
আগামী জাতীয় নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতেই হতে হবে বলে আবারো নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বিএনপি। এ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষেও নয় দলটি। নেতাদের ভাষ্য, দেশের মানুষ পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) কী সেটা বোঝে না। সংবিধানেও পিআর নেই এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও তা বাস্তবসম্মত নয়। গত সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে নেতারা বলেছেন- আওয়ামী লীগের অপকর্ম ও গণহত্যার যেমন বিচার চেয়েছে, একইভাবে জাতীয় পার্টির অপকর্মেরও বিচার হতে পারে বলে নেতারা মনে করছেন। এক্ষেত্রে কোনো মব কালচার তৈরি করে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পক্ষে থাকবে না। কোনো ধরনের মব জাস্টিসকে তারা সমর্থনও করবে না। অপ-তথ্য ও গুজব মনিটরিং করার বিষয়েও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমজান মাস শুরুর আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় দেশে যখন নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে, তখনই বিভিন্ন প্ল্যাটফরম থেকে নানা দাবি-দাওয়া তোলা হচ্ছে বলে বৈঠকে আলোচনায় ওঠে।
এগুলো নির্বাচন বিলম্বিত কিংবা বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিএনপি। নেতাদের ভাষ্য, এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সরকারের দায়িত্ব। সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে এবং নির্ধারিত সময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন নেতারা।
গণঅধিকার সভাপতি নুরুল হক নুর ও জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফুর রহমানের ওপর হামলার প্রেক্ষিতে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে মনে করছে বিএনপি। গত সোমবার রাতে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত পাঁচ দফা প্রস্তাবের মধ্যে জাতীয় পার্টির বিচারও রয়েছে। ওই বৈঠকে বিএনপি’র প্রতিনিধি হিসেবে দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নুরের ওপর হামলার ঘটনা নিয়েও আলোচনা হয়। এই হামলার নেপথ্যে কারণ কী অথবা নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য এটা কোনো পক্ষের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কিনা- তা বোঝার চেষ্টা করছে বিএনপি। কারণ এই ঘটনা যখন ঘটেছে তার মাত্র একদিন আগেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
এ ছাড়া দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বিএনপি’র বৈঠক নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গত রোববার অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়টি স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ওই বৈঠকে সংস্কার, জুলাই সনদ এবং পিআরসহ অন্য ইস্যু নিয়ে আলোচনায় দলের আগের অবস্থানই তুলে ধরে বিএনপি।