
ঢাকায় যখন জাতীয় পার্টির নিষিদ্ধের দাবি তুলে কার্যালয়ে হামলা চলছে তখন দলটির দুর্গ খ্যাত রংপুর বিভাগে সংগঠিত করা ও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী বাছাইসহ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
এরই অংশ হিসেবে শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে বিশেষ সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলার সভাপতি সম্পাদকসহ নেতাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
পার্টি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে পরিচিত রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে অভাবনীয় ফল পাওয়ার আশা করছে দলটি। বিশেষ করে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয়ী হবেন বলে আশা করছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
সে কারণে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে জাতীয় পার্টির রংপুর বিভাগীয় সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলার শীর্ষ এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফ্রেরুয়ারি মাসে যে সংসদ নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াত ও এনসিপির ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তার ওপর পিআর পদ্ধতি দাবি করা এবং সংসদ নির্বাচন বয়কট করার কথা বলে বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি অবস্থা তৈরি করার অপচেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না বলে ইতিমধ্যে একটা অবস্থা ও দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি করে নানান ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
ওই নেতা আরও বলেন, ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে একাধিকবার হামলা আগুন দেওয়াসহ নানান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে।
রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে আমাদের দলের কার্যালয়ে হামলা অগ্নিসংযোগ আর মব করে হচ্ছে, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি করা হচ্ছে। এতে জাতীয় পার্টির পিঠ দেয়ালে ঠেকলেও দলের নেতাকর্মীরা এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। দলের নেতাকর্মীরা আবারও চাঙা হচ্ছে, ঢাকায় দলের নেতাকর্মীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত। একই অবস্থা সারা দেশে বিরাজ করছে। এই অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টি অভাবনীয় আসনে জয়ী হবে।
একই কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা জাপার আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতি মানুষের আস্থা আবারও ফিরে এসেছে। যতই অন্যায় অত্যাচার করা হবে জাতীয় পার্টি ততই সংগঠিত হবে। রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে আবারও জাতীয় পার্টি হারানো আসন গুলো পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে। সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে সব অসম্ভবকে সম্ভব করে অনেক অনেক বেশি আসনে জয়ী হবে।
পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির বলেন, জাতীয় পার্টি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে এবং রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দেবে। এ জন্য শনিবার বিশেষ সভা আহ্বান করা হয়েছে।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে যারা নিষিদ্ধ করার কথা বলছেন তাদের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। আর একটি দল তো একটি আসনেও জয়ী হওয়ার ক্ষমতা নেই। তাদের বড় বড় কথা। গত এক বছরে যারা মববাজি সন্ত্রাস, চাাঁদাবাজি, দখলবাজি করেছে- জনগণ তাদের এবার লালকার্ড দেখাবে।
বিএনপিকে মুক্তিযোদ্ধার দল আখ্যায়িত করে বলেন, আগামী নির্বাচনে আমাদের সঙ্গে বিএনপির প্রতিযোগিতা হবে। যারা আমাদের দলের কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দিয়ে মব সন্ত্রাস করছে তাদের দেশের জনগণ আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান রংপুর মহানগর সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমরা আমাদের দুর্গ রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় দলকে আরও সুসংগঠিত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। শনিবার রংপুর বিভাগের ৮ জেলার সভাপতি সম্পাদকদের সঙ্গে বিশেষ সভা করবো, এ জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা আন্দোলন আর নির্বাচন দুটোই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করাসহ নানাবিধ আলোচনা হবে।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গ ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমাদের ওপর চোখ তুলে তাকানোর চেষ্টা রংপুরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে।