মে নাফিউল ও তার বন্ধুকে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর, মানসিক নির্যাতন ও পিস্তল ঠেকিয়ে ভয়ভীতি দেখায় রাবি শাখার তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল গালিব ও তার অনুসারীরা। ওই দিন রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হল কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে তাকে মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে তাকে মারধর করা হয়।
নির্বাচন নিয়ে নাফিউল জীবন বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এত দিন শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সেই অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং রাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে, এ জন্য প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা আশা করি, এই নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার যথাযথ প্রতিফলন ঘটবে।’
ছাত্রদল মনোনীত এজিএস পদপ্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা সংগীত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী। তার বাবার নাম এ কে বিশ্বাস বাবু। তিনি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মায়ের নাম মোছা. আফরোজা খাতুন। তিনি গৃহিণী। দুইবোন ও একভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার, রাজশাহী-এর উপস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ছাত্রদল মনোনীত এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা বলেন, ‘ছাত্রদল একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন। আসন্ন রাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মাঝে ভোটের আমেজ সৃষ্টি করা এবং একটি উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা আমাদের প্যানেল ঘোষণা করেছি। এখানে প্রত্যেক প্রার্থীই তার নিজ যোগ্যতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার ভিত্তিতে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের এই প্যানেলকে সাদরে গ্রহণ করবেন এবং তাদের মূল্যবান ভোটের মাধ্যমে সেটি প্রমাণ করবেন।’
তিনি বলেন ‘আমাদের প্যানেলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সবাই নিয়মিত শিক্ষার্থী, যারা শিক্ষা, গবেষণা ও পড়াশোনার প্রকৃত পরিবেশকে আন্তরিকভাবে অনুভব করে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মুক্ত, নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ যেখানে তারা ভয়মুক্ত হয়ে নিজেদের মেধা ও সৃজনশীলতা বিকশিত করতে পারবে।’
এষা আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-অধিকার রক্ষা, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠা এবং অ্যাকাডেমিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা বিশ্বাস করি, যদি সবাই একসাথে কাজ করি, তবে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও গবেষণামুখী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’