Image description

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে ইসলামী ছাত্রশিবির। তখনই জানা যায়, নেপথ্যে থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন কর্মসূচি ঠিক করা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন মো. আবু সাদিক কায়েম। তিনি যে শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, সেটিও তখন সামনে আসে। এখন অবশ্য তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক।

গণ-অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাদিক কায়েম বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর এই পরিচিতি কাজে লাগিয়ে ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে চাইছে শিবির। ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্যানেলের নাম ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। এই প্যানেলের ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী সাদিক কায়েম। তাঁকে কেন্দ্রে রেখেই মূলত প্রচার চালাচ্ছে সংগঠনটি।

গণ-অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাদিক কায়েম বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর এই পরিচিতি কাজে লাগিয়ে ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে চাইছে শিবির।

শিবিরের প্যানেলের পাঁচজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শিবিরের নেতাদের মধ্যে সাদিক কায়েমের ভূমিকা বিশেষভাবে আলোচিত হওয়ায় সংগঠনের বাইরেও তাঁর পরিচিতি বিস্তৃত হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত যোগাযোগ–দক্ষতাও ভালো। এ ছাড়া গত এক বছরে অনিয়মে জড়ানোর তেমন কোনো অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠেনি। সাদিক কায়েমের এই পরিচিতির জন্যই প্রচারের ক্ষেত্রে তাঁকে সামনে রাখা হচ্ছে।

অনলাইনে প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন আবাসিক হলে সশরীর গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন শিবিরের প্রার্থীরা। তাঁরা নিয়মিত বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউটে যাচ্ছেন। ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে নিজেদের প্রচারের ভিডিও–ছবি নিয়মিত পোস্ট করছেন শিবিরের নেতারা। সেখানে সাদিক কায়েমের মুখটিই ঘুরেফিরে বেশি দেখা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি ডাকসুর বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে শিবিরের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের বিভিন্ন কার্যক্রমও তুলে ধরার চেষ্টা করছে সংগঠনটি।

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্যানেলের নাম ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। এই প্যানেলের ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী সাদিক কায়েম। তাঁকে কেন্দ্রে রেখেই মূলত প্রচার চালাচ্ছে সংগঠনটি।
ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্যানেলের নাম ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’
ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্যানেলের নাম ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ফাইল ছবি: প্রথম আলো

অনাবাসিক এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন শিবিরের প্যানেলের প্রার্থীরা। ভোট নিয়ে এই প্যানেলের পাঁচজন প্রার্থীর দাবি হচ্ছে, গত এক বছরে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমূলক কাজ করেছে শিবির। যে কারণে তাদের একটি ‘ভোটব্যাংক’ তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া মাদ্রাসা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশের ভোট তাঁরা পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ‘কোচিং’ করে আসা শিক্ষার্থীদের একটি অংশের ভোটও পাবেন তাঁরা। এর ফলে অন্য প্যানেলগুলোর চেয়ে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন বলে তাঁরা আশাবাদী।

অনলাইনে প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন আবাসিক হলে সশরীর গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন শিবিরের প্রার্থীরা। তাঁরা নিয়মিত বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউটে যাচ্ছেন। ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে নিজেদের প্রচারের ভিডিও–ছবি নিয়মিত পোস্ট করছেন শিবিরের নেতারা।

ছাত্রীদের জন্য প্রতিশ্রুতি

ছাত্রীদের ভোট শিবির কতটা পাবে, তা নিয়ে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যেও আলোচনা হচ্ছে। এ রকম ১২ জন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, শিবির ডাকসুতে নির্বাচিত হলে ক্যাম্পাসে নারীদের চলাচলে নানা বিধিনিষেধ আসতে পারে, এমন প্রচার ক্যাম্পাসে রয়েছে।

শিবিরের প্যানেল যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে, তাতে ছাত্রীদের জন্য অন্তত সাতটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এগুলো হলো—ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করা, ছাত্রীদের হলে প্রবেশের (ছাত্রীদের) ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করা, ছাত্রীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান কার্যকর করা, একাডেমিক ভবনগুলোতে বিনা মূল্যে ‘মেন্সট্রুয়াল হাইজিন প্রোডাক্ট’ সহজলভ্য করা, ছাত্রীদের জন্য ‘সেলফ ডিফেন্স’ প্রশিক্ষণের আয়োজন, যৌন হয়রানি ও সাইবার বুলিং প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ বাস্তবায়ন এবং কমনরুমে নারী কর্মচারী নিয়োগ, ব্রেস্ট ফিডিং রুম ও চাইল্ড কেয়ার কর্নার স্থাপন।

এবার ডাকসুতে মোট ভোটারের প্রায় ৪৮ শতাংশ ছাত্রী। ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯ জন।

আমাদের প্যানেলের শক্তি হচ্ছে অন্তর্ভুক্তি। মুসলিম-অমুসলিম, বাঙালি-অবাঙালি, হিজাবি-নন হিজাবি, ছাত্রশিবিরের পক্ষে ও সমালোচক—সবাই আমাদের প্যানেলে আছেন।
এস এম ফরহাদ, শিবিরের প্যানেলের জিএস প্রার্থী ও সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি
 

ভোটের সমীকরণ

ক্যাম্পাসে আলোচনা আছে, ১৮টি হল সংসদের নির্বাচন নিয়ে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে শিবির। দলীয় প্যানেল না দিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের বিভিন্নভাবে সমর্থন দিচ্ছে সংগঠনটি। এর মধ্য দিয়ে হল সংসদগুলোতে পছন্দের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার চেষ্টা করছে শিবির।

জগন্নাথ হলের ভোট শিবির সেভাবে পাবে না, এমন আলোচনা আছে ক্যাম্পাসে। মোট ভোটারের প্রায় ৬ শতাংশ এই হলে থাকেন। এই হলে ভোটার ২ হাজার ২২২ জন। তাঁরা সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্য শিবিরের ইশতেহারে আলাদা করে তেমন কিছু বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, ডাকসুতে নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ের অবকাঠামোগত সংস্কার ও উন্নয়ন করবে তারা।

ছাত্রীদের ভোট ও জগন্নাথ হলের ভোটকে এবারের ডাকসু নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর (নির্ধারক বিষয়) হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শিবির পিছিয়ে আছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। তবে শিবিরের নেতারা বলছেন, তাঁরা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল করেছেন। তাঁদের প্যানেলে চারজন নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন, আছেন চাকমা সম্প্রদায়ের একজন। ফলে ছাত্রীরা ও জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ওপর আস্থা রাখবেন।

ছাত্রীদের ভোট শিবির কতটা পাবে, তা নিয়ে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যেও আলোচনা হচ্ছে। এ রকম ১২ জন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, শিবির ডাকসুতে নির্বাচিত হলে ক্যাম্পাসে নারীদের চলাচলে নানা বিধিনিষেধ আসতে পারে, এমন প্রচার ক্যাম্পাসে রয়েছে।

শিবিরের প্যানেলের জিএস প্রার্থী ও সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্যানেলের শক্তি হচ্ছে অন্তর্ভুক্তি। মুসলিম-অমুসলিম, বাঙালি-অবাঙালি, হিজাবি-নন হিজাবি, ছাত্রশিবিরের পক্ষে ও সমালোচক—সবাই আমাদের প্যানেলে আছেন।’

ভোটের প্রচারের বিভিন্ন পর্যায়ে শিবিরের প্যানেলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি ছাত্রসংগঠনের প্রতি পক্ষপাত দেখাচ্ছে। তাদের প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও নানাভাবে ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন শিবিরের নারী প্রার্থীরা।

শিবিরের প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী মুহা. মহিউদ্দীন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের বিরুদ্ধে কৃত্রিমভাবে একধরনের হিংসা বা ক্রোধ তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশাসন এসব ঘটনায় ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’