
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টিতে বিভাজন ও বিভক্তি নতুন কিছু নয়। এরশাদের জীবদ্দশায় দলটি ভেঙেছে পাঁচবার; তার মৃত্যুর পরও হয়েছে আরও কয়েক দফা। সব মিলিয়ে ৩৯ বছরের রাজনৈতিক যাত্রায় ভাঙা-গড়ার খেলাই যেন দলটির নেশায় পরিণত হয়েছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভাঙন ছাপিয়ে জাতীয় পার্টি ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দুটি বিষয়—গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনকে বৈধতা দেওয়ার দায় এবং একতরফা নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ। এসব নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পেছনে প্রতিবেশী দেশের চাপ ছিল বলেও স্বীকার করেছিলেন খোদ এরশাদ। এখন দলটির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এ নিয়েও মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
পার্টির ভেতরে বিতর্ক তৈরি হওয়া আরেকটি প্রসঙ্গ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাতি সাকিব রহমানকে ঘিরে। পরিবারের সদস্য হওয়ায় পড়াশোনা শেষ করেই তিনি ২০১৯ সালের কাউন্সিলে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদ পান। তবে প্রতিবেশী দেশের আপত্তির কারণে তাকে বাদ দেয়া হয়।
চ্যানেল 24-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব রহমান বলেন, ২০২২ সালের মে মাসে পাকিস্তান হাইকমিশনে এক নৈশভোজে তিনি শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেখানকার একটি ছবি ভারতীয় হাইকমিশনারের রাজনৈতিক সচিব অনিমেষের হাতে গেলে তিনি জিএম কাদেরকে মেসেজ করে বলেন, আমাকে যেন পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
যদিও এ অভিযোগ মানতে নারাজ দলের নবনিযুক্ত মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তার ভাষায়, কিছু কারণে তাকে খুব সম্মানজনকভাবেই রাজনীতি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে চেয়ারম্যান স্যার তাকে অনেকবার ডেকেছেন, তবে তিনি আর পার্টিতে যোগ দেননি।
নতুন মহাসচিব আরও বলেন, রাজনৈতিক কারণে যদি আমরা কোন একটি দেশের সঙ্গে শত্রুতা করি তবে এর প্রভাব পরবে আমাদের অর্থনীতিতে, আমাদের সীমানায়। ভারত বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা।
রাজনীতি বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামানের মতে, অব্যাহত ভাঙন, ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠার সহযোগী ও প্রতিবেশী দেশের নিয়ন্ত্রণ- এই তিন কারণে তলানিতে ঠেকেছে জাতীয় পার্টির অবস্থান। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে এমন পরিণতি অন্য দলগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসেবেও দেখছেন এই বিশ্লেষক।