Image description

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম ও মামুন মিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এর মধ্যে ছয় দিন পর জ্ঞান ফিরেছে সায়েমের। 

এদিকে মাথার খুলির একটি অংশ ফ্রিজে রাখা মামুন মিয়া হাঁটাচলা করেছেন। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) তার হাঁটাচলার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। 

মামুনের মামা নাজমুল তালুকদার বলেন, মামুনকে হাঁটাচলা করানোর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় নানা সমালোচলা হচ্ছে। এতে আমরাও বিব্রত হচ্ছি। একজন গুরুতর আহত ব্যক্তি কিভাবে এত সহজে হাঁটাচলা করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে হাঁটাচলা করানো চিকিৎসার একটি অংশ। এক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রুমের ভেতর এটি করতে পারতেন। তাহলে হয়তো ছবি নিয়ে এ ধরনের সমালোচনা হতো না।  

জানা গেছে, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিয়ার রহমান চবির আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে পার্কভিউ হসপিটালে যান। গিয়ে তিনি দেখতে পান মামুন মিয়াকে হাঁটানোর চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা। এ সময় একটি ছবি তুলেন। সেটি নিজের ফেসবুক আপলোড করে তিনি লিখেছেন, কিছুক্ষণ আগে পার্কভিউ হাসপাতালে এলাম আহতদের দেখতে। আলহামদুলিল্লাহ, মামুন হাঁটছে, ছোট ছোট করে কথা বলছে। অপারেশনে অংশ নেওয়া নিউরোসার্জন তাকে হাঁটালেন। কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করলাম।

পার্কভিউ হসপিটালের ব্যবস্থাপনা চিকিৎসক ডা. এটিএম রেজাউল করিম যুগান্তরকে বলেন, সায়েমের অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতির দিকে। তার কনশাস লেভেল ১৪ থেকে ১৫-তে রয়েছে। রোববার তাকে নিয়ে মেডিকেল বোর্ড বসেছে। তাকে মুখে খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।

মামুন মিয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে ডা. রেজাউল করিম বলেন, মামুন মিয়াকে হাঁটাচলা করানো চিকিৎসার একটি অংশ। তবে একজন শিক্ষক সেই ছবিটি ফেসবুকে আপলোড করায় কেউ কেউ হয়তো ভিন্নমত পোষণ করছেন। কিন্তু এখানে হসপিটাল কর্তৃপক্ষের কোনো অবহেলা কিংবা চিকিৎসার ত্রুটি নেই।

তিনি বলেন, সায়েম ও মামুন মিয়াকে যখন হাসপাতালে আনা হয়েছে তখন প্রায় মৃত। আমরা ঢাকায় রেফার করতে পারতাম। সেক্ষেত্রে তারা হয়তো মারা যেত; কিন্তু সেটি আমরা করিনি। আমরা সাহস করে তাদের চিকিৎসা করেছি। একাধিকবার মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা রেসপন্সও করছে। এক্ষেত্রে প্রশংসা না করে যদি সমালোচনা করা হয়, তাহলে চিকিৎসকদের মধ্যে উৎসাহ কমে যাবে।  

আহত সায়েম চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের এবং মামুন সমাজতত্ত্ব বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। গত ৩১ আগস্ট থেকে তারা নগরীর বেসরকারি পার্কভিউ হসপিটালে চিকিৎসাধীন।   

সায়েমের মায়ের বরাত দিয়ে তার সহপাঠী তৌহিদুল ইসলাম তানভীর বলেন, শনিবার মেডিকেল বোর্ডের উপস্থিতিতে সায়েমের লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি এখন স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছেন। 

রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সায়েম তার মা, বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি সবাইকে চিনতে পারছেন। তার মাকে বলেছেন- হামলাকারীরা তাকে কুকুরের মতো মেরেছে। এই বলে সায়েমের মা কান্নায় ভেঙে পড়েন।   

৩০ আগস্ট রাতে চবির ২ নাম্বার গেট এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে ৩১ আগস্ট দুইপক্ষের মধ্যে দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে চার শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।