Image description

গতকাল শুক্রবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবার শরিফ ও তার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের ‘মব সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তাদেরকে ক্রস ফায়ারে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) প্রতিরোধ পর্ষদ থেকে ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। তার এ দাবির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আরেক ভিপি প্রার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। যদিও সমালোচনার মুখে দাবি প্রত্যাহার করেন ইমি। 

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়ে আব্দুল কাদের এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।  

ফেসবুকে আব্দুল কাদের লেখেন, ডাকসুতে ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি আজকে ‘মব সন্ত্রাস’ এর সাথে জড়িতদের ক্রস ফায়ারে দেওয়ার কথা বলেছেন। ক্রস ফায়ারে মানুষ খুন তথা বিচার বহির্ভূত হত্যা খুনি হাসিনার রেখে যাওয়া ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতি এবং চরমতম মানবাধিকার লঙ্ঘন। প্রায় ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ২৭০০ নাগরিককে খুনি হাসিনা ক্রস ফায়ারে খুন করিয়েছে। একজন নাগরিক যতো বড় অপরাধই করুক না কেন; তাকে ক্রস ফায়ারের মতো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার করার কিংবা সেই লক্ষ্যে বয়ান উৎপাদন করার কোনো অধিকার নাই।

তিনি আরও বলেন, আজকে রাজবাড়ীতে মাজার থেকে লাশ তুলে পোড়ানোর ঘটনায় আমি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। কিন্তু এর জন্য যারা ক্রস ফায়ারের দাবি করছে বা ক্রস ফায়ারের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন করছে, তারা এরচেয়ে বেশি ঘৃণ্য কাজ করছে। তারা নতুন করে নাগরিকদের অধিকার হরণের রাজনীতি শুরু করেছে। জনাব তাসনিম আফরোজ ইমির এই গণবিরোধী অবস্থানের বিরুদ্ধে আমার সরব অবস্থান জানিয়ে রাখলাম। উনাকে এবং উনার প্যানেলকে এই ব্যাপার শীঘ্রই নিজেদের অবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিকট পরিষ্কার করতে হবে।

এর আগে শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি তার ফেসবুকে লেখেন, বন্যেরা বনে সুন্দর, মব সন্ত্রাসেরা ক্রস ফায়ারে (ওপেন এন্ড শাট কেইস হইলে)। কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেয়া, পোড়া হাড়গোড় চেয়ার দিয়ে পেটানোর মতো বিকৃত ‘প্রেশার গ্রুপ’ এরপর আপনার, আমার- যে কারোর সাথেই এরকম করতে পারে। করবেও দেইখেন। অথচ এইসব ডিজার্ভ করে ইউনুস, জাহাঙ্গীর কিংবা সংস্কারমারানি গং!

এরপর তিনি সেই স্ট্যাটাসটি সমালোচনার মুখে এডিট করে লেখেন, বন্যেরা বনে সুন্দর, মব সন্ত্রাসেরা থানার ভেতর (ক্রসফায়ার লিখসিলাম, এডিট করসি যৌক্তিক বিরোধিতায়)। কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেয়া, পোড়া হাড়গোড় চেয়ার দিয়ে পেটানোর মতো বিকৃত ‘প্রেশার গ্রুপ’ এরপর আপনার, আমার- যে কারোর সাথেই এরকম করতে পারে। করবেও দেইখেন। অথচ এইসব ডিজার্ভ করে ইউনুস, জাহাঙ্গীর কিংবা সংস্কারমারানি গং!

ইমির ‘ক্রসফায়ারের’ দাবির বিরুদ্ধে আব্দুল কাদেরের প্রতিবাদের পর ফের আরেকটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। এতে তিনি লেখেন, এনসিপির জুলাই পদযাত্রা যখন গোপালগঞ্জে গিয়ে লংমার্চ হয়ে যায়, তখন আর্মির গুলিতে প্রাণ হারায় ৫টা গরিব মানুষ। এনসিপির লেজুড় সংগঠনের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের সে সময় কোনো প্রতিবাদ করেছিল কিনা, আমার স্মরণে নেই। একইভাবে গতবছর যখন হাসনাত, সার্জিসরা মব করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চেঞ্জ করে, আনসারদের আন্দোলনের সময় যখন একজনের প্রাণ যায়, গাজীপুরে রাতের বেলা মব করার সময় যখন একজন জুলাই যোদ্ধা নিহত হয়, আজকে যখন পুলিশের গুলিতে দুই বছরের শিশু খুন হয় তখনও কাদের চুপ। 

তিনি বলেন, এনসিপির অনেকেই আমাকে আওয়ামীলীগের দালাল ট্যাগ দিয়েছিল গোপালগঞ্জে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করার কারণে। গত এক বছর ধরে বিচারবহির্ভূত খুন নিয়ে ক্রমাগত চিল্লায়ে গিয়ে সফট আওয়ামীলীগার ট্যাগ জুটেছে আমার কপালে, কিন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আটকানো যায় নাই। মূলত এনসিপির নেতাকর্মীদের ৫ আগস্টের আগের এবং পরের দ্বিচারিতার কারণেই আমি জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে বের হয়ে আসি। 

ইমি আরও লেখেন, আমি এই বছরের মার্চে টানা আটদিন শাহবাগে পড়ে থাকি দেশজুড়ে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ, হেনস্তার প্রতিবাদে। মূলত তখন থেকেই আমার সাথে ইসলামোফেসিস্টদের দ্বন্দ্ব প্রত্যক্ষ হয়। মবের বিরুদ্ধে আমি ক্রমাগত প্রতিবাদ করার পরেও মানুষ এড়ায়ে গেছে। মব সন্ত্রাসীদের ক্রস ফায়ার চাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল ইসলামোফেসিস্টদের মুনাফেকি সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়ে দেওয়া। দিসি সেটা আমি। আমার বক্তব্যে রিঅ্যাকশন দেওয়া অধিকাংশ মানুষ আজকের ঘটনা, গত এক বছরের বিচারবহির্ভূত খুন নিয়ে টু-শব্দ করসে কিনা, এদের আইডিতে গিয়ে দেখেন গা। আজকে এরা আমাকে খুনি, সাইকো বলছে। অথচ এদের কাওকেই আপনারা গত এক বছরের বিশৃঙ্খলা নিয়ে টু-শব্দ করতে দেখবেন না। 

সবশেষে শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, এদের অন্তত একজন এসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামুক। কথা দিচ্ছি তার সাথে আন্দোলনে শামিল হব। কিন্তু সিলেক্টিভ প্রতিবাদের নামে এদের ফ্যাসিবাদ আপনারা দেখে, বুঝেও চুপ থাকবেন। আমাকে গালাগাল করে বেড়াচ্ছেন এটা নতুন কিছু না। এর মধ্যে আমার প্যানেলকে টাইনেন না। আমার প্যানেলের পরামর্শে বা সিদ্ধান্তে আমি আগের পোস্ট দেইনি। ব্যক্তিগত মতামত শেয়ার করেছি। আমার আগের পোস্টের বক্তব্য আমি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।